হাত ছানি দিয়ে ডাকছে বান্দরবানের ‘তমা তুঙ্গী’

599

রাহুল বড়ুয়া ছোটন, বান্দরবানঃ-পর্যটনের সম্ভাবনায়ময় বান্দরবান জেলায় তমা তুঙ্গী সবচেয়ে নবীনতম পর্যটন কেন্দ্র তবে আনুষ্ঠানিকভাবে চালুর একমাস না পেরুতেই তমা তুঙ্গী এখন পর্যটকের সরব উপস্থিতিতে প্রাণচঞ্চলতায় ভরে উঠেছে। দুটি ভাগে বিভক্ত করে গড়ে তোলা এ পর্যটন কেন্দ্রর চারপাশেই সবুজ পাহাড়ের সমারোহ। সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো- তমা তুঙ্গী পাহাড় থেকে দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ তাজিংডং, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কেওক্রাডং পর্বত শৃঙ্গ আর সাম্প্রতিক সময়ে বান্দরবানের জনপ্রিয় পর্যটন সড়ক ডিম পাহাড় দেখার সুযোগ। ছবি তোলার জন্য আকর্ষণীয়ভাবে গড়ে তোলা হয়েছে তমা তুঙ্গীকে। তাই নতুন হলেও দিন দিন সেখানে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে।
বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলায় ইতিমধ্যে নাফাখুম জলপ্রপাত, সাদা পাথর এলাকার জন্য জনপ্রিয় হয়েছে পর্যটকদের কাছে। অনেক দূরে ও দুর্গম এলাকা হলেও নতুনকে জানার আগ্রহ থেকেই মানুষ অর্থ ব্যয় করে ছুটছে থানচিতে। সম্প্রতি থানচি-আলীকদমকে যুক্ত করতে পাহাড়ের উঁচুতে নির্মাণ করা ডিম পাহাড় সড়ক ইতিমধ্যে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ ছুটচে থানচির বিভিন্ন পর্যটন এলাকায়।
এরসাথে সম্প্রতি যুক্ত হলো তমা তুঙ্গী নামে নতুন পর্যটন কেন্দ্র। থানচি উপজেলা সদর থেকে সামান্য দূরে তমা তুঙ্গী পর্যটন কেন্দ্র। বিশাল এলাকা নিয়ে পাহাড়ের ওপর দৃষ্টিনন্দনভাবে গড়ে তোলা হয়েছে তমা তুঙ্গী পর্যটন কেন্দ্র।
জানা গেছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাশন ব্রিগেড (ইসিবি) এর উদ্যোগে থানচি উপজেলা সদর থেকে প্রায় পাচঁ কিলোমিটার দূরে তমা তুঙ্গী নামে পর্যটন কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়। থানচি-রিমাকরী-মদক-লিকরি সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ করার সময় তমা তুঙ্গী পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলে সেনাবাহিনীর ইসিবি ব্রিগেড।
কয়েকমাস আগে তমা তুঙ্গী পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হলেও গত ৯ ডিসেম্বর (২০২১) এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। ৩৪ ইসিবি’র ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মনজুরুল ইসলাম এটি উদ্বোধন করেন। তবে উদ্বোধনের আগে থেকেই তমা তুঙ্গীর নাম ছড়িয়ে পড়ে পর্যটকদের কাছে। থানচি ভ্রমণে যাওয়া লোকজন তমা তুঙ্গীতে ছুটে যান এর নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করতে। তাঁদের কাছে এক দৃষ্টিনন্দন পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে তমা তুঙ্গী।
ট্যুরিস্ট ভিউ পয়েন্ট ১ ও ট্যুরিস্ট ভিউ পয়েন্ট-২ নামে পাশাপাশি দুটি স্থান রয়েছে তমা তুঙ্গীর। এরমধ্যে ট্যুরিস্ট ভিউ পয়েন্ট ১ এ গেলে সেখান থেকে দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ তাজিংডং, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডং এবং ডিম পাহাড় অবলোকন করা যায়। দিক নির্ণয়ের জন্য সেখানে তিনটি ভিউ পয়েন্ট নির্মাণ করা হয়েছে। পর্যটকরা সেখানে গেলেই এ তিনটি স্থান দেখার সুযোগ পায়। বসার কয়েকটি বেঞ্চ নির্মাণ করে দেয়ায় লোকজন সেখানে বসে চারদিকের দৃশ্য দেখতে পারে। রয়েছে ছোট্ট পরিসরে একটি পানির ফোয়ারা। ঘুরে বেড়ানোর বিশাল পরিসর। ট্যুরিস্ট ভিউ পয়েন্ট ২ এ রয়েছে সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠার ব্যবস্থা। বিশাল একটি বৃক্ষ ছায়া দিয়ে রাখছে পুরো পর্যটন এলাকাকে। লোকজন সেখানে বেড়াতে গেলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে অন্যরকম আনন্দ উপভোগ করেন।
তমা তুঙ্গীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো সেখানে আগত পর্যটকদের ছবি তোলার জন্য দৃষ্টিনন্দন স্থান নির্মাণ। তমা তুঙ্গী এমনভাবে লেখা হয়েছে এর মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে সহজ হয়, ‘তমা তুঙ্গী’ কথাটি ছবি তোলার সময় মানুষের আড়ালে যায় না। ফলে মানুষ সেখানে গিয়ে ছবি তোলার সুযোগ পায়।
সরেজমিনে তমা তুঙ্গী পর্যটন কেন্দ্রে গিয়ে কয়েকজন পর্যটকের সাথে কথা হয়। তাঁরা বলেন, জেলা সদর থেকে অনেক দূরে হলেও যাতায়াতের সুবিধা থাকায় লোকজন অনায়াসেই জিপ, মাইক্রো বা বাসে চেপে কিংবা মোটরসাইকেলে চড়ে তমা তুঙ্গী যেতে পারে। এমন প্রশস্ত রাস্তা বান্দরবানের আর কোনো পর্যটন কেন্দ্রে দেখা যায় না।
ঢাকা থেকে তমা তুঙ্গীতে বেড়াতে আসা আনিসুর রহমান দম্পতি এ প্রতিবেদককে বলেন, তমা তুঙ্গীতে এসে তাদের মন জুড়িয়ে যায়। এখানে দাঁড়ালে একসাথে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অবলোকনের সুযোগ তাঁদের মুগ্ধ করেছে। এছাড়া সুপ্রশস্ত ঘুরে বেড়ানোর স্থান, ছবি তোলার স্পট আর খোলামেলা পরিবেশ সত্যিই মনকে ভালো করে দেয়। তাঁরা আরো বলেন, বান্দরবানের থানচি আসার আগে তমা তুঙ্গীর নাম শোনেননি। থানচি গিয়ে তমা তুঙ্গীর নাম শুনে এবং খুব কাছেই জেনে ছুটে যায় তমা তুঙ্গী। দেখে তাঁদের খুব ভালো লেগেছে বলে এ দম্পতি জানান। তাঁরা বলেন, এখনও এই পর্যটন কেন্দ্রের আশেপাশে খাবারের দোকান না হওয়ায় দীর্ঘসময় এখানে থাকার মত পরিবেশ নেই। খাবারের দোকান ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হলে পর্যটন প্রেমীদের অন্যতম পছন্দনীয় স্থান হবে তমা তুঙ্গী।
থানচি প্রেসক্লাবের সভাপতি মংবোওয়াইচিং মারমা অনুপম বলেন, থানচি সদরের কাছেই গড়ে তোলা তমা তুঙ্গী পর্যটন কেন্দ্র মানুষের মন কেড়েছে। মনোরম পরিবেশ আর খোলামেলা স্থানের কারণে তমা তুঙ্গী থানচি তথা বান্দরবানের অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
যাতায়ত: ঢাকা-চট্টগ্রাম বা দেশের যেকোনো স্থান হতে বান্দরবান (বান্দরবানের আলীকদম হয়েও) থানচি উপজেলায় যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। বান্দরবান সদর থেকে গণপরিবহন বাসে কিংবা জিপ, মাইক্রো ভাড়া নিয়ে থানচি সদরে যাওয়া যায়। আড়াই থেকে সাড়ে তিনঘন্টায় থানচি সদরে গিয়ে সেখান থেকে মাত্র ১০/১২ মিনিটের পথ। জিপ, মাইক্রো বা মোটর সাইকেলে করে তমা তুঙ্গী যাওয়া যায়।