দীর্ঘ চার মাস পর খুলেছে রাঙ্গামাটির পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র, স্বস্তিতে বিনোদন প্রেমিরা

171

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাঙ্গামাটিঃ-দীর্ঘ চার মাস করোনা ও লকডাউনে বন্ধ থাকার পর খুলেছে রাঙ্গামাটির পর্যটন বিনোদন কেন্দ্র। দীর্ঘ ১২০ দিন বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে গেছে পর্যটন ব্যবসার সাথে জড়িতরা। আর পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়ায় স্বস্থি দেখা দিয়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের। তবে পর্যটকদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মানাতে রয়েছে কঠোর নির্দেশ।
করোনাকালীন দীর্ঘদিন লকডাউনে পর্যটন কেন্দ্রিক রাঙ্গামাটির পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা। শুধু তাই নয়, আর্থিক সংকটে পড়ে কষ্টে দিন যাপন করছিলো এইসব প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা।
গত চার মাসে রাঙ্গামাটিতে হোটেল-মোটেল, বিনোদন কেন্দ্র, পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় ২২ কোটি টাকার বেশি লোকসান হয়েছে। বৃহস্পতিবার ১৯ আগষ্ট থেকে সীমিত পরিসরে খোলে দেওয়া হয়েছে এই সমস্ত পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো। যেখানে লোক সমাগম করা যাবে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক। তবে সীমিত হলেও করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধকল্পে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর এই সমস্ত পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়ায় মানুষের স্বস্তি ফিরেছে।
এদিকে রাঙ্গামাটি পর্যটন করপোরেশনসহ সাজেক ও কাপ্তাইসহ বিভিন্ন স্থানে পর্যটকদের ভ্রমণ চার মাস বন্ধ থাকায় পর্যটন খাতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। রাঙ্গামাটির অন্যতম আকর্ষণীয় বিনোদন কেন্দ্র শহরের ঝুলন্ত সেতু ও পলওয়েল পার্কও পর্যটকদের পদচারণায় মুখর থাকে। কাপ্তাই হ্রদের পাশে এটির অবস্থান এবং ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে এখানে একটি ‘লাভ পয়েন্ট’ রয়েছে। যা দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্রমণ পিপাসুরা ভিড় করেন।
পলওয়েল পার্কের কর্মীরা জানান, প্রতি শুক্রবার ও অন্যান্য সরকারী বন্ধের দিনে পর্যটকদের ভিড় থাকে সবচেয়ে বেশি। প্রতি মাসে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা আয় হতো। সেই হিসাবে বন্ধ থাকায় গত ৫ মাসে প্রায় ৯ থেকে ১০ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে তারা বলে জানান।
এদিকে জরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, প্রথম দিনে রাঙ্গামাটি পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের উপস্থিতি তেমন নেই। স্থানীয় কিছু মানুষ ও চট্টগ্রাম থেকে আসার কিছু পর্যটক ঝুলন্ত সেতুুতে গিয়ে অবস্থান করছে। অনেক দিন পর পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেয়ায় তারাও স্বস্তি প্রকাশ করেছেন এবং রাঙ্গামাটির অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রেও ঘুরতে যাবে বলে জানান তারা। অন্যদিকে পর্যটনের বোট চালকরা পর্যটকদের আশায় নৌযান ঘাটে বোর্ড ভিড়িয়ে বসে থাকতে দেখা যায়।
রাঙ্গামাটি পর্যটন নৌ যান ঘাটের ট্যুরিস্ট বোর্ড ইজারাদার মো. রমজান আলী বলেন, গত বছর থেকে বোর্ড মালিক ও চালকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আর এই পর্যটন ঘাটে প্রায় শতাধিক বোর্ড রয়েছে। আর ৪ মাসের অধিক সময় ধরে পর্যটক কেন্দ্র বন্ধ থাকায় লোকসান হয়েছে ব্যবসায়ীদের। অনেক কষ্টে বোট চালকরা দিন অতিবাহিত করেছে।
এব্যাপারে রাঙ্গামাটি হলিডে কমপ্লেক্স বানিজ্যিক কর্মকর্তা মোঃ সোয়েব বলেন, সরকারি ঘোষণানুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাঙ্গামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স খুলে দেয়া হয়েছে। তবে রাঙ্গামাটি পর্যটন হোটেল ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়া হলেও এখানে পর্যটকদের সুযোগ থাকবে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক। আর সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পর্যটকদের সেবা দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পন্ন করেছি। আমরা আশাবাদী আমাদের লক্ষ্য মাত্রা পূরণ করতে পারবো।
দীর্ঘদিন পর পর্যটন কেন্দ্রিক রাঙ্গামাটি জেলায় পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়ার ফলে করোনাকালে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির লাগাম ধরা সম্ভব বলে মনে করেন স্থানীয় বিশিষ্টজনেরা।
উল্লেখ্য, রাঙ্গামাটিতে পর্যটকদের মূল আকর্ষণ ৩৩৫ ফুট দৈর্ঘের ঝুলন্ত সেতুকে ঘিরেই। তাই পর্যটকেরা প্রথমেই ছুটে যান পর্যটন কমপ্লেক্স এলাকায়। বছরে প্রায় দুই লাখ দেশি ও বিদেশি পর্যটক সেতুটি দেখতে আসেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকদের উপচে ভিড় থাকে। এছাড়া শহরের পুলিশের ‘পলওয়েলপার্ক’, ডিসির ‘রাঙ্গামাটি পার্ক’ সেনাবাহিনীর ‘আরণ্যক’, সুভলং ঝর্ণা, সুখীনীলগঞ্জ ও রাজবন বিহার এলাকায় প্রতিনিয়ত ভিড় জমান বেড়াতে আসা পর্যটকরা। এছাড়া বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকে আকর্ষণীয় ‘সাজেক ভ্যালি’ পর্যটকদের বেশী সমাগম হয়।