প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের নীড়ে রাজস্থলীর ২৩৯টি পরিবারের বসবাস

200

মোঃ আজগর আলী খান, রাজস্থলীঃ-রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার রাজস্থলী উপজেলার অসহায় দরিদ্র গৃহহীন ও ভূমিহীন ২৩৯টি পরিবার প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘরে বসবাস করে আসছে। সে ঘরগুলো নির্মাণ কাজ শেষ করে গত ২০ জুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারা দেশের ন্যায় এ রাজস্থলী উপজেলায় ২৩৯টি ঘর ও সনদ পত্র পাহাড়ী বাঙ্গালী উপকারভোগীদের মধ্যে হস্তান্তর করা হয়। বসবাসরত পরিবারগুলোর সব সময় খোঁজ খবর নিচ্ছেন উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। অসহায় পরিবারগুলো মাথা গোঁজার ঠাঁই পাওয়া এ সব ঘরগুলোর গুনগত মান ভাল হওয়ায় অত্যান্ত খুশি তারা।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের জন্য ১ম, ধাপে দুই ভাগ ও ৩য় ধাপে মোট ২৩৯টি ঘর বরাদ্ধ প্রদান করা হয়। প্রতিটি গৃহহীন পরিবারের জন্য ২ শতক জমি ও ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে টিন সেট টয়লেট গোসল রুম ২ কক্ষ বিশিষ্ট একটি ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়। আশ্রয়ণ প্রকল্পের অর্থায়নে উপজেলার বাঙালহালিয়া ইউনিয়নে ৬৫টি, ঘিলাছড়ি ইউনিয়নে ৮১টি, গাইন্দ্যা ইউনিয়নে ৯৩টি ঘরের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। ভাল মানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে তৈরি করায় ঘর গুলো খুব মজবুদ হয়েছে। ঘর নির্মাণ নিয়ে কারো কোনে অভিযোগ নেই। কথা হয় ৭২ বছর বয়সী সাদিয়া খাতুনের সঙ্গে। তার স্বামী মারা গেছে বহু আগে ছিলনা থাকার কোন ঘরবাড়ী। ভিক্ষা এবং মানুষের বাড়ীতে বাড়ীতে কাজ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতো। তার এক মেয়ে কে বিভিন্ন মানুষের নিকট হতে চাঁদা তুলে বহু কষ্ট করে বিয়ে দেন। তার আরেক ছেলে বিয়ে করার পর চট্টগ্রাম শহরে চলে যায় তাকে রেখে। মেয়ে ছেলে না থাকায় সাদিয়া খাতুন কখনো থেকেছেন মানুষের বাড়ীর বারান্দায়, আবার কখনো মানুষের রান্না ঘরে। ভাবেনি কোন দিন নিজের জমিতে ঘর করে থাকতে পারবেন। নিজের ঘর ও জমি ছিল সাদিয়া খাতুনের স্বপ্ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্পের সে স্বপ্ন পূরণ হলো সাদিয়া খাতুনের। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় সাদিয়া পেয়েছেন, নিজের নামের ২ শতক জমি ও একটি টিন সেটের ২ কক্ষ বিশিষ্ট ঘর। রয়েছে রান্নাঘর ও গোসল খানা, টয়লেট। তার স্বপ্ন পূরণ করায় শেখ হাসিনা কে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তিনি। শুধু সাদিয়া খাতুন নয়, প্রতিবন্ধি কোহিনুর আক্তার, অর্ন বড়ুয়া, বিষু ত্রিপুরা, আজিজ মিয়া, সুরেশ তনচংগ্যা, সালাউ মারমাসহ ২৩৯ টি পরিবার ঘর পেয়ে তাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। কথা হয় ইসলামপুর বাজার এর ঝাড়ুদার স্বপ্না মজুমদার তিনি জানান, পরিবার পরিজন নিয়ে তিনি ইসলাপুর বাজারে ঝাড়ুদারের কাজ করে। তার বাপ দাদার কোন ভিটেমাটি নেই। তিনি কখনো ভাবেনি নিজের স্বপ্ন পূরণ হবে। অবশেষে সে স্বপ্ন পূরণ হলো উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায়।উপজেলা প্রশাসন দুর্গম পাহাড়ে কুইক্যাছড়ি, কুদুম ছড়া, ধলিয়া পাড়া, নোয়াপাড়া, খাগড়াছড়ি পাড়া, ঝরঝড়ি পাড়া,গাইন্দ্যা,ওগাড়ী পাড়া সহ অসহায় দের বাড়ী বাড়ী গিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে অনেক অসহায় হত দরিদ্র গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের মাঝে ঘর দিয়েছেন। গাইন্দ্যা ইউনিয়নের হাজী পাড়া গ্রামের উপকারভোগী আজিজ মিয়া ঘর পাওয়ার বর্ণনা দিতে গিয়ে তার চোখে পানি চলে আসে। এ সময় তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও উপজেলা প্রশাসন কে ধন্যবাদ জানান। নির্মাণাধীন ঘরের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ ছাদেক জানান, মুজিববর্ষে একজন মানুষ ও গৃহহীন থাকবে না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন অঙ্গিকার বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। আশ্রয়ণ-প্রকল্পের ২ এর আওতায় গৃহহীন ও ভূমিহীন দের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া ২৩৯ টি ঘর নির্মাণ করা হয়ছে। ঘর গুলো নির্মাণের সময় উপজেলা প্রশাসন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, উপজেলা টাক্সফোর্স কমিটি, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ সরেজমিন থেকে পর্যবেক্ষন করায় ঘর গুলো খুবই মজবুদ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর টেকসই।
গত ২০ জুন ২৩৯টি ঘর উপকারভোগীদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। যারা এখানে উপকারভোগী রয়েছেন আমরা প্রতিনিয়ত তাদের খোঁজ খবর রাখছি। গৃহহীন পরিবার গুলো অনেক সন্তুুষ্ট। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী কার্যলয়ের উপ সচিব শাখাওয়াত হোসেন গৃহহীনদের ঘর গুলো পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, অশ্রায়ণ প্রকল্পে যারা বসবাস করবে তারা শুধু এখানে সময় কাঠাবে সেটা নয়। তাদের জীবিকায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবেতার জননী। তার মন মানুষের জন্য সব সময় কাঁদে। প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২ এর আওতায় সারা দেশের যত মানুষ কে ঘর দিয়েছেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।