পাহাড়ের বৈসাবী উৎসব

698

নিজস্ব প্রতিবেদক – পার্বত্য চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে পুরাতন বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করার সব আয়োজন। পাহাড়ের  ক্ষুদ্র ণৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্টি মেতেছে বৈসাবী উৎসবে। নতুন সাজে সেজেছে পার্বত্য জনপথ। পাড়া মহল্লায় পড়েছে সাজ সাজ রব । উৎসব প্রিয় ক্ষুদ্র ণৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্টির মানুষেরা সারা বছর মেতে থাকেন নানান অনুষ্ঠানে।

তবে তার সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। চাকমারা বিজু, ত্রিপুরা বৈসুক এবং মারমারা সংগ্রাই নামে আলাদা ভাবে পালন করে এই উৎসব। তবে সমতলের মানুষের কাছে এই উৎসব বৈসাবী নামে পরিচিত। অন্যদিকে বাংলা বর্ষবরণকে ঘিরে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয় বর্ণাঢ্য আয়োজন।
এছাড়া রাঙ্গামাটির বিভিন্ন উপজেলাসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষে আয়োজন করা হয় নানাবিধ অনুষ্ঠান। অর্থাৎ বাংলা বর্ষবরণ ও বৈসাবীকে ঘিরে রাঙ্গামাটিতে অনুষ্ঠান চলে প্রায় সপ্তাহব্যাপী। সমতলের চেয়ে পাহাড়ে বর্ষবরণের আয়োজনটি ভিন্ন হওয়াতে এ বর্ণাঢ্য আয়োজনটি সকল সম্প্রদায়ের সার্বজনিন একটি উৎসবে পরিনত হয়।

বৈসাবীকে কেন্দ্র করে তিনদিন ধরে উৎসব করার কথা থাকলে ও বৈসাবীর অয়োজন চলে সপ্তাহ ধরে। বৈসাবী উৎসবের ১ম দিন ১২ এপ্রিল কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে তিন দিনের বৈসাবী উৎসব শুরু হয়, একে বলা হয় ফুল বিজু, ২য় দিন ১৩ এপ্রিল উদযাপিত হয় মূল বিজু এবং ১৪ এপ্রিল গোজ্যাপোজ্যে পালন করবে পাহাড়ীরা। অন্যদিকে একই দিন বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হবে বাংলা নববর্ষ। ১৫ এপ্রিল মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পানি খেলা উৎসবের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে পাহাড়ের বৈসাবী উৎসব।

বৈসাবী উপলক্ষে ১২এপ্রিল কাপ্তাই হ্রদের গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে থেকে রাঙ্গামাটিতে বৈসাবী উৎসব শুরু হয়েছে। শুক্রবার ভোরে চাকমা রাজবাড়ী ঘাটে পাহাড়ি তরুন তরুনী নদীতে ফুল ভাসিয়ে এই উৎসবের সূচনা করেন। শত শত নারী-পুরুষ এ সময় কাপ্তাই হ্রদের পাড়ে ফুল ভাসান।

এদিকে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বৈসুক উপলক্ষে শহরের গর্জনতলী এলাকায় উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। এ সময় ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষরা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পড়ে ফুল নিয়ে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ভাসানোর মধ্যে দিয়ে বৈসুক উৎসব রাঙিয়ে তুলেন।

পাহাড়ীদের মতে, বিজু মানে আনন্দ, নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন, সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় আর চেতনার নতুন প্রেরণা। তাই এবার অভাব-অনটনের মধ্যেও যথারীতি উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।

উৎসবটির যথার্থে আনন্দমুখর করে তুলতে প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা ও বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যদিয়ে তিন পার্বত্য জেলায় পালিত হয়েছে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা। শনিবার ১৩ এপ্রিল আর চৈত্র সংক্রান্তির দিনকে বলা হয় মুল বিজু। এদিন ঘরে ঘরে রান্না হয় ঐতিহ্যবাহী খাবার পাচন। তা দিয়ে দিন ভর চলে শুধু অতিথি আপ্যায়ন।

রবিবার ১৪ এপ্রিল ১লা বৈশাখ উৎসবের তৃতীয় দিন থেকে শুরু হয় মারমা স¤প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী জলকেলি তথা পানি খেলা উৎসব। সপ্তাহ জুরে এই পানি খেলা উৎসবের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে পাহাড়ের বৈসাবী উৎসব।

বর্ষ বিদায় এবং বর্ষবরণ উপলক্ষে প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তিতে আয়োজিত এ উৎসবকে চাকমারা বিজু, মারমারা সাংগ্রাইং, ত্রিপুরারা বৈসুক, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু এবং অহমিকারা বিহু বলে আখ্যায়িত করে।