শিক্ষকের ভূমিকায় রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশীদ !

664

মনসুর আহম্মেদ, রাঙ্গামাটি- রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার শহর এলাকাসহ পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকার বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষা কার্যক্রম পরিদর্শনে কাউকে না জানিয়েই হঠাৎই এখন বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষা কার্যক্রম পরিদর্শনে যাচ্ছেন রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশীদ। প্রথমে কয়েকটি স্কুলে শিক্ষাবিভাগের কর্তৃপক্ষকে অবগত করে জেলা প্রশাসক বিভিন্ন স্কুলে গেলে ও বর্তমানে তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম দেখতে যাচ্ছেন কাউকে না জানিয়েই।

জেলা প্রশাসক বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে সেখানে তিনি সরাসরি ক্লাস রুমে গিয়ে ছাত্র ছাত্রীদের সাথে কথা বলছেন, প্রশ্ন করছেন, নিজে ও উত্তর দিচ্ছেন। জানতে চাচ্ছেন বিভিন্ন সমস্যার কথা। একজন জেলা প্রশাসক হয়ে ও তিনি নিজে শিক্ষকের মতো করে ছাত্র ছাত্রীদের সাথে আন্তরিকভাবে কথা বলছেন। এতে করে প্রত্যন্ত এলাকার এসব স্কুলের শিক্ষার্থীরা ও অনেক খুশি। অন্যদিকে স্কুলের শিক্ষকদের ও তিনি শিক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন।

এতে স্কুল কতর্ৃূপক্ষের মধ্যে বিভিন্ন ভীতি থাকলে ও একজন জেলা প্রশাসকের অকস্মাৎ স্কুল পরিদর্শনের কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানিয়েছেন রাঙ্গামাটির সাধারন মানুষ। তারা বলছেন, সরকারের সকল সুযোগ সুবিধা থাকার পরে ও এখনো পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলগুলোতে শিক্ষকের শতভাগ উপস্থিতি থাকেনা। বিভিন্ন স্কুলে এখনো পাশের হার সন্তোষজনক নয়। এখনো পাহাড়ের বিভিন্ন স্কুলে একজনের পরিবর্তে আরেকজন শিক্ষকতা করছে, যাকে অনেকে বর্গা শিক্ষকতা বলেই জানেন। এ রকম এক অবস্থার মধ্যে জেলা প্রশাসকের এরকম অকস্মাৎ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের কারণে শিক্ষা নিয়ে অপকর্ম অনেকটাই কমে আসবে বলে মনে করছেন রাঙ্গামাটির সচেতনমহল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ বলেন, পার্বত্য এলাকায় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিদর্শনের পাশাপাশি পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত সরকারী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার গুনগত মান যাচাই করা, সেখানে ঠিকমত শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হচ্ছে কিনা, সেখানে শিক্ষকরা ঠিকমত উপস্থিত থাকছেন কি না, স্কুলের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকদের সাথে আলোচনা করে তা দ্রুতই সমাধানের চেষ্টা করছি। তার এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানান জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ গত ৭ ফেব্রুয়ারী বালুখালী ইউনিয়নের দূর্গম এলাকায় অবস্থিত বাদলছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাদলছড়ি নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। ১ঘন্টার বেশী সময় স্পিড বোটে করে দূর্গম এসব এলাকায় আসলে ও স্কুলের কাছাকাছি পৌঁছুতে জেলা প্রশাসককে আরো প্রায় ১ঘন্টার বেশী সময় পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতে হয়।

এখানে অবাক করার মতো বিষয় হচ্ছে, এসব স্কুলে জেলার দায়িত্ব কোন শিক্ষা অফিসার গত কয়েক বছরে ও সেখানে অবস্থিত স্কুলগুলোর খোঁজ খবর নিতে সেখানে যাননি বলে ও অনেকেই জানান। পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত এসব স্কুলগুলোতে শিক্ষা কর্মকর্তাদের নিয়মিত যাতায়াত নিশ্চিত করা হলে পাহাড়ে শিক্ষার মান অনেকটাই উন্নত হতো বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।

এছাড়া অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেখানে নিয়োগকৃত শিক্ষকের পরিবর্তে বর্গা শিক্ষকরাই পাঠদান করে থাকেন। পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় অনেকসময় এসব স্কুলগুলোতে শিক্ষা নিয়ে এসব অপকর্ম প্রশাসনের চোখে পড়েনা। পাহাড়ে প্রত্যন্ত এলাকাসহ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের শতভাগ উপস্থিতিসহ শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর অবস্থান নিতে আহবান জানিয়েছেন অনেক অভিভাবক।

এছাড়া রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক রাঙ্গামাটি সদরের সাপছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সাপছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি শহরের মুজাদ্দেদী আলফেসানী স্কুলসহ বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শন করেছেন ।

তবে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশীদের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অকস্মাৎ শিক্ষা কার্যক্রম পরিদর্শন পাহাড়ের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি আমূল পরিবর্তন আনতে পারে বলেই মনে করছেন রাঙ্গামাটির সচেতনমহল। পাশাপাশি এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ও দাবী অনেকের।