॥ এ, কে, এম, মকছুদ আহমেদ ॥
দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তর হ্রদ রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদকে বাঁচাতে, মাছের বংশ বিস্তার বাড়াতে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে জরুরি ভিত্তিতে হ্রদের পুরো এলাকা ড্রেজিং করা অত্যান্ত জরুরী হয়ে পড়ে পড়েছে। সড়ক যোগাযোগ এবং অতি প্রয়োজনীয় ছাড়া অন্য আজেবাজে প্রকল্প বাদ দিয়ে কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং করতে হবে। ড্রেজিং এর কোন বিকল্প নেই। বর্তমানে মাইনীমুখ এলাকায় যে ড্রেজিং করছে তাতে কোন ফল হচ্ছেনা। দুর্নীতি হচ্ছে। বর্তমানে হ্রদের পানির সীমা ১০ এম এস এল এর নীচে নেমে গিয়ে সকল উপজেলার সাথে নৌ যোগাযোগ বন্ধ হয়েছে। মাছ শিকার ২৫ এপ্রিল থেকে বন্ধ আছে। ১ সেপ্টেম্বর আবারও হৃদে মাছ শিকার খোলে দেয়ার সম্ভবনা আছে। কাপ্তাই এ জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে উৎপাদন স্বভাবিক রয়েছে। কিন্তু গরমের দিনে অস্বাভাবিক ভাবে লোডশেডিং দিয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত করে তোলা হয়।
যখন পূর্ণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় তখনতো রাঙ্গামাটির জন্য ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেওয়া হতো বাকীগুলো জাতীয় গ্রীডে দেওয়া হতো।বর্তমানে রাঙামাটির জন্য ১৫ মেগাওয়াট দেওয়া হচ্ছে না কেন? এখানে কেন এত লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে জনগণ জানতে চায় ?
দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক হৃদ ‘কাপ্তাই হৃদ’। হৃদটি অবৈধ দখলের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত ভরাট করা হচ্ছে। দিনেদিনে হৃদকে ধ্বংসের দিকে ফেলে দেয়া হচ্ছে। তদারকির অভাবে কাপ্তাই হৃদের পাড়ে অবৈধ দখলদার মুক্ত হচ্ছেনা ।
এছাড়া সবগুলো নদী উপনদী খাল পলিমাটি দিয়ে বরাট হয়ে যাওয়ায় ফলে হৃদের পানি কমে গেলে সকল উপজেলার সাথে নৌযোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় এতে নৌপথে যাতায়তে জনগণ অত্যন্ত কষ্ট হয়। বিশেষ করে রাঙ্গামাটি লংগদু বাঘাইছড়ি রুটে যাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। লংগদু বাঘাইছড়ি নৌপথ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। লংগদু পর্যন্ত হ্রদ এলাকায় অনেক স্থানে ছোট ছোট চর সৃষ্টি হয় বোট পর্যন্ত আটকে যায়। কেউ আটকে গিয়ে ৫/৬ ঘন্টা পর্যন্ত অতিরিক্ত সময় ব্যয় করাতে হয়। বাঘাইছড়ি থেকে আগে রাঙামাটি বাস সার্ভিস চালু ছিল বর্তমানে পিকআপ সার্ভিস চালু করেছে তা বিপদজনক ও অপ্রতুল।বাস সার্ভিস চালু করা জরুরী। নানিয়ারচর রাঙামাটি নৌপথ অচল।তবে সড়ক যোগাযোগ থাকায় তেমন অসুবিধা হচ্ছে না। লংগদু নানিয়ারচর সড়ক নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। তবে আরও দ্রুত গতিতে সড়ক নির্মাণ কাজ লংগদুর যাত্রীদের অনেক সুবিধা হবে।
এছাড়া লংগদু বাঘাইছড়ি সড়কের সুয়ারিপাতাছড়া ব্রীজটির কাজ দ্রুত শুরু করা গেলে বাঘাইছড়ি যাত্রীদের অনেক উপকারে আসবে। রাঙ্গামাটি জুরাছড়ি কাপ্তাই জুরাছড়ি নৌপথ অনেকদিন যাবত ভরাট হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলো। রাঙ্গামাটি বরকল ছোট হরিনা রুটে বরকল পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল করলে মাঝে মাঝে আটকে যায়। রাঙ্গামাটি বরকল ঠেগামুখ পর্যন্ত দ্রুত ড্রেজিং করা না গেলে ঠেগামুখ স্থলবন্দর মুখ দেখবে না। স্থলবন্দর চালু না করা গেলে ভারত বাংলাদেশের বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে হ্রদে পর্যাপ্ত পানি প্রয়োজন। ড্রেজিং করে পানি ব্যবস্থা নিতে হবে। এশিয়ার সর্ববৃহৎ কাপ্তাই হ্রদে হাজার হাজার কোটির টাকার মাছ বিএফডিসির মাধ্যমে উৎপাদন হয়ে থাকে এবং ৪০/৫০ হাজার জনবলের কর্মসংস্থান হয়। এছাড়া নৌচলাচলের সাথে জড়িত কয়েক হাজার শ্রমিকের জীবন জীবিকা এ হ্রদের উপর নির্ভর করে।নৌচলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে ব্যবসা বাণিজ্যে হাজার হাজার কোটি টাকা লোকসান নিতে হচ্ছে। সবদিক বিবেচনায় দক্ষিণ এশিয়ার সবচাইতে বড় কাপ্তাই হ্রদকে বাঁচিয়ে রাখতে দ্রুত ড্রেজিং করা অত্যন্ত জরুরী। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় অথবা সরকারের যেকোন তহবিল থেকে বরাদ্দ দিয়ে ড্রেজিং করা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে।
গত ২০ বছরের অধিক কাল থেকে ড্রেজিং করার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে কিছু ছোটখাট ড্রেজিং করা হলেও নদীর কিনারায় মাটি ফেলার ফলে বর্ষার সময়ে আবারো নদী ভরাট হয়ে যায়। ফলে ঐসব ড্রেজিং কোন কাজে আসেনা। ছোটখাট ড্রেজিং না করে বড় ড্রেজিং এর ব্যবস্থা নিন। এবিষয়ে জনগণের দুর্ভোগ লাগবে আন্তর্র্বতীকালিন সরকার নিশ্চিয় আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে আসবেন।