চুক্তি সম্পদনকারী পক্ষগণের মধ্যে সমঝোতার অভাবে চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে-দীপংকর তালুকদার এমপি

80

॥ মিল্টন বাহাদুর ॥
যাদের সাথে শান্তিচুক্তি সম্পাদন করতে পেরেছি তাদেরকেই এক সঙ্গে কাজ করতে হবে শান্তিচুক্তি পূর্ণবাস্তবায়নের লক্ষ্যে। যারা চুক্তি করে, চুক্তির প্রতি তাদের চেয়ে আর কারো দরদ বেশি হতে পারে না। চুক্তি সম্পদনকারী পক্ষগণের মধ্যে সমঝোতার অভাবে চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে। তবে আমরা অকপটে স্বীকার করি শান্তিচুক্তির মূল ধারাগুলো এখনো বাস্তবায়িত হয় নাই, বাস্তবায়িত হওয়া দরকার, পূর্ণবাস্তবায়নের জন্য প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাঙ্গামাটি আসনের জন্য আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী ও সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বর্তমান সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার এমপি।
মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় শহরের চম্পক নগর দীপংকর তালুকদার এমপি’র বাসভবনে পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৬তম বর্ষপূর্তিতে চুক্তি বাস্তবায়ন ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত (মিট দি প্রেস) এক সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।
এ সময় সাবেক সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী, সাবেক চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা, আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য অভয় প্রকাশ চাকমা ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ত্রিদীব কান্তি দাস, দৈনিক গিরিদর্পণ সম্পাদক এ কে এম মকছুদ আহমেদ, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার আল হকসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
দীপংকর তালুকদার এমপি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতা এবং সাহসের কারণে এই শান্তি চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে এবং তিনি আন্তরিক বলেই চুক্তির অধিকাংশ দফা বাস্তবায়নও হয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, সকল চুক্তির মধ্যেই কিছু জটিল দিক থাকে, যা বাস্তবতার আলোকে পারস্পরিক সমঝোতা ও সংলাপের আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দাবি রাখে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, সেই বাস্তবতা সবাই অনুধাবন করতে পারে না।
দীপংকর তালুকদার বলেন, কাঠাল থেকে যেমন আমস্বত্ত্ব হয় না, চুক্তির বিরোধিতাকারীদের কাছ থেকেও চুক্তি বাস্তবায়নের আশা করা যায় না। কিন্তু চুক্তি সম্পদনের পর একটি পক্ষ বার বার পথ হারিয়ে ভূল সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং ভুল মানুষের সাথে সখ্যতা করেছে। কাজেই চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার বিকল্প চিন্তা করাটা বাতুলতা।
পার্বত্য এলাকার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে দীপংকর তালুকদার বলেন, পার্বত্য চুক্তির ফলে, এক সময় পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের তকমা পাওয়া পার্বত্য চট্টগ্রাম এখন উন্নয়নের আলোয় ঝলমল করছে। এটা শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের বড় একটি প্রমাণ। পাহাড়ের দুর্গম এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছানো, দূর্গম এলাকায় যেখানে বিদ্যুতের সুবিধা দেয়া যাচ্ছে না সেখানে সোলারের মাধ্যমে বিদ্যুতের সুবিধা দেয়া হয়েছে, অসংখ্য ব্রীজ, কালভার্ট, রাস্তাঘাট, মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিদ্যালয় ও কলেজগুলোর জাতীয় করণ সর্বপোরী পাহাড়ের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন এবং ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধির অসংখ্য উদাহরণ তুলে ধরেন তিনি। আগামীতে ক্ষমতায় এলে আমরা চুক্তির বাকি ধারাগুলোও বাস্তবায়নের জন্য যে যে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন তার সব কিছুই করবো এবং এটা আমাদের পক্ষেই সম্ভব, শুধুমাত্র পাহাড়ের মানুষের মাঝে এই বোধ জন্মাতে হবে।
পার্বত্য এলাকায় সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরে দীপংকর তালুকদার বলেন, পার্বত্য এলাকায় সেনাবাহিনী না থাকলে পাহাড়ের মানুষ স্বাভাবিক জীবনের স্বাধ পেতো না। তারা পাহাড়ে আছে বলেই এখান সাধারণ মানুষ স্বাভাবিক জীবনের স্বাধ পাচ্ছে। এখানে অনেকটা চাঁদাবাজি কমেছে, অস্ত্রবাজিও অনেকটা কমেছে। সেনাবাহিনী না থাকলে এটা হতো না। এই জন্য সেনাবাহিনীর কাছে কৃতজ্ঞ ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করি। তবে আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে, নির্বাচনে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বেশি হয়। তাই নির্বাচনী অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার রোধে আরও বেশি অভিযান পরিচালনা করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ জানান তিনি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে দীপংকর তালুকদার বলেন, যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আমার দৃষ্টিতে সবাই আমার প্রতিদ্বন্দ্বী, আমি কাউকে খাটো করে দেখতে চায় না। আর আমি জনগণের ভালোবাসায় জিতে আসবো এই প্রত্যাশা নিয়েই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়েছি। তবে ২০১৪ সালে মতো যাতে কেউ ডাকাতি করে জনগণের ভোট ছিনিয়ে নিতে না পারে সে জন্য নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।