রাজনৈতিক অস্থিরতায় মুখ থুবড়ে পড়েছে রাঙ্গামাটির পর্যটন খাত

110

॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
বিএনপি ও সমমনা দলের রাজনৈতিক অস্থিরতায় শীতের শুরুতেই ভরা মৌসুমে পর্যটক না থাকায় মুখ থুবড়ে পড়েছে রাঙ্গামাটির পর্যটন খাত। হরতাল, অবরোধ, রাজনৈতিক সহিংসতা, মিছিল, মিটিং সর্বোপরি অস্থিরতায় গত এক মাসে রাঙ্গামাটিতে কমেছে পর্যটকের সংখ্যা। দূরপাল্লার সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় পর্যটক শূন্য হয়ে আছে জেলার সবকটি পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র। ফলে রাঙ্গামাটির পলওয়েল পর্যটন কেন্দ, রাঙ্গামাটির পর্যটন ঝুলন্ত সেতু ও সুবলং ঝর্ণাসহ অন্যান্য পর্যটন স্পটগুলোতে নেই পর্যটকের আনাগোনা।
পর্যটন মৌসুমে যান্ত্রিক জীবন ছেড়ে রাঙ্গামাটিতে প্রতিদিন ঘুরতে আসেন হাজারো পর্যটক। একমাস আগেও যেখানে অগ্রিম বুকিং ছাড়া রাত কাটানো ছিল দায়। আর এখন হোটেল মোটেল রির্সোট এর অনেক কক্ষ খালি পড়ে আছে। ফলে হোটেল-মোটেলের কর্মচারী ও যানবাহন শ্রমিকের বেতন-ভাতা দিতে গিয়ে মালিক পক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এতে রাঙ্গামাটিতে পর্যটক শূন্যের কোটায় ঠেকেছে। হোটেল-মোটেল ও গাড়ির পাঁচ সহস্রাধিক শ্রমিক, দোকান কর্মচারীর অলস সময় কাটছে। এর মধ্যে প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দেড় কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়ছে ব্যবসায়ীরা। ফাঁকা রয়েছে হোটেল-মোটেলগুলো।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাঙ্গামাটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রের ঝুলন্ত সেতু ও পলওয়েল পার্ক, সুবলং ঝর্ণাসহ অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলো একদম পর্যটক শূন্য। তবে বাইরে থেকে কেউ না আসলেও স্থানীয়রা তাদের আত্মীয়-স্বজন নিয়ে ঘুরতে দেখা গেছে। পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র সাজেকও। প্রকৃতি পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকলেও চারদিকে সুনসান নীরবতায় রয়েছে চারিদিক।
এতে একদিকে যেমন শীত মৌসুম শুরুতে পর্যটক হারাচ্ছে, তেমনি আর্থিক লোকসান গুনতে হচ্ছে পর্যটক সংশ্লিষ্টদের। তাদের দাবি পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করতে পর্যটকদের চলাচলে হরতাল অবরোধমুক্ত রাখা। অন্যদিকে প্রশাসন বলছে, সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নিলে প্রশাসনের সহযোগিতা থাকবে।
স্কয়ার আবাসিক হোটেলের স্বত্বাধিকারী নিয়াজ আহম্মেদ বলেন, পর্যটনের মৌসুম স্বত্বেও দেশের বর্তমান অস্থিরতার কারণে একদম পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে রাঙ্গামাটি। পর্যটক নেই বললেই চলে। শুক্রবার-শনিবার বন্ধের দিনও কেউ আসছে না ঝুঁকি মনে করে। আমাদের বিদ্যুতের খরচও তুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাকি স্টাফ বেতন, ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধ করা তো দূরের কথা।
টুরিস্ট বোট ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি রমজান আলী বলেন, আমাদের পর্যটন ব্যবসা হয় বছরে শীতের তিনমাস। এছাড়া দুই ঈদের সময়। কিন্তু এখন পর্যটনের মৌসুম হওয়া স্বত্বেও দেশের অস্থিরতায় পর্যটক আসছে না। তাই ঘাটে সরিসারি টুরিস্ট বোট বেঁধে রাখা হয়েছে। ভাড়া না পেয়ে মানবেতর দিনাতিপাত করছেন বোট চালকরা। বোট না চললে তো তাদের খাবার জোটে না। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের পরে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আশা করা যায় পর্যটক আসবে এবং ব্যবসা আবারও চাঙা হবে।
রাঙ্গামাটি পর্যটন কর্পোরেশনের কর্মকর্তা মোঃ সোহেল বলেন, বন্ধের দিনগুলোতে আগের চেয়ে কমেছে পর্যটক। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে রুম বুকিং কমে গেছে। মানুষ নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। যার কারণে পর্যটনের ভরা মৌসুমেও ভাটা পড়েছে পর্যটকের সংখ্যা।