দিলীপ কুমার দাশ, বাঘাইছড়িঃ-রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের দুর্গম লংথিয়ান পাড়ায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গিরি রঞ্জন ত্রিপুরা (৩৫) মারা গেছেন। এছাড়া সাজেকের গঙ্গারাম এলাকার রেতকাবা গ্রামে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অর্পিতা চাকমা (৫) এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
সাজেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমা মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৩ দিনে লংথিয়ান পাড়ায় ৫ জন গ্রামবাসী মারা গেছেন। শুক্রবার (৩০ জুন) বিকাল ৪টায় ডায়রিয়ায় গিরি রঞ্জন ত্রিপুরা (৩৫) ও দুপুর ২টায় অর্পিতা চাকমা (৫) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়।
এর আগে ১৭ জুন বাহন ত্রিপুরা (৫৫) ও মেলাতি ত্রিপুরা (৫০) তারা উভয়ে স্বামী স্ত্রী মৃত্যু হয়, গত ৭ জুন বুধবার ভোর রাতে গবতি বালা ত্রিপুরা (৫০) ও দরুং ত্রিপুরা (৬০) দুজনের মৃত্যু হয়। এনিয়ে গত ২৩ দিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সাজেকে ৫ জন মৃত্যু বরন করে। লংথিয়ান পাড়ায় ও আশপাশের বিভিন্ন গ্রামে নারী শিশু বৃদ্ধসহ আরো ২০ গ্রামবাসী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রয়েছে। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে সাজেক ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার বনবিহারী চাকমা জানান, গত এক মাস ধরে সাজেকের লংথিয়ান পাড়া, অরুণ পাড়া, কাইজা পাড়া, রায়না পাড়া ও শিয়ালদহ বেটলিং এলাকাসহ আশপাশের বেশকিছু এলাকায় নতুন করে ডায়রিয়ার প্রদুর্ভাব দেখা দেয়। এলাকায় আশপাশে কোন হাসপাতাল বা কমিউনিটি ক্লিনিক না থাকায় স্থানীয় তান্ত্রিক দ্বারা চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। এলাকায় যাতায়াতের কোন সড়ক যোগাযোগ ব্যাবস্থা না থাকায় পায়ে হেটে এতো দুর থেকে মাচালং ও উপজেলা সদর হাসপাতালে রোগী পাঠানো সম্ভব নয়। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ডায়রিয়ার খবর প্রকাশের পর ৮ জুন বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও উপজেলা প্রশাসনের ৩টি মেডিকেল টিম পাঠিয়ে টানা এক সাপ্তাহব্যাপী চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করে মেডিকেল টিম ফিরে আসে। এর মধ্যেই নতুন করে আরো দুজন গ্রামবাসীসহ জুম চাষি গিরি রঞ্জন ত্রিপুরার মৃত্যু হয়।
সাজেক ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার জোপুইথাং ত্রিপুরা জানান, লংথিয়ান পাড়াতে ৪ জন মুমূর্ষু ডাইরিয়া রোগী রয়েছে তাদের অবস্থাও ভালো নয়। মুলত ছড়ার পানি থেকে এই রোগ ছড়িয়েছে ২০১৬ সালে এখানে ডাইরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৬ জন মৃত্যু বরন করেছেন। পরে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে মেডিকেল টিম দীর্ঘ এক মাসের চিকিৎসায় নিয়ন্ত্রণে আসে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর মেডিকেল অফিসার ডাঃ অরবিন্দু চাকমা বলেন, আমরা খবর পেয়েছি। আমাদের মেডিকেল টিমের সদস্যরা টানা এক সপ্তাহ চিকিৎসা সেবা দিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে ফিরে আসে নতুন করে আরো কেও আক্রান্ত হলে আবারো মেডিকেল টিম পাঠানো হবে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আক্তার ডায়রিয়ায় মৃত্যুর বিষয়টি শিকার করে জানান, সাজেকের দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেই, পাহাড়ী ছড়ার পানি পান করায় বর্ষার শুরুতে এই সমস্যা দেখা দেয়। আমরা ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তায় চেষ্টা করছি সাজেকের দুর্গম অঞ্চলে প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন সমস্যা দুর করতে। এছাড়া সাজেকে ডায়রিয়া প্রতিরোধে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারের সাহায্যে সেনাবাহিনী বিজিবি ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকগণ সম্মিলিত চিকিৎসা সহায়তা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান। পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার স্যালাইন পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট শুকনো খাবার দেয়া হচ্ছে।