বান্দরবানে ঈদের টানা ছুটিতে ছাড় দিয়েও পর্যটনে অগ্রীম বুকিং নেই

64

বান্দরবান প্রতিনিধিঃ-কোরবানীর ঈদে পর্যটক বরণে বিভিন্ন প্রস্তুতি নিয়েছে বান্দরবানের পর্যটন সংশ্লিষ্টরা, পর্যটকদের ভ্রমন স্বাছন্দ্য করতে দিয়েছে নানারকম ছাড়ের অফার,তবে জেলার ৩টি উপজেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকায় ঈদুল আজহার এই বন্ধে বান্দরবানে পর্যটকদের অগ্রীম বুকিং নেই বেশিরভাগ হোটেল মোটেল ও ট্যুরিস্ট পরিবহণে, এতে হতাশ জেলার পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
ভ্রমণ পিপাসুদের পদচারণায় সারাবছরই মুখর থাকে পার্বত্য জেলা বান্দরবান। বিশেষ করে ঈদ, পূজা, বড়দিন আর যেকোন সরকারী ছুটির বন্ধে বান্দরবানে ভীড় করে অসংখ্য পর্যটক। বন্ধের কয়েকদিন আগে থেকে জেলার হোটেল-মোটেল, গেষ্ট হাউস আর চাঁদের গাড়ীগুলো বুকিং হয়ে গেলেও এবারে জেলার ৩টি উপজেলায় (রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি উপজেলা) পর্যটকদের ভ্রমনে নিষেধাজ্ঞার বলবৎ থাকার কারণে হোটেল-মোটেল ও চাঁদের গাড়ীগুলো বুকিং হচ্ছেনা। আর ভরা পর্যটন মৌসুমে দীর্ঘ এই ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের আশানারুপ বুকিং না হওয়ায় হতাশ পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
বান্দরবানের সদরের আবাসিক হোটেল হিল ভিউ এর ম্যানেজার মো. আবু সামা জানান, প্রতিবছর কোরবানের ঈদের আগে থেকে বান্দরবানে ভ্রমনের জন্য প্রচুর পর্যটকদের হোটেল বুকিং হয়ে যায়,তবে এবার চিত্র ভিন্ন। বিভিন্ন হোটেল মোটেল এখনো বুকিং হয়নি। তিনি আরো বলেন, এবারের ঈদে বান্দরবানে হোটেল মোটেলে ২০শতাংশ ছাড়ের ঘোষণা দেয়া হয়েছে তারপরে রুম বুকিং হচ্ছে না। হোটেল হিল ভিউ এর ম্যানেজার মো.আবু সামা আরো জানান, আমাদের ঈদের দিন ও ঈদের পরেরদিন এখনো কোন বুকিং নেই তবে ২ জুলাই কয়েকটা বুকিং হয়েছে মাত্র।
বান্দরবানের আবাসিক হোটেল আরণ্য এর ম্যানেজার মো. লিমন সরকার জানান, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের কারণে নিরাপত্তা বিবেচনায় বান্দরবানের গুরুত্বপূর্ণ ৩টি উপজেলায় পর্যটকদের ভ্রমনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় বান্দরবানে এখন পর্যটকরা আর বেড়াতে আসছে না আর হোটেল মোটেল খালি। তিনি আরো বলেন, আমাদের হোটেলে ২৪টি রুমের মধ্যে ১টি রুমও বুকিং হয়নি এবারের বন্ধে।
ঈদে পর্যটকদের বান্দরবান ভ্রমনে আমন্ত্রণ জানাতে হোটেল মোটেলে ২০শতাংশ, রেস্টুরেন্টে ১০শতাংশ এবং পর্যটকবাহী গাড়ীতে ১৫ শতাংশ ছাড়ের অফার দিয়েছে পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে শুধু হোটেল-মোটেল নয় পাশাপাশি পর্যটকদের ভ্রমনের পছন্দের অন্যতম বাহন চাঁদের গাড়ীগুলোও বুকিং হয়নি একটিও, অগ্রীম বুকিং না হওয়ায় চিন্তিত পরিবহণ মালিক ও শ্রমিকরা।
বান্দরবান সদরের পর্যটকবাহী গাড়ীর চালক মো. আলমগীর জানান, করোনার কারণে ২বছর আমাদের পর্যটকবাহী গাড়ীগুলো বন্ধ ছিল এরপরে ২২সালের অক্টোবর থেকে দফায় দফায় জেলার বিভিন্ন উপজেলা ভ্রমনে পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করার পরে জেলায় পর্যটকদের আগমন কমেছে এবং আমাদের পর্যটকবাহী গাড়ীগুলো ভাড়া না থাকায় চালক ও শ্রমিকরা খুবই মানবেতর জীবন ধারণ করছে।
বান্দরবান মাইক্রোবাস জীপ কার মালিক সমিতির সভাপতি নাছিরুল আলম বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বান্দরবান ভ্রমণ প্রত্যাশীদের জন্য প্রত্যেক গাড়িতে ১০শতাংশ ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে,তবে বান্দরবানে এখন পর্যটক নেই বললেই চলে।
বান্দরবানের আবাসিক হোটেল মোটলে মালিক সমিতির সভাপতি অমল কান্তি দাশ বলেন, পর্যটকদের ভ্রমনের সুবিধার্থে বান্দরবানে ৭০টি আবাসিক হোটেল, মোটেল ও কটেজ গড়ে ওঠেছে যাতে প্রায় দশ হাজার পর্যটক ধারণ ক্ষমতা রয়েছে আর পর্যটকদের পরিবহণের জন্য বান্দরবানে প্রায় ৪শ চাঁদের গাড়ী রয়েছে। এদিকে ২০২২ সালের অক্টোবর মাস থেকে দফায় দফায় জেলায় পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় বান্দরবানের পর্যটন ব্যবসায়ী বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তিনি দ্রুত সময়ে বান্দরবানের প্রত্যেক উপজেলায় পর্যটকদের ভ্রমনের অনুমতি প্রদান করে পর্যটকদের বান্দরবানে সুন্দরভাবে ভ্রমন নিশ্চিত করতে প্রশাসনের কাছে আহবানও জানান।
পর্যটন জেলা হিসেবে দিনদিন নতুন নতুন হোটেল আর মোটেলের পাশাপাশি নিত্যনতুন পর্যটন কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে বান্দরবানে, তাই ভ্রমন পিপাসুদের জন্য এই জেলা ভ্রমন অনেকটাই আরামদায়ক ও নিরাপদ। ঈদে পর্যটকদের বান্দরবান ভ্রমন আনন্দদায়ক করতে তাই সব রকম সুযোগ সুবিধা ও নিরাপত্তা বৃদ্ধির কথা জানান জেলা প্রশাসক।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, বান্দরবানে ৩টি উপজেলা পর্যটকদের ভ্রমনে বন্ধ থাকলে ও বাদবাকী ৪টি উপজেলা পর্যটকদের ভ্রমনে কোন বাঁধা নেই। জেলা প্রশাসক আরো বলেন, বান্দরবান সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় পর্যটকদের ভ্রমনের জন্য প্রতিদিনই বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে এবং পর্যটকরা যাতে সুন্দরভাবে ভ্রমন করতে পারে তার জন্য প্রশাসন পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে রেখেছে। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসন পরিচালিত নীলাচল ও মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের ভ্রমনে ২০শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে যা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।