বান্দরবানের সাঙ্গু নদীর পাড়ে ‘ব্রকলি’ চাষে সফলতা

79

রাহুল বড়ুয়া ছোটন, বান্দরবানঃ-শহরাঞ্চলে ব্রকলি বেশ পরিচিত হলেও বান্দরবানের গ্রামীণ এলাকায় এই ব্রকলি কিছুটা অপরিচিত। তবে এর ওষুধী গুণ ও খেতে স্বাদ লাগার কারণে অপরিচিত ব্রকলি চাষ বাড়ছে, কৃষকদের মাঝে যেমন ব্রকলি চাষে আগ্রহ বাড়ছে, তেমনি এর ভোক্তাও বাড়ছে।
বান্দরবানের কিছু এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে ব্রকলি চাষ হচ্ছে। তবে সাঙ্গু নদীর দুই পাড়ে শুষ্ক মৌসুমে জেগে ওঠা চরে ব্রকলি চাষ হতে দেখা যাচ্ছে। কয়েকজন কৃষক ব্রকলি চাষ করে ফলন ভালো ও লাভ বেশি পাওয়ায় এই ব্রকলি চাষের দিকে ঝুঁকছেন বলে তাঁরা জানান।
বান্দরবান সদরের লাঙ্গির চর এলাকার কৃষক মো. আবু তাহের সাঙ্গু নদীর তীরে জেগে ওঠা বালু চরে ব্রকলি চাষ করেছেন। একইভাবে কৃষক মোঃ আবছার উদ্দিন ও বাদশা মিয়াও ব্রকলি চাষ করেছেন। দুজনই ফলন ভালো হয়েছে বলে জানান। বাজারে এসব ব্রকলি যেমন বিক্রি হচ্ছে, তেমনি দামও ভালো পাচ্ছেন তাঁরা। কৃষক আবছার উদ্দিন জানান, তিনি সাঙ্গু নদীর তীরে জেগে ওঠা চরে প্রায় এক বিঘা জমিতে ব্রকলি চাষ করেছেন। জমিতে পলি জমে মাটি উর্বর হয়। শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় জেগে ওঠা চরের মাটি উর্বর থাকে। তাই অন্যান্য সবজির মত ব্রকলির ফলনও ভালো হয়েছে।
কৃষক আবছার আরো বলেন, তাঁর প্রায় এক বিঘা জমিতে চাষ করা ব্রকলি খেতে ইতিমধ্যে প্রায় তিন হাজারটি ব্রকলি হয়েছে। পাশেই বান্দরবান বাজার, তাই খুব কম সময়ে বাজারে এসব ব্রকলি এনে বিক্রি করতে পারছেন।
গতকাল সাঙ্গু নদীর তীরে কথা হয় ব্রকলি চাষীদের সাথে। এসময় তাঁরা ব্রকলি খেত পরিচর্যায় ব্যস্ত। কৃষক আবছার উদ্দিন বলেন, এবারই প্রথম তিনি নদীর চরে এক বিঘা জমিতে ব্রকলি চাষ করেছেন। তিনি জানান, পরিপক্ক এক কেজি ব্রকলি ৭০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। তবে এখন তা কমে কেজি ৬০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বান্দরবান কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ব্রকলি একটি উচ্চ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সবজি। এটি ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগের জন্য উপকারী। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে খেতে ব্রকলির বীজ রোপণ করতে হয়। তিন মাস থেকেই ব্রকলির ফলন উত্তোলন করা যায়। এখন ব্রকলি উত্তোলনের ধুম লেগেছে।
ব্রকলি চাষী মোহাম্মদ হারুন বলেন, নভেম্বরে ব্রকলির বীজ রোপণের পর জানুয়ারি থেকেই এর ফলন তোলা শুরু হয়। কৃষক বাদশা মিয়া বলেন, ব্রকলির ফলন ভালো হয়েছে। এতে তাদের লাভও ভালো হওয়ার আশা রয়েছে। ব্রকলির খেতে সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়।
বান্দরবানের চিকিৎসক ডা. জ্যোর্তিময় ¤্রাে বলেন, ব্রকলির পুষ্টিগণ প্রচুর। তিনি বলেন, গবেষকদের মতে-ব্রকলি ক্যানসার নিরাপদে খাবার হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। প্রতিদিন ব্রকলি খেলে ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা হয়। এটি ভিটামিন কে, ভিটামিন সি, ফলিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম এবং ফাইবারে পরিপূর্ণ। তাই এটি স্বাস্থ্যেও জন্য অত্যন্ত উপকারী।
বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা ড. সাফায়ত আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ব্রকলি বান্দরবান অঞ্চলে তেমন পরিচিত নয়। তবে দেশের অন্যান্য কিছু অঞ্চলের মত বান্দরবানেও ব্রকলি চাষ ও খাবার হিসেবে চাহিদা বাড়ছে। তিনি বলেন, ব্রকলির পুষ্টি ও ওষুধী গুণ রয়েছে। এসব ব্যাপকভাবে প্রচার হলে মানুষ ব্রকলিকে ভালোভাবে গ্রহণ করবে এবং খাবার হিসেবে তালিকায় যুক্ত করবে।
এই কৃষি কর্মকর্তা আরো বলেন, কৃষি তথ্য সার্ভিসের মাধ্যমে ব্রকলির গুণ ও লাভ সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার চালানো হলে এই ব্রকলির চাষ ও চাহিদা বাড়বে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ব্রকলিতে রয়েছে সালফোরাফেন। যা ক্যানসার রুখতে সাহায্য করে। লো ক্যালোরির এই সবজি হার্ট ভালো লাখতেও সাহায্য করে। এটি দেখতে ফুলকপির মত হলেও ফুলগুলো সাদার বদলে পাতা ও ফুল গাঢ় সবুজ রঙের।
সাঙ্গু নদীর চরের পাশাপাশি বান্দরবানের আরও কিছু এলাকায় ব্রকলি চাষ করে কৃষকরা সফলতা পেয়েছেন। তবে এর ব্যাপক প্রচার করা গেলে খাবার তালিকায় এটি জনপ্রিয়তা পেলে বান্দরবানে ব্রকলি চাষ করে অনেক কৃষকের ভাগ্যেও উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সম্ভব বলে কৃষকরা মনে করেন।