খাগড়াছড়িতে শীতের পিঠা আয়োজনে ব্যস্ত পাহাড়ী নারীরা, মারমা পিঠা ‘ছেছমামু’র কদর বাড়ছে

71

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ-পিঠা আর নারী; যেন সমার্থক। শীতকাল এলে পিঠা-পায়েসের ধুম পড়ে যায় সবখানে। পাহাড়েও ব্যতিক্রম নয়। পিঠা মানেই নারীদের শৈল্পিক কাজ। সারাদেশের পিঠার বৈচিত্র্যতার মাঝে পাহাড়িদের বিভিন্ন পিঠাও খুব সুস্বাদু খাবার। এরমধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় পিঠার নাম ‘ছেছমা মু’ পিঠা। এটা মূলত: মারমাদের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী পিঠা হলেও ইদানিং ধর্ম-বর্ণ, গোষ্ঠি নির্বিশেষে সবার কাছেই পিঠাটির বিশেষ কদর ও চাহিদা তৈরি হয়েছে। খাগড়াছড়িতে বিশেষ কোন দোকানে মারমা পিঠা তৈরী না হলেও বিশেষ করে শীতের মৌসুমে রাস্তার ধারে, পাড়া গাঁয়ে মারমাদের বিচিত্র পিঠা দেখা যায়। মারমা নারী-তরুনীরা খুবই কম মূল্যে পিঠা বিক্রি করে থাকেন। এক একটি ছেছমা পিঠা কোন জায়গায় বিক্রি হয় মাত্র ৫ টাকা। কোথাও বিক্রি হয় ১০ টাকা।
বর্তমানে প্রবাসী সংস্কৃতিকর্মী মংসাথোয়াই চৌধুরীর মতে, ‘পাটিসাপটার মত দেখতে তেল বিহীন ‘ছেছমা পিঠা’র ধরণ, আকৃতি এবং সুন্দর্য্য সত্যিই আকৃষ্ট করবে সবার। তাই তো যে কেউ এ পিঠার ভক্ত হন প্রথম দেখাতেই।’
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের জনসংযোগ কর্মকর্তা চিংহ্লামং চৌধুরী জানালেন, ‘প্রাচীনকাল ধরেই ছেছমাসহ বেশ কয়েক ধরণের পিঠার প্রচলন রয়েছে মারমা সমাজে। এসব পিঠার নামকরণ বা ইতিহাস নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য জানা না থাকলেও এটুকু বলা যায়, পিঠার বস্তু বা উপকরণের ভিত্তিতেও অনেকগুলো পিঠার নাম হয়েছে।’ সামাজিক ব্যক্তিত্ব মংসাথোয়াই বলেনমারমা সমাজে জনপ্রিয় পিঠা ‘ছেছমা মুা’ পিঠা। মূলত: মারমাদের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী পিঠা। অতিথিদের আপ্যায়নেমারমারা ‘ছেছমা মু’ পিঠা দিয়ে থাকে।
পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়িতে স্থানীয়ভাবে ‘ছেছমা পিঠা’ বান্দরবানের মারমাদের কাছে ‘ছাইস্ববক্ মু’ নামে বিশেষ পরিচিত। নামের বৈপরিত্ত যাই থাকুক; এ পিঠার চাহিদা ও জনপ্রিয়তা সর্বজন বিদিত। বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনেও ছেছমা পিঠা আপ্যায়নের মেন্যুতে রাখা হয়। এ পিঠা; সবার আগে খেতে মরিয়া থাকেন সব ধরণের পিঠা পেটুক ও বিলাসীরা।
অবশ্য ইদানিংকালে পর্যটকদের কাছে মজার পিঠা ছেছমা ও অন্যান্য মারমা পিঠাপুলি। তবে, মারমা জনগোষ্ঠী ঘরে গেলে ছেছমা, কদা মু, কেইন্দা মু, খোওক তং মু পিঠার আয়োজন হরেও অতিথি আপ্যায়ন করে থাকেন।
স্কুল শিক্ষিকা সানাই মারমা বলেন, ‘কেবল ছেছমা কেন; মারমা আদিবাসিদের আছে ঐতিহ্যবাহী নানা পিঠা পায়েস। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, রেপ্রিমু, ছিলমু, ফাকাইমু, গুংমু প্রভৃতি।’
বিভিন্ন চালের গুড়াই এই পিঠার প্রথম উপকরণ। বিশেষভাবে তৈরী বিন্নিচালের গুড়া ছাকুনী দিয়ে ছাকতে হবে। তারপর তেলে প্রলেপ দেয়া স্টিলের কড়াইয়ে পরিমানমত বিন্নি চালের গুড়া ছিটিয়ে দিয়ে কিছুসময় ডেকে রাখতে হয়। দেখা যাবে শক্ত ও জালের মত হয়েছে। পরে তা নামিয়ে নারিকেল ও গুড় মিশ্রিত উপকরণ দিয়ে পাটি সাপটার মত মুড়িয়ে দিলেই; হয়ে গেলো ছেছমা পিঠা।
সব মারমা পাহাড়ী পাড়া, পল্লীই এই পিঠা তৈরী হয়ে থাকে। তবে, এ শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত পানখাইয়াপাড়ায় প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে রাস্তার আশপাশে পিঠার ব্যবস্থা। ছোট্ট ছোট্ট খুদে নারী দোকানীরা খোলা মেলা বসে আছেন, পিঠা একদিকে গরম গরম পিঠা বানানো হচ্ছে, অন্যদিকে পথচারী ও পাড়ার মানুষ দাঁড়িয়ে খাচ্ছেন পিঠা। এমনকি পর্যটকদেও কাছেও এই পিঠার কদও অনেক। কেবল ছেছমা পিঠাই নয়; আরো কয়েক ধরনের পিঠা খেতে আসতে পারেন আপনিও। এছাড়া গোলাবাড়ী, আপার পেড়াছড়া, অপর্নাচৌধুরী পাড়াতে, কিংবা হর্টি কালচার পার্ক, মহলছড়ি কলেজ মোড়ে পিঠা পাওয়া যায়। শীত চলে গেলে কিন্তু এসব পিঠা পাওয়াটা কঠিন হতে পারে।