পিছিয়ে আছে যোগাযোগ ব্যবস্থা, লিচুবাগান কর্ণফুলী ফেরী পাড়াপাড়ে মানুষের চরম দূর্ভোগ

121

কাজী মোশাররফ হোসেন, কাপ্তাইঃ-বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সড়ক যোগাযোগ, অবকাঠামো নির্মাণ, আবাসন ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপন, কর্মসংস্থান, ব্যবসা বাণিজ্য ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন হচ্ছে দ্রুত গতিতে। পর্যটন সুবিধার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের খ্যাতি এখন সর্বত্রই। বিপুল সংখ্যক মানুষ দুরদুান্ত হতে এখানে ভ্রমণ এবং বেড়াতে আসছেন। বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন পার্বত্য জেলা বিশেষ করে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ি বর্তমানে এক সুতোয় বাঁধা। প্রতিদিন এক জেলা থেকে আরেক জেলায় মানুষ প্রয়োজনে যাতায়াত করছেন।
কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল উন্নয়ন থমকে যায় লিচুবাগান ফেরিঘাটে এসে। এখানে ফেরী চলাচলের কারণে সহজে যাতায়াত করা যাচ্ছেনা। অনেক সময় ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হচ্ছে যাতায়াতকারী যাত্রীরা। আবার ভারী বৃষ্টি হলে ফেরী চলাচল বন্ধ থাকে। এই অবস্থায় মানুষ নিত্য প্রয়োজনে পার্বত্য চট্টগ্রামের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে সহজে যাতায়াত করতে পারছেন না নিবিঘ্নে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, টানা কয়েক ঘন্টা ভারী বৃষ্টি হলেই লিচুবাগানে অবস্থিত ফেরীর পন্টুন পানিতে ডুবে যায়। তখন মানুষের যাতায়াত এবং যানবাহন চলাচলে বাড়ে চরম দূর্ভোগে পড়তে হয়। এসময় বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াতকারী যাত্রীরা ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকে অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয়। আবার অনেকেই নিজের জীবন বাজি রেখে পানিতে নেমে পারাপার করতে হয়। আবার অনেক সময় গাড়ির ইঞ্জিনে পানি ঢুকার কারণে সেখানেই বিকল হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ আলতাফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ নদীর উপর সেতু নির্মিত হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর উপর লিচুবাগান ফেরিঘাটে একটি সেতু নির্মাণও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন শতশত যানবাহন এই লিচুবাগান ফেরীঘাট দিয়ে চলাচল করে। কিন্তু প্রায় প্রতিদিন ফেরীঘাটে একটা না একটা সমস্যা লেগেই থাকে। যে কারণে যানবাহন চলাচলে সবাইকে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বর্ষা মৌসুমে এই ফেরী দিয়ে যানবাহন চলাচল করা চরম ঝূঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। বৃষ্টির সময় ফেরীর পন্টুন ডুবে যায়। অনেকে এই অবস্থায়ও ফেরীতে গাড়ি উঠানোর চেষ্টা করেন। এতে যে কোন মুহুর্তে বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যায়।
নারানগিরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তপন কান্তি জানান, বৃষ্টির সময় এই ফেরীর উপরে যানবাহন তুলতে গিয়ে দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। কাপ্তাই লেকে পানি বাড়লে কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ লেকের পানি ছেড়ে দিলে ফেরীর পন্টুনের অবস্থা আরো ভয়াবহ রূপ নেয়। তখন টানা কয়েকদিন ফেরী চলাচল বন্ধ থাকে। যার ফলে হাজার হাজার মানুষের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। দূর্ভোগে পড়েন ফেরীতে আসা যাত্রীরা।
কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান উমেচিং মারমা বলেন, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাজস্থলীর সাথে সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে লিচুবাগান ফেরীঘাটের গুরুত্ব অপরীসীম। এই ফেরীঘাট বন্ধ থাকলে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের সাথে সড়ক যোগাযোগ থমকে যায়। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং পুলিশের অনেক যানবাহানও প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। কিন্তু একইভাবে সবাইকে লিচুবাগান ফেরীঘাটে এসে দুর্ভোগে পড়তে হয়।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, বৃষ্টির দিন ছাড়াও লিচুবাগান ফেরীঘাটের দুই পাশে শতশত যানবাহান পারাপারের জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে। ফেরীতে সর্বোচ্চ ২০টি গাড়ি উঠতে পারে। ফেরীর সংখ্যাও একটি। ফেরী যানবাহন নিয়ে একবার লিচুবাগান থেকে রাইখালী যায়। আবার রাইখালী থেকে গাড়ি নিয়ে লিচুবাগান আসে। এতে প্রায় আধা ঘন্টা সময় নষ্ট হয়। এই কারণেও ফেরীর দুইপাশে যানবাহনের লম্বা লাইন পড়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কে কার আগে ফেরীতে উঠবে তার প্রতিযোগিতা।
কাপ্তাই মানবাধিকার কমিশনের মহিলা সম্পাদিকা নুর বেগম মিতা বলেন, লিচুবাগান ফেরীঘাটে একটি সেতু নির্মাণ করার জন্য গত ৩০ বছর ধরে আমরা দাবী জানিয়ে আসছি। বাংলাদেশের অনেক গুরুত্বহীন নদীর উপরও সেতু নির্মিত হয়েছে। কিন্তু অতি গুরুত্বপূর্ণ লিচুবাগান ফেরীঘাটের উপর কেন একটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছেনা তা তিনি কোন ভাবেই বুঝে উঠতে পারছেন না। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ প্রতিমাসে একাধিকবার এই লিচুবাগান ফেরীর উপর দিয়ে যাতায়াত করেন। আবার পার্বত্য মন্ত্রী বান্দরবান থেকে রাঙ্গামাটি অথবা খাগড়াছড়ি যেতে এই ফেরী দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। ফেরী পার হতে গিয়ে মন্ত্রীকেও মাঝে মধ্যে অপেক্ষায় থাকতে হয়। তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে লিচুবাগান ফেরীঘাটের উপর একটি সেতু নির্মাণ করে সর্বস্তরের জনগণকে চরম দুর্ভোগের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান।