নিষ্ক্রিয় বাঘাইছড়ি ছাত্রলীগ, নেই সম্ভাবনাময়ী কার্যক্রম

218

বাঘাইছড়ি প্রতিনিধিঃ-১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক অ্যাসেম্বলি হলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। শিক্ষা শান্তি প্রগতি ছাত্রলীগের মূলনীতি। ছাত্রলীগের সাংগঠনিক গঠনতন্ত্রে এই নীতিমালা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে কোন নিয়ম নীতির বালায় নেই বাঘাইছড়ি ছাত্রলীগের।
বাঘাইছড়ি ছাত্রলীগের একসময়ের বলিষ্ট নেতৃত্বগুণে হাজার হাজার ছাত্রলীগ কর্মী সৃষ্টি হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর জীবনা দর্শন উপলব্ধি করার প্রয়াসে একসময়ে স্ব স্ব উদ্দ্যোগে ছাত্রছাত্রীরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার উদ্দ্যোগ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। সমগ্র উপজেলায় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অবস্থান ছিল সূদৃঢ় সুশৃঙ্খল চোখে পড়ার মত। আন্দোলন সংগ্রামে উজ্জীবিত নেতৃত্ব হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গেলো এক সময়ের মাঠ কাঁপানো হাজারো ছাত্রলীগ কর্মী।
কিন্তু বাঘাইছড়িতে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কর্মকান্ডের কিছুই দেখা যায়না আগের মতো। স্থবির হয়ে পড়েছে গঠণমূলক কর্মকান্ড। বর্তমান নেতৃত্বের নিষ্ক্রিয়তার আদলে ঢেকে গেছে এক সময়ের প্রাণচাঞ্চল্য ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সকল সম্ভাবনাময়ী কার্যক্রম। হতাশা ও ব্যার্থতায় রাজনৈতিক মাঠ থেকে দুরে সরে গেছে প্রাণের সংগঠন ছেড়েছে অনেকে।
ছাত্রলীগের স্থানীয় সূত্র জানায়, হঠাৎ উড়ে এসে জুড়ে বসা ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বের কাছে প্রকৃত মুজিব সেনারা অসহায় হয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে অসংখ্য ছাত্রলীগকর্মীকে। নেতাকর্মীর মতের বিরুদ্ধে গিয়ে নীতিমালা লংঘন করে কাউন্সিল ব্যাথিত পছন্দনীয় নেতা নির্বাচনের ফলে কর্মী সংকটের মূখে পড়েছে ছাত্রলীগ নামক সংগঠন’টি। ফলে মূখ থুবড়ে পড়েছে ছাত্রলীগের সকল কার্যক্রমে।
ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক একাদিক নেতাকর্মীদের মতামত প্রকাশে বলেন, ছাত্রলীগের রাজনীতি পূণরায় দাড় করাতে হলে অছাত্র নেতৃত্ব বাদ দিয়ে কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে নেতা নির্বাচনের সুযোগ করে দিলে ছাত্রলীগ আবার ঘুড়ে দাঁড়াতে পারবে বলে তারা মনে করেন। বর্তমান ছাত্রলীগের অছাত্র অযোগ্য নেতৃত্বের কারনে বাঘাইছড়ি ছাত্রলীগ ধংসের পথে ধাবিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত এমন অভিযোগ অনেক নেতাকর্মীর। উপজেলা ছাত্রলীগের বর্তমান আহ্বায়ক কমিটিকে অ-ছাত্র অযোগ্য আখ্যায়িত করে দ্রুত কমিটি বাতিল পূর্বক কাউন্সিল ঘোষনার দাবী জানান ছাত্রলীগ কর্মীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক ছাত্রনেতা বলেন, বাঘাইছড়ি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে কর্মীদের মতের উপেক্ষা করে কাউন্সিলের প্রয়োজনীয়তা বোধ না করে, সিনিয়র ও সাবেক ছাত্র নেতাদের পছন্দনীয় অনুসারীদের দিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে দীর্ঘবছর ধরে। কাউন্সিল বিহীন নেতৃত্ব কর্মীর মতামত অপ্রয়োজনীয় মনে করে সাবেক ছাত্রনেতা ও আওয়ামীলীগের পছন্দসই অনুগতদের দায়িত্ব দিয়ে ছাত্রলীগের কার্যক্রম পরিচালনা করার দরুন কর্মী বিমূখ হয়ে পড়ার অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলা ছাত্রলীগের ১১সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির সদস্যদের বিষয়েও নেতাকর্মীদের রয়েছে নানা অভিযোগ। সাংগঠনিক কাজ ব্যথি রেখে সিনিয়রদের আদেশ উপদেশ নিয়ে নানা অপর্কমে লীপ্ত রয়েছে বর্তমান কমিটির রিুদ্ধে। অছাত্র নেশাগ্রস্ত অসামাজিক বহিরাগত ও ব্যবসায়িক লোক দিয়ে ছাত্রলীগ পরিচালনায় তুমূল সমালোচনা করেছেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
কাচালং সরকারী কলেজ সভাপতি ছাত্রনেতা মামুন অর রশিদ বলেন, বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনার কারনে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কলেজের রাজনীতি স্থগিত হলেও সকল জাতীয় প্রোগ্রামে কলেজ ছাত্রলীগের সক্রিয় কার্যক্রম অব্যাহত। উপজেলা ছাত্রলীগের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য বর্তমান উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ককে ১৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু জন্মশত বার্ষিকীতে, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস ও ২১ শে আগষ্ট এর মত গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রামে তার উপস্থিত আমি দেখি নাই।
পৌর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মোঃ মোরশেদুল আলম বলেন, আমাদের যে কমিটি উপজেলা, পৌর ও কলেজ কমিটির অনেক আগেই মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে, হয়তো মহামারীর কারণে সম্মেলন দেওয়া হয়নি, আমি সম্মেলনের পক্ষে কারণ আমি চাই নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হোক। নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে ছাত্রলীগের ধারাবাহিকতা ফিরে আসুক। ধারাবাহিকতা ফিরে আসলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আরো উজ্জীবিত হবে বলে মনে করি।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, রাতের আধারে টেবিলের এক কোনে বসে যাচাই-বাছাই না করে এই আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে। যাদেরকে নিয়ে এই কমিটি সাজানো হয়েছে সবগুলো দুধের শিশু বলা যায়। যাদের পূর্বে কোন অভিজ্ঞতা নেই এবং শিবির ও বিএনপি থেকে আসা ছেলেও আছে এই কমিটিতে। যার জন্য বাঘাইছড়ি ছাত্রলীগের এই দুরবস্থা।
বর্তমান উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সানি দেব বলেন, সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন, আমরা সকল জাতীয় প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করি, আর বলা হয়েছে বহিরাগত ও বিএনপি বা জামাত শিবির থেকে আশা লোক পদ পেয়েছে। আমার জানা মতে আমাদের কমিটি দেওয়ার পরে একটি মহল সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে বিভিন্ন উস্কানীমূলক কথাবার্তা বলেছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভালো কিছু করলেও একটা মহল এর বিপরিত বলে। এমন কোন কিছু আমি দেখিনি। যদি উপযুক্ত প্রমান পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাঙ্গামাটি জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ চাকমা বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কার্যক্রম ঝিমিয়ে গিয়েছিল। এখন কেন্দ্রীয় ভাবে নির্দেশনা রয়েছে সংগঠনকে সক্রিয় করার জন্য। সংগঠনকে সক্রিয় করার জন্য যা কিছু করার দরকার সব ব্যবস্থা গ্রহন করবে জেলা ছাত্রলীগ। তিনি আরো বলেন, ছাত্রলীগের কমিটিতে বহিরাগত, শিবির বা বিএনপি থেকে আসা কোন লোক পদ পেয়েছে, এমন উপযুক্ত প্রমাণ পাই আমরা ব্যবস্থা নিব।
বাঘাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন আল মামুন বলেন, বর্তমানে আহ্বায়ক কমিটি থাকলেও তার মেয়াদ উওীর্ণ হয়েছে অনেক আগে। জেলা ছাত্রলীগ অচিরেই দিবে বলে আমি বিশ্বাস করি। যেহেতু করোনা ভাইরাসের কারণে আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠনের মেয়াদ কাল শেষ হয়েছে বর্তমানে সকল সকল কার্যক্রম সক্রিয় বিধায় দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্রলীগের কমিটি করার সম্ভাবনা রয়েছে।