কাপ্তাইয়ে ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগে উচ্ছ্বাস, নিশ্চুপ বিরোধী শিবির

119

ঝুলন দত্ত, কাপ্তাইঃ-রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১১ নভেম্বর। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন কাপ্তাইয়ের এই ৪টি ইউনিয়ন পরিষদের তফসিল ঘোষণা করেছেন। কাপ্তাই উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তানিয়া আক্তার জানান, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী কাপ্তাই উপজেলার ২নং রাইখালী ইউনিয়ন, ৩নং চিৎমরম ইউনিয়ন, ৪নং কাপ্তাই ইউনিয়ন এবং ৫নং ওয়াগ্গা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১১ নভেম্বর। মেয়াদ শেষ না হওয়ায় উপজেলার ১নং চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আরোও ৬ মাস পর।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, ইতিমধ্যে কাপ্তাইয়ে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। আগামী ১৭ অক্টোবর মনোনয়ন পত্র জমা দেবার শেষ তারিখ এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহরের শেষ তারিখ ২৬ অক্টোবর।
নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলের সিনিয়র নেতাদের কাছে দলের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য ধর্না দিচ্ছেন। বিশেষ করে নির্বাচনকে ঘিরে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ শিবিরে উচ্ছাস লক্ষ্য করা গেছে। শেষ পর্যন্ত দলের টিকিট নিশ্চিত করতে মরিয়া আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থীরা। উপজেলার প্রতিটি গ্রাম, পাড়া, মহল্লা এবং চায়ের স্টলে এখন একটি কথা কে হচ্ছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং মেম্বার প্রার্থী। তবে যথটা আওয়ামী শিবিরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা গেছে ঠিক বিপরীত বিরোধী শিবিরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে তেমন উচ্ছাস লক্ষ্য করা যায় না।
গত বছর কাপ্তাইয়ের ৫টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রধান প্রতিপক্ষ বি এন পি নির্বাচনে অংশ নিলেও এইবার দলটির কেউ অংশ নিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন কাপ্তাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি লোকমান আহমেদ।
বৃহস্পতিবার মুঠোফোন আসন্ন নির্বাচনে দলের নেতাকর্মীরা অংশ নিবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, কেন্দ্রীয় বিএনপির সিদ্ধান্ত মোতাবেক এবার আমাদের দলের কেউ ইউপি নির্বাচনে অংশ নিবেন না। দলের সমর্থিক কেউ যদি নির্বাচনে অংশ নেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অংসুইছাইন চৌধুরী জানান, গত নির্বাচনে কাপ্তাই উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের নৌকা প্রতীক নিয়ে ৩ জন প্রার্থী জয়ী হলেও এইবার জনগণ ৫টি ইউনিয়নে বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে জয়যুক্ত করবেন। তিনি আরোও জানান, রাঙ্গামাটি জেলার পাহাড়ি-বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা দীপংকর তালুকদার এমপি মহোদয় এর সুপারিশক্রমে দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দিবেন আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাঁর পক্ষে কাজ করবো।
কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম খলীল জানান, বিগত কয়েক দশকে আওয়ামী লীগ সরকার পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যে উন্নয়ন করেছেন তারই ধারাবাহিকতায় জনগণ কাপ্তাইয়ের প্রতিটি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনিত প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাপ্তাইয়ের শিল্প বানিজ্যিক এলাকা হিসাবে সু-পরিচিত ৪নং কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌঁড়ে এগিয়ে আছেন দুই দুই বার চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী বর্তমান চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আবদুল লতিফ। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, আমার দায়িত্বকালীন সময়ে এলাকার দূর্গম এলাকাসহ সব জায়গায় শতভাগ বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা, রাস্তাঘাট, ব্রীজ, কালভার্ট, স্কুল, মসজিদ, মন্দির, শশ্মান ঘাট নির্মান, সোলার প্যানেলের মাধ্যমে দূর্গম এলাকা আলোকিত করেছি। আশা করছি এইবার দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে আমি এলাকার অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করবো।
তবে এই ইউনিয়ন হতে দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান, দল হতে বহিস্কৃত কাপ্তাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন পাটোয়ারী বাদল। তিনি জানান, আগামী ইউ পি নির্বাচনে আমি অংশ নেবো, কারন কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদে হাজারো দুর্নীতি হয়েছে চলমান ১১বছরে।
কাপ্তাই ইউনিয়নকে মদ, জুয়া, শোষন ও লুটেরাদের হাত থেকে বাঁচাতে নির্বাচনে আমি অংশ নেব।
শতবর্ষী চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার এর জন্য সমগ্র বাংলাদেশে সু-পরিচিত কাপ্তাইয়ের চিৎমরম ইউনিয়ন। বিগত দুইটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জেএসএস (সন্তু লারমা) সমর্থিত প্রার্থী খ্যাইসা অং মারমা এই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হন। জনগণের সর্মথন নিয়ে এইবার নির্বাচনেও তিনি অংশ নিবেন বলে জানান।
এই ইউনিয়ন হতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে যার নাম শুনা যাচ্ছে তিনি হলেন, চিৎমরম ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান যুবলীগের সভাপতি ওয়েশ্লিমং চৌধুরী।
পাহাড় পর্বত আর দূর্গম এলাকা হিসাবে পরিচিত ২নং রাইখালী ইউনিয়নে বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থী মংক্যই মারমাকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হন জেএসএস সমর্থিত প্রার্থী সায়ামং মারমা। শারীরিক অসুস্থতার কারনে তিনি এইবছর অংশ নিবেন না বলে জানান। তবে এই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে জোরেশোরে মাঠে নেমেছে তিন জন শক্তিশালী প্রার্থী। তাঁরা হলেন রাইখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ তালুকদার, রাইখালী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এনামুল হক এবং উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য থয়সাপ্রু চৌধুরী রুবেল।
এইছাড়া সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রাইখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মংক্য মারমা চেয়ারম্যান নির্বাচন করবেন বলে এই প্রতিবেদককে জানান।
তাঁরা সকলেই জানান, দূর্গম রাইখালীর পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আত্মসামাজিক উন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষা প্রসারসহ নানা উন্নয়নে বিগত বছরগুলোতে আমরা জনগণের পাশে ছিলাম। তাই জনগণের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে আমরা নির্বাচন করবো।
কাপ্তাই উপজেলার ৫ নং ওয়াগ্গা ইউনিয়নে গত ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতিক নিয়ে বিজয়ী হন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি চিরনজীত তনচংগ্যা। দলীয় মনোনয়ন পেলে তিনি এইবারও নির্বাচন করবেন বলে জানান। তবে এই ইউনিয়ন হতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জোরেশোরে যার নাম শুনা যাচ্ছেন তিনি হলেন কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সুজন তনচংগ্যা ধনা।
ইতিমধ্যে তাঁরা উভয়ই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তাদের মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।