পাহাড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী ফুলবারেং ও আলাম

392

সুজন কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, বিলাইছড়িঃ-ছবিটি দেখলে হয়তো কেউ বলবেন এটা কি? আজকাল যদি কম বয়সের লোকদের দেখানো হয় বা বলা হয় বলবেন জানিনা। জানবেন বা কি করে। আন্দাজে কি বলবে।তাই সবার মনে জানবার ইচ্ছা-জিজ্ঞাসা।
এই ঝুড়ি ও ছোট্ট কাপড়টি হচ্ছে, পাহাড়ীদের হারিয়ে যাওয়া, লুকায়িত ও বিলুপ্ত প্রায় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য’র একটি অংশ। চাকমা ভাষায় বলা হয় ফুলবারেং। আর নকঁশা তৈরি কাপড়টি হচ্ছে আলাম।অন্য দিকে তঞ্চঙ্গ্যা ভায়ায় বলা হয় ফুঁ কালং ও আলাম। ভিন্ন সম্প্রদয়ের ভিন্ন রকমের নাম ও ভিন্ন ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।
জানা যাক ফুল বারেং কি-পরম ধৈর্য্য নিঁপুণ বুননে একটি বেতের তৈরি ঝুড়ি। তাই এই ঝুড়িকে বলা হয় ফুলবারেং। এক একটি ঝুড়ি যেন এক একটি শিল্প কর্ম ও কারু কাজ। মূলতঃ শুভ বিবাহের জন্য ব্যবহার করা হয় ফুলবারেং’টি। বিয়ের দিন-ই একমাত্র বরের পক্ষ থেকে কনের অলংকার, পোশাক পরিচ্ছদ ও যাবতীয় সরঞ্জামাদী নেওয়া কনের বাড়ীতে এ-ই ফুলবারেং দিয়ে। প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে বর্তমানেরও এই রীতি প্রচলন রয়েছে। তবে থাকলেও বর্তমানে এই রকম ঝুড়ি তৈরি করা বেত শিল্পী পাওয়া খুবই কঠিন ব্যাপার। বলতে গেলে নাই বলা চলে। এজন্য এখনকার বিবাহ সম্পন্ন করে সাধারণ ফুল বারেং দিয়ে। সে ধনী হোক কিংবা গরীব হোক। তাই খুবই কম দেখা যায়। একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, পেশাগত ঝুড়ি তৈরি করা ঐতিহ্য গত শ্রম শিল্পী বা কারিগর না থাকার কারনে এই ফুলবারেং’টি প্রায় বিলুপ্তির পথে।
তাহলে এবার জানা যাক আলাম কি-পাহাড়ী মেয়েদের পোশাকে উপরে একটি অংশ থাকে সেটাকে বলা হয় হাদি। এই হাদিতে বিভিন্ন ধরনের নকঁশা বোনা হয়, নকঁশাগুলো এক সাথে সংরক্ষণ করে তৈরি হওয়া কাপড়কে আলাম বলে। পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরনের নকঁশা তুলে হাদি বুনানো হয় এবং নকঁশা তুলা হয়। তাই আলমের নকঁশাগুলোকে ফুল বলা হয়। এগুলো আলামে উল্লেখযোগ্য ফুল বা জু বলা হয়। স্থানীয় ভাষায় জু বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন-বেগুন বিচি ফুল, কুয়া চুগ ফুল, জুনিপুগ ফুল, গুমচগলা ফুল, সাবকাঙাল ফুল ইত্যাদি ইত্যাদি। অর্থাৎ এক কথায় বলতে গেলে যত রকমের ফুল আছে ঐ ফুলগুলো আলামে তুলা হয়। হাদি বুনানোর সময়ে কোন ফুলের পরে কোন ফুলটা সাজিয়ে দিলে হাদিতা আরো বেশী সুন্দর ও আকর্ষনীয় দেখাবে। তাই হারিয়ে যাওয়া লুকায়িত, বিলুপ্ত প্রায় সংস্কৃতি সংরক্ষণে সবাই এগিয়ে আসার দরকার সবাইকে।