পাহাড়ের বাঁশকোড়ল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রিঃ পার্বত্যাঞ্চলে বিলুপ্তির পথে বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান বাঁশ

93

রাহুল বড়ুয়া ছোটন, বান্দরবানঃ-পার্বত্যাঞ্চলে অবাধে বাঁশকোড়ল (চারাবাঁশ) আহরণ করে বাঁশ নিধণের কারণে বিলুপ্তির পথে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাকৃতিক মূল্যবান বাঁশ সম্পদ। তিন পার্বত্য জেলার বাজারগুলো এখন বাঁশকোড়লে ভরপুর। ব্যবসায়ীরাও বাজারগুলো থেকে বাঁশকোড়ল সংগ্রহ করে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সবজি হিসেবে বিক্রি করছে। প্রতিদিন বাজারগুলো প্রায় কয়েক হাজারেও বেশি বাশঁকোড়ল বিক্রি হচ্ছে। এতে পার্বত্যাঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ নিধন হয়ে যাচ্ছে। বিগত ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার প্রাকৃতিক পাঁয়াবাঁশ, মূলিবাঁশ, মিতাবাঁশ, ওড়াবাঁশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান বাঁশের জন্য বিখ্যাত ছিল। কিন্তু এই দুইযুগ ধরে কোন প্রকার নিয়মনীতি ছাড়ায় বাঁ কোড়ল (চারাবাঁশ) আহরণ করে সবজি খাদ্য হিসেবে ব্যবহার, অবাধে বাশঁ বাজারজাত এবং ব্যাপক হারে বাঁশ নিধণ করা হচ্ছে। অপরিকল্পতিভাবে বনাঞ্চল কেটে আগুনে পুড়িয়ে তৈরিকৃত জমিতে জুমচাষের ফলে বিলুপ্তির পথে রয়েছে প্রাকৃতিক মূল্যবান এ বাঁশ সর্ম্পদ। এই বাশঁ দিয়ে ঘরবাড়ি তৈরি, আসবাবপত্র তৈরি ইত্যাদি কাজে এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে, তাও হারিয়ে যাচ্ছে। পার্বত্যাঞ্চলের পাহাড়ীরা সবজি হিসেবে বিভিন্ন ভাবে বাঁশ কোড়ল রান্না করে খেয়ে থাকেন এবং যেমন সুস্বাদু তেমন শরীরের জন্যও উপকারী মনে করেন। তারা বাঁশের কোড়লকে “স্বাস্থ্যকর খাবার মনে করেন। বন বিভাগের মতে, জুন, জুলাই এবং আগষ্ট এই তিন মাস পার্বত্যাঞ্চলে বাশঁ কর্তন বন্ধ রাখা এবং পরিবহন করার অনুমতি দেওয়া হয়না, বর্ষাকালে বাঁশের বংশবৃদ্ধি হয়। যার কারণে তিন মাস বাঁশ কতনের উপর নিষেধাজ্ঞাজারি করা হয়।
এদিকে পার্বত্যাঞ্চলে বাঁশ কোড়ল সবজি হিসেবে পাহাড়ীদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। বর্ষায় খাদ্য ঘাটটি মিটাতে পাহাড়ীরা বাঁশকোড়লকে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে আসছে যুগ, যুগ ধরে। বাঁশকোড়ল পাহাড়ীদের কাছে খুবই সু-স্বাধু। ফলে বর্তমানে পাহাড়ী-বাঙ্গালীর কাছে বাঁশকোড়ল সবজি খাদ্যেই পরিনত হয়েছে। পাহাড়ীরা মনে করেন, পাহাড়ের জঙ্গল থেকে বাঁশকোড়ল সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করেন, নিজেরা খেয়ে থাকেন এবং বর্ষায় পাহাড়ে কাজকর্ম না’ থাকায়, তারা বিভিন্ন বন থেকে বাঁশকোড়ল সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রির মাধ্যমে পরিবারে আর্থিক সংকট মিঠাচ্ছেন এবং তাদের ছেলে মেয়েদের পড়া লেখার খরচ বহন করে থাকেন। পাহাড়ী সাংবাদিক অনুপম মার্মা বলেন, পাহাড়ীদের কাছে বাশঁকোড়ল সুস্বাদ খাবার, তারা সবজি হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। তবে সরকারী হিসেবে এই সময়ে তিন মাসের জন্য বাশঁকোড়ল আহরণ নিষেধাজ্ঞা আছে, কিন্ত এখান কার পাহাড়ীরা বাশঁকোড়ল আহরণ নিষেধাজ্ঞা এ সর্ম্পকে তাদের ধারণা নেই। এই তিন মাসে বাঁশকোড়ল আহরণ বা সংগ্রহ বন্ধ করা না হয়, তাহলে বাঁশ কোড়লের গজে উঠা বাচ্ছা এদেরকে যদি মেরে ফেলে এবং সংগ্রহ করে খেয়ে পেলে তাহলে বাঁশ সম্প্রসারণ করার আর সুযোগ নেই। এই সাংবাদিক আরো বলেন, বাশঁকোড়ল সংগ্রহ করা ও বন্ধ করার জন্য স্থানীয়দেরকে আরো সচেতন হতে হবে। কারণ বাশঁকোড়ল সংগ্রহ করে বাঁশে বংশবিস্তার নষ্ট করে দেওয়া হয়, তাহলে বাঁশ দিয়ে যেই আসবাপত্র বানানো হয়, সেইটা আর বানানো সম্ভব্য হবে না। তাই বাঁশকোড়ল সংগ্রহ করা এবং বাঁশকোড়ল নিধন বন্ধে স্থানীয়দের বিশেষ নজর দিতে হবে এবং সচেতনামূলক প্রচারণা চালাতে হবে।
বান্দরবান বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো: ফরিদ মিঞা বলেন, বাঁশের যেই কোড়ল বা চারা গজায় সেটা স্থানীয়রা সেটাকে সবজি হিসাবে ব্যবহার করে থাকে। এর মাধ্যমে তাদেরকে বুঝানো হয়েছে যে বাঁশকোড়ল সংরক্ষন করা জন্য, এতে তারা লাভবান হবেন এবং প্রাকৃতিক মূল্যবান এ বাঁশ সর্ম্পদও রক্ষা হবে। এই কর্মকর্তা আরো বলেন, জুন, জুলাই এবং আগষ্ট এই তিন মাস বাঁশ কর্তন বন্ধ রাখা এবং পরিবহন করার অনুমতি দেওয়া হয় না, বর্ষাকালে বাশেঁর বংশবৃদ্ধি হয়। যার কারণে তিন মাস বাশঁ কর্তনের উপর নিষেধাজ্ঞাজারি করা হয়। তবে বাশেঁর যেই কোড়ল বের হয় সেইটা স্থানীয়রা সবজি হিসেবে খেতে বেশি পছন্দ করে থাকেন। এটার সংগ্রহ বৃদ্ধির জন্য বন বিভাগের প্রতিটি রেঞ্জার অফিসের মাধ্যমে পাড়া-মহল্লায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, হেডম্যান-কারবারীদেরকে নিয়ে সচেতনামুলক উঠান বৈঠক করা হয়েছে। তাদের মাধ্যমে স্থানীয়দেরকে বুঝানো হচ্ছে, যে বাশঁগুলো নষ্ট না করে সংরক্ষন করা হলে তারা লাভবান হবে। তবে স্থানীয়দেরকে যদি সচেতন করা যায় তাহলে বান্দরবান আরো সবুজ সুন্দর এবং বান্দরবান পর্যটন বান্ধব হবে এবং পার্বত্য এলাকা আরো আকৃষ্টি হবে। এছাড়াও পার্বত্যাঞ্চলে মূল্যবান বাঁশ সম্পদ রক্ষায় স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি নতুন নতুন বাঁশ বন গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছেন বন বিভাগ।