লামা বন বিভাগের আলীকদম তৈন রেঞ্জ রেঞ্জ কর্মকর্তার যোগসাজসে পূর্ণবাসন প্লটের মূল্যবান কাঠ উজার

132

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামাঃ-বান্দরবানের জেলার আলীকদম উপজেলার সরকারি পূর্ণবাসন প্লটের মূল্যবান সেগুন ও গামারী প্রজাতির কাঠ উজাড়ের অভিযোগ উঠেছে। এইসব মূল্যবান কাঠ উজারের সাথে খোদ লামা বন বিভাগের আওতাধীন আলীকদম উপজেলার তৈন রেঞ্জ কর্মকর্তা জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পূর্ণবাসন প্লটের বরাদ্দ পাওয়া সুবিধাভোগীরা।
জানা যায়, ১৯৮৫ সালে ৬ ধারায় বিজ্ঞপ্তিত্ব আলীকদম উপজেলার চৈক্ষ্যং ও নয়া পাড়া ইউনিয়নের ৩৬২০ এর জায়গার উপর সৃজিত তৈন রিজার্ভের শিলবুনিয়া এলাকায় তৈন রিজার্ভের পাশ ঘেষে খাস জায়গায় ৫০ জন নৃ-গোষ্ঠী জনগণকে সুবিধাভোগী তালিকা মতে ৫ একর করে ৫০টি পূর্ণবাসন প্লট দেয় বন বিভাগ। ১৯৯৫ সালে সেই পূর্ণবাসন প্লটে সরকারি খরচে সেগুন, গামারী ও বেলজিয়াম সহ নানা প্রজাতির গাছ লাগিয়ে বনায়ন করা হয়। বন বিভাগ ও সুবিধাভোগীরা ঊভয়ে এইসব বাগান পাহারা দিয়ে আসছিল। মূলত তৈন রিজার্ভের সংরক্ষণ-নিরাপত্তা ও অনাবাদী পাহাড় আবাদ করার উদ্দেশ্যে এই কর্মসূচী হাতে নেয় বন বিভাগ।
শিলবুনিয়া এলাকার সিট নং ২ পূর্ণবাসন প্লটের মালিক নিওথোয়াইচিং মার্মা বলেন, পূর্ণবাসন প্লটের লাগানো গাছের বয়স এখন ২৬/২৭ বছর। সেগুন, গামার ও বেলজিয়াম গাছ গুলো এখন পরিপক্ক হয়েছে। গাছ গুলো পরিপক্ক হওয়ায় অনেকের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে। অনেকে অন্য জায়গা থেকে ভুয়া কাগজ এনে পূর্ণবাসন প্লটের জায়গা দাবী করে গাছ কাটতে কুটকৌশল করছে। তেমনি আলীকদম বাজার এলাকার সেনুয়ারা বেগম নামে জনৈক এক মহিলা শিলবুনিয়া এলাকার মৃত বাঅং হেডম্যান এর ৮নং পূর্ণবাসন প্লটে গত শনিবার (৩ জুলাই) ১টি সেগুন ৩টি গামারী গাছ ও রবিবার (৪ জুলাই) ৩টি সেগুন মোট ৭টি গাছ কেটে ফেলে। শনিবার সকালে তৈন রেঞ্জ কর্মকর্তা জহির উদ্দিন মিনার চৌধুরী ও বাগান মালী সানাউল্লাহ ও মোস্তাফিজকে গাছ কাটার বিষয় জানানো হলেও তারা কোন পদক্ষেপ নেয়নি। শনিবার দুপুরে তৈন রেঞ্জের বাগান মালী সানাউল্লাহ ও মোস্তাফিজ এসে গাছ কাটার লোকজন ও হাতিয়ার নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে তাদের ছেড়ে দেয়। তারপর রবিবার সেনুয়ারা বেগম সহ তার ৫/৬ লেবার আবার এসে আবার গাছ কাটে। বিষয়টি আমরা লামা বিভাগীয় বন কর্তকর্তা সহ বন বিভাগের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে জানালে অবশেষে সোমবার দুপুরে কাটা গাছ গুলো জব্দ করে বন বিভাগের লোকজন তৈন রেঞ্জ অফিসে নিয়ে যায়। তৈন রেঞ্জ কর্মকর্তা সহ তার অফিসের লোকজন ব্যক্তিগত সুবিধা নিয়ে আমাদের গাছ গুলো রাগোববোয়ালদের কাটার সুযোগ করে দিচ্ছে।
শিলবুনিয়া এলাকার মানিক ত্রিপুরা নামে একজন বলেন, সেনুয়ারা বেগম খুবই প্রবাবশালী মহিলা। যখন তখন যার তার সাথে সে ঝগড়া বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। অন্য জায়গার আরেকটি হোল্ডিং কাগজ দেখিয়ে সে এই জায়গা দাবী করছে।
নাম প্রকাশ না করা সত্ত্বে তৈন রিজার্ভ এলাকার এক ভিলেজার বলেন, শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় গাছ কাটার বিষয়টি আমি তৈন রেঞ্জে অবগত করি। তারা তড়িগড়ি ব্যবস্থা নিলে একটা গাছও কাটা যেত না। তাদের অবহেলায় ও সহযোগিতায় রবিবার আবার গাছ কাটার সাহস পায় সেনুয়ারার লোকজন।
এই বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হয় তৈন রেঞ্জ কর্মকর্তা জহির উদ্দিন মিনার চৌধুরী এর সাথে। তিনি বলেন, সোমবার দুপুরে আমরা গাছ গুলো জব্দ করি। এই গাছ কাটার বিষয়ে কোন জোত বা হোম পারমিট দেয়া হয়নি। জব্দ গাছের বিষয়ে বন মামলার প্রস্তুতি চলছে। কোন অনুমতি না থাকলে শনিবার গাছ গুলো কাটতে নিষেধ করা হয়নি কেন ? এমন প্রশ্ন করলে তিনি প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যান।
সেনুয়ারা বেগম বলেন, এই বাগান আমার। আমি আমার বাগান থেকে গাছ কেটেছি। আমার কাছে গাছ কাটার কোন পারমিট নেই।
লামা বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) এস এম কায়চার বলেন, বিষয়টি আমি জানার সাথে সাথে তৈন রেঞ্জ কর্মকর্তাকে কাঠ গুলো জব্দ করতে নির্দেশ দিয়েছি। ইতিমধ্যে কাঠ জব্দ করে বন মামলা প্রক্রিয়াধীন। এছাড়া ৬ ধারায় বিজ্ঞপ্তিত্ব তৈন রিজার্ভের পাশের আমাদের লাগোয়া পূর্ণবাসন প্লটের কোন কাঠ যেন কাটা না যায়, সে বিষয়ে তৈন রেঞ্জে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।