বাঘাইছড়িতে ব্রীজ নির্মাণে অনিয়ম: এলাকাবাসীর ক্ষোভঃ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের আগেই ব্রীজে ফাটল

297

বিশেষ প্রতিবেদক, বাঘাইছড়িঃ-রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার আমতলী ইউনিয়নে ৩৯ লক্ষ টাকা ব্যায়ে নির্মিত ব্রীজটি বাঘাইছড়ি কর্তৃপক্ষের কাছে হন্তান্তরের আগেই ৩৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রীজে ফাটল দেখা দিয়েছে। ব্রীজটি উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তরের অধীনে আমতলী ইউনিয়নের ডিপুর মুখ এলাকায় নির্মিত হয়েছে।
আমতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী জানায়, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তরের অধীনে বঙ্গমিত্র চাকমার লাইসেন্স এ কাজটি বাঘাইছড়ি উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের নেতা নুর উদ্দীন ব্রীজটি নির্মাণ করেন। কিন্তু কাজটি নির্মানের সময় অদক্ষ লোক দিয়ে কাজ করা হয়েছে এবং কাজের গুনগতমান খুবই খারাপ। ব্রীজটি নিচের দিকে দেবে গেছে এবং বামপাশের গার্ডারে ফাটল দেখা দিয়েছে। যদিও এখন সিমেন্ট দিয়ে গার্ডারের ফাটল মুছে দেয়া হয়েছে। কিন্তু ব্রীজটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণে প্রাণহানির সংশয় রয়েছে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
অত্র ওয়ার্ড সদস্য মোঃ তৌহিদ অভিযোগে করে জানান, শুরু থেকেই ব্রীজটি নির্মাণ করতে গিয়ে অনেক অনিয়ম করা হয়েছে। আর এই ব্যাপারে বার বার ঠিকাদারকে অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারকে বল্লেও তিনি আমাকে পাত্তাই দিতে চায় নাই।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, শুরুতেই ঠিকাদারের লোকজন নির্ধারিত সময়ের প্রায় ১বৎসর পর নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ এই ব্রীজের নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। তাদের বাধা প্রদান করা সত্ত্বেও রহস্যজনক কারণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ঠিকাদার ১৯-২০ অর্থবছরেরের কাজ ছয়নয় করে ২০২১ সালে কাজ শেষ করে। এলাকাবাসীর অভিযোগ আমতলী ও গুলশাখালী ইউনিয়নের জনগনের যোগাযোগের একমাত্র গুরত্বপূর্ণ ব্রীজটি দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করতে হবে। এ ব্যাপারে তারা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
এলাকাবাসীদের আরো অভিযোগ রয়েছে, ৩৮ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৪ফুট প্রস্থের ৩৯লক্ষ টাকা ব্যায়ে নির্মিত এই ব্রীজটির নিচে ভিত্তির উপরে ৪ ইঞ্চি উচ্চতার ঢালাই দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। যত্রতত্র ভাবে এই কাজ ঠিকাদার সম্পন্ন করেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৩৮ফুটের দৈর্ঘ্য এবং ১৪ফুট প্রস্থের ৩৯লক্ষ টাকা ব্যায়ে নির্মিত এই ব্রীজটি নিচের দিকে দেবে গেছে। এছাড়াও এবাটমেন্ট (ব্রিজের পাশ) গার্ডারও ফেঁটে গেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ নির্মাণের সময় নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করায় দ্রুত ব্রীজটিতে ফাঁটল দেখা গেছে।
এই বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত নুর উদ্দিনকে একাধিকবার মোবাইলে ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এই ব্যাপারে বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাৎক্ষণিক তিনি প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। এসময় তিনি প্রতিবেদককে জনস্বার্থে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের অনিয়মের খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।
অন্যদিকে, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ দেলোয়ার হোসেনের কাছে ব্রীজের কাজের ব্যাপারে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এইসব বিষয়ে নিউজ না করার অনুরোধ জানান।
আমতলী এবং গুলশাখালী ইউনিয়নে যোগাযোগের একমাত্র সংযোগ সড়ক এটি কিন্তু এই ব্রীজটি হওয়ার আগে নদী পথে নৌকা দিয়ে আমতলী, সারোয়াতলী এবং গুলশাখালী ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক পরিবার তাদের উৎপাদিত পণ্য আদা হলুদ গাছ বাঁশসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য উপজেলা ও জেলায় আনা নেওয়া করতো। কিন্তু ব্রীজটি নিচের দিকে দেবে (নিচের দিকে ধাবিত হয়) যাওয়ায় লক্ষাধিক পরিবার তাদের উৎপাদিত এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে নদী পথে চলাচল বন্ধ হওয়ায় তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এতে জনমনে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত এই ব্যাপারে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসী।