পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা

2116

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাঙ্গামাটিঃ-সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত হয়েছেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা।
রবিবার (১৩ জুন) পার্বত্য মন্ত্রনালয় থেকে নিখিল কুমার চাকমাকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিতে একটি সার সংক্ষেপ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন চেয়ে পাঠানো হলে তাতে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের পক্ষে সচিব মোসাম্মৎ হামিদা বেগম এই সার-সংক্ষেপ প্রেরণ করেন।
পার্বত্য মন্ত্রনালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট একটি দায়িত্বশীল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আইন ২০১৪ এর ৬(২) ধারা অনুযায়ী এই সম্মতি প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির পর মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে গেজেট আকারে এই সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
১৯৭৬ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড গঠিত হওয়ার পর নিখিল কুমার চাকমা’ই প্রথম ব্যক্তি যিনি পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত হলেন। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি চেয়ারম্যানের পদে নিয়োগ পাওয়া প্রথম বেসামরিক ব্যক্তি, যিনি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নন।
এর আগে পদাধিকার বলে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারবৃন্দ এবং পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের জিওসিরা এই বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মতো বোর্ডে রাজনীতিবিদ চেয়ারম্যান মনোনীত হন সেই সময়ে বান্দরবান থেকে নির্বাচিত আওয়ামীলীগ দলীয় সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর। ২০০২ সালে চেয়ারম্যান মনোনীত হন খাগড়াছড়ি থেকে নির্বাচিত বিএনপির সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ ভূইয়া। ২০০৯ সালে পুনরায় দ্বিতীয় মেয়াদে চেয়ারম্যান মনোনীত হন বীর বাহাদুর এমপি। এরপর ২০১৩ সালে চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত হন সাবেক সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা। ২০২১ সালের ১৮ মার্চ দুই দফা দায়িত্ব পালন শেষে মেয়াদ শেষ হয় নব বিক্রমের। এরপর গত তিন মাস ধরেই শূণ্য পড়ে ছিলো এই পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদটি।
পার্বত্য অঞ্চলের রাজনৈতিক বরপুত্র বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ দীপংকর তালুকদার ও পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুরের সুপারিশ ক্রমে প্রধানমন্ত্রী নিখিল কুমার চাকমার কাঁধে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্ব অর্পন করলেন। নিখিল কুমার চাকমা দায়িত্ব পাওয়ার সাথে সাথে দীর্ঘ বছর পর রাঙ্গামাটি জেলা বাসীর প্রাণের দাবী পুরন হলো।
গত কয়েকদিন ধরে পার্বত্য রাঙ্গামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলায় কে চেয়ারম্যান হচ্ছে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনার ঝড় উঠে। তিন পার্বত্য চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজনে নাম চেয়ারম্যান পদে শোনা গেলেও বরাবরই নিখিল কুমার চাকমা ছিল আলোচনার শীর্ষে।
কারণ পার্বত্য মন্ত্রী মারমা, শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান ত্রিপুরা, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ মারমাদের দখলে চলে গেছে। বাকী রয়েছে চাকমা স¤প্রদায়ের লোক। তাই হয়তো নিখিল কুমার চাকমা, বাসন্তি চাকমা এমপি ও সচিব সুদত্ত চাকমার না আলোচনায় উঠে আসে। তবে শেষ মুহূর্তে শেষ হাসিটি হাসলো রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের সফল চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রী ও দীপংকর তালুকদারের আস্থাভাজন নিখিল কুমার চাকমা।
ইতিমধ্যে গত ৩দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে নিখিল কুমার চাকমাকে নিয়ে বিভিন্ন কমেন্ট শুরু হয়েছে। দীর্ঘ বছরে রাজনীতিক জীবনে যাদের ভালোবাসা পেয়েছেন সকলেই তাকে ফুলের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। অভিনন্দন জানিয়েছেন তার এই সফলতা কামনায়। দীর্ঘ বছর পর আবারো বড়ো কোন দায়িত্ব পাওয়ায় তাকে অনেকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
রবিবার (১৩ জুন) বিকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নবাগত চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও পাহাড়ের রাজনীতির অহংকার দীপংকর তালুকদার এমপি আমাদের সকলের দাদা এবং পাহাড়ের অরেক অহংকার পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর আমাকে যোগ্য মনে করেছেন বলে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বভার দিয়েছেন। আশা রাখি তারা পার্বত্য মানুষের উন্নয়নের জন্য আমাদের দায়িত্ব দিয়েছে। আমি তাদের আশা পুরণ করে পার্বত্য মানুষের উন্নয়নে নিজেকে মনোনিবেশ করবো। তিনি বলেন, আমি তিন পার্বত্য জেলার মানুষের উন্নয়নে নিজেকে তুলে ধরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার কাজে নিজের মন প্রাণ উজার করে দিবো।
উল্লেখ্য নিখিল কুমার চাকমা রাঙ্গামাটি জেলার প্রবীন ব্যক্তি নানিয়ারচর উপজেলার প্রয়াত তিলক চন্দ্র চাকমার সন্তান। তিনি দীর্ঘ বছর ধরে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন। তিনি নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করে নিজেকে একজন সফল চেয়ারম্যান হিসাবে রাঙ্গামাটি জেলার মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন। তিনি পাহাড়ের মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন বলেই বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও পার্বত্য অঞ্চলের অহংকার দীপংকর তালুকদার ও পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি তাকে নতুন ভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্ব ভার অর্পণ করেন।