করোনায় পাহাড়ে হচ্ছে না বৈসাবী উৎসব, নেই কোন আনুষ্ঠানিকতা

357

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাঙ্গামাটিঃ-বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে পাহাড়ে প্রধান ও সামাজিক উৎসব বৈসাবী উৎসব গত বছরের ন্যায় এ বছরও পালন করা হচ্ছে না। করোনা মহামারির কারণে বিজু, সাংগ্রাইং, বৈসুক, বিষু, বিহু ও বাংলা নববর্ষ-২০২১ উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকে এসব অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। সোমবার (১২ এপ্রিল) ছিলো পাহাড়ের বৈসাবী উৎসবের প্রথম দিন। আর মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিনকে বলা হয় ফুল বিজু।
উৎসবের প্রথম দিনে চাকমা, ত্রিপুরা ও মারমারা বন থেকে ফুল আর নিমপাতা সংগ্রহ করে সেই ফুল দিয়ে ঘর সাজায় ও মা গঙ্গার উদ্দেশ্যে নদীতে ফুল ভাসায়। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীগুলোর ঐতিহবাহী নানা খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও অতিথি আপ্যায়ন। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ক্রমে আনন্দ র‌্যালি, মারমাদের ঐতিহ্যবাহী ওয়াটার ফেস্টিবল বা পানি খেলা উৎসব ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের গড়িয়া নৃত্য’র আয়োজন করে থাকে। কিন্তু গত বছরের ন্যায় এবছরও মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে কোথাও কোন আনুষ্ঠানিকতা নেই। সবাই যার যার বাসায় অবস্থান করে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখবে।
বিজু, বৈসু, সাংগ্রাইং, বিষু-২০২১ উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ইন্টু মনি চাকমা বলেন, দেশব্যাপী করোনা মহামারির কারণে সরকারি নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আমাদের সব অনুষ্ঠান স্থগিত রাখছি। জনসমাবেশ হবে এমন অনুষ্ঠান বাদ দেয়া হয়েছে। তবে প্রকাশনা বের করা হবে।
ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি সুরেশ ত্রিপুরা জানান, মহামারি করোনা কারণে সরকারী নিদের্শনা পরিপ্রেক্ষিতে ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মা গঙ্গার উদ্দেশ্যে নদীতে ফুল ভাসানোসহ সব ধরনের অনুষ্ঠান স্থগিত করেছি। গত বছরের ন্যায় এ বছরও কোন উৎসব আনুষ্ঠানিক ভাবে করা হবে না।
বৈসাবীর এই উৎসবকে কেন্দ্র করে এই দিনটিকে ঘিরে আনন্দ উৎসবে মেতে থাকে পাহাড়ের সকল সম্প্রদায়ের মানুষ। কিন্তু এবছর বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে রাঙ্গামাটির কোথাও বৈসাবী উৎসব পালিত হচ্ছে না। সরকারের নির্দেশনা ও নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে সামাজিক দুরত্ব মেনে চলতে বৈসাবী উৎসব থেকে বিরত রয়েছেন পাহাড়ের মানুষ। বেঁচে থাকলে আগামী বছর এই বিজু উৎসব আনন্দ ঘন পরিবেশে পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন পাহাড়ে বসবাসরত সাধারণ মানুষ।
আর বৈশ্বিক এই মহামারী থেকে বিশ্ব সুস্থ হয়ে আগামী বছর বৈসাবী উৎসব আরো আনন্দ ঘন উৎসব পালন করতে পারে তার জন্য সকলেই যার যার অবস্থান থেকে সৃষ্টি কর্তার কাছে প্রার্থনা জানাচ্ছেন পাহাড়ের সকল সম্প্রদায়ের মানুষ।
উল্লেখ্য, প্রতি বছর বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে রাঙ্গামাটিতে বসবাসরত ১৩ নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর উদ্যোগে বিজু, সাংগ্রাইং, বৈসুক, বিষু, বিহু, জল উৎসব ও বাংলা নববর্ষ উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্যদিয়ে পালন করা হয়। এ উৎসব পাহাড়ের সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে ৯ এপ্রিল থেকে উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে র‌্যালিসহ বিভিন্ন ধরনের পাহাড়ি খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমা ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামে তঞ্চঙ্গ্যা, বম, খিয়াং, লুসাই, পাংখোয়া, ম্রো, খুমি, আসাম, চাক ও রাখাইনসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলো নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে তাদের ভাষা-সংস্কৃতি ও অবস্থানকে বৈচিত্রময় করে করে তুলতে প্রতি বছর চৈত্রের শেষ দিন থেকে ‘বৈসাবি’ উৎসব পালন করে থাকে। কিন্ত করোনা ভাইরাসের কারণে গত বছর থেকে উৎসব-আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে পাহাড় আর সমতলের মানুষ।
১৯৮৫ সাল থেকে খাগড়াছড়িসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত তিন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে ‘বৈসাবি’ নামে এ উসব পালন করে আসছে। যা সময়ের ব্যবধানে নিজ নিজ সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে ‘বৈসাবি’ শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমা সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব নামে ‘ত্রিপুরা ভাষায় বৈসু, মারমা ভাষায় সাংগ্রাই এবং চাকমা ভাষায় বিজু’ নামে এ উৎসব পালন হয়ে থাকে। এ তিন সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভাষার নামের প্রথম অক্ষর নিয়ে ‘বৈসাবি’ নামকরণ করা হয়।