করোনা ভাইরাসের ২য় ডেউ মোকাবেলায় বান্দরবানের সকল পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ

188

রাহুল বড়ুয়া ছোটন, বান্দরবানঃ-দেশে হঠাৎ করে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বান্দরবানের সকল পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষনা করেছে জেলা প্রশাসন,আর এতে সাধারণ জনগণ স্বস্থি প্রকাশ করলে ও বিপাকে পড়েছে পর্যটন ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা।
বুধবার (৩১ মার্চ) বান্দরবান জেলা প্রশাসন এক গণবিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে জেলার সকল পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষনা করে, আর এই ঘোষনার পরপরই আজ সকাল থেকেই সকল পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষনার পরপরই পর্যটনকেন্দ্রগুলোর মূল ফটকে তালাবদ্ধ রাখা হয় আর এতে পর্যটনকেন্দ্রে কোন পর্যটকের দেখা মেলেনি।
যেকোন সরকারি বন্ধ, পূজা ও ঈদের ছুটিতে বান্দরবানের মেঘলা, নীলাচল, চিম্বুক, শৈলপ্রপাত, নীলগীরিসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র ঘুরতে যায় অসংখ্য দেশি বিদেশি পর্যটক, কিন্তু এবার করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বান্দরবান জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২য় বারের মত সকল ধরণের পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ রাখায় বান্দরবানে পর্যটকদের আগমন কমতে শুরু করেছে। অন্যদিকে পর্যটক না থাকায় বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে বিরাজ করছে শুনসান নীরবতা আর পর্যটন খাতের সাথে জড়িতদের আয়ের পথ বন্ধ হওয়ায় ভোগান্তীতে পর্যটকবাহী যানবাহন চালক ও ব্যবসায়ীরা।
বান্দরবানের টুরিস্ট গাড়ী চালক মো.সোহেল জানান, বান্দরবান একটি পর্যটন জেলা কিন্তু হঠাৎ করে পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে পরবো।
বান্দরবানের টুরিস্ট গাড়ী চালক মোঃ আলী জানান, করোনা সংক্রমক প্রতিরোধে আগামী ১৪ দিনের জন্য বান্দরবানের সকল পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ায় আজ সকাল থেকে সকল টুরিস্ট গাড়ী চালকেরা বেকার বসে আছে, কোন স্থানে কোন পর্যটক নেয় আর আমাদের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেল।
এদিকে পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ রাখার পাশাপাশি সকল হোটেল ও মোটেলগুলো ৫০শতাংশ বুকিং করার নিদের্শনাসহ কয়েকটি নিদের্শনার জারির ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে পর্যটন খাত এমনটাই জানালেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। বান্দরবানের হোটেল হিলটন আবাসিক এর ম্যানেজার মোহাম্মদ আক্কাস উদ্দিন সিদ্দিকী জানান, জেলা প্রশাসন থেকে এক গণবিজ্ঞপ্তি জারির পরপরই আমাদের সব বুকিং বাতিল হয়ে গেল। যেসমস্ত অতিথিরা আমাদের হোটেলে ছিল তারা সবাই রাতে হোটেল ছেড়ে নিজ নিজ গন্তব্যে চলে গিয়েছি।
বান্দরবানের হোটেল হিলটন আবাসিক এর ম্যানেজার মোহাম্মদ আক্কাস উদ্দিন সিদ্দিকী আরো জানান, বান্দরবানের পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকা মানেই পর্যটকদের আগমন বন্ধ থাকা আর আগামী ১৪দিনে আমাদের হোটেলে কোন পর্যটক আসবে না আর এতে আমরা চরম ক্ষতির মুখে পড়বো।
বান্দরবানের হোটেল গার্ডেন সিটি আবাসিক এর স্বতাধিকারী মো.জাফর উল্লাহ জানান, গেল বছর করোনার কারণে বান্দরবানের পর্যটনকেন্দ্র ও হোটেলগুলো লকডাউনের আওতায় এনে দীর্ঘ ৫মাস বন্ধ রাখা হয় আবার এই মার্চে ও পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ রাখা ও হোটেলে ৫০শতাংশ বুকিং করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে আর এতে পর্যটকরা বান্দরবানে আসবে না এবং আমরা পর্যটন ব্যবসায়ীরা যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছি তারা ক্ষতি সামলাতে হিমশিম খাবে।
বান্দরবানের আবাসিক হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো: সিরাজুল ইসলাম বলেন, বান্দরবান একটি পর্যটন জেলা এখানে প্রতিদিনই দেশি বিদেশি অসংখ্য পর্যটকে ভরপূর থাকে,কিন্তু হঠাৎ করে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় বান্দরবানের পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা পর্যটন ব্যবসায়ীরা দিশেহারা হয়ে গেলাম।
প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছে বান্দরবানের সাধারণ জনগণকে করোনার এই মহামারি থেকে রক্ষা করা আর পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষে জেলা প্রশাসন সাময়িকভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তবে করোনার প্রকোপ কমে গেলে আবার ও স্বাভাবিকভাবে পর্যটন কেন্দ্রগুলো চালু হবে।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, করোনার সংক্রমক বৃদ্ধি পাওয়ায় বান্দরবানের সকল পর্যটনকেন্দ্র আগামী ২সপ্তাহ বন্ধ থাকবে এবং পাশাপাশি হোটেল-রেঁস্তোরাসমুহে ধারণ ক্ষমতার ৫০ভাগের অধিক মানুষ প্রবেশ করতে পারবে না।
জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি আরো বলেন, আগামী ২ সপ্তাহ সকল পর্যটন কেন্দ্র, বিনোদন কেন্দ্র, শিশু পার্ক, সিনেমা হল বন্ধ থাকবে আর সকল ধরণের মেলা আয়োজন স্থগিত থাকবে। শপিং মলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে আর এর ব্যতয় ঘটলে সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গেল বছর ৮মার্চ দেশে প্রথমবারের মতো করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার ১০দিন পর ১৮মার্চ থেকে বান্দরবানের সকল আবাসিক হোটেল-মোটেল ও পর্যটনকেন্দ্র পর্যটকদের জন্য বন্ধ করে দেয় বান্দরবানের জেলা প্রশাসন আর করোনার ২য় ডেউ মেকাবেলায় আবার ১লা এপ্রিল থেকে ১৪এপ্রিল পর্যন্ত ১৪দিন ২য় দফায় আবারো ও সকল পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বান্দরবানের জেলা প্রশাসন।