নতুন বছরে রাঙ্গামাটির পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকের ঢল

307

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাঙ্গামাটিঃ-বৈশ্বিক মহামারী করোনার বিপর্যয় মোকাবেলা করে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে রাঙ্গামাটির পর্যটন খাত। ২০২০ সালকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরে ২০২১ সালের শুরুতেই রাঙ্গামাটির পর্যটন স্পট গুলো লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছে। বছরের শুরুতেই সরকারী ছুটির দিন হওয়ায় রাঙ্গামাটির পর্যটন স্পটগুলোতে দেশী বিদেশী পর্যটকের ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। করোনার দ্বিতীয় থাবা আসতে শুরু করলেও স্বাস্থ্য বিধি মেনে সচল হয়ে উঠেছে এ খাতের ব্যবসা-বাণিজ্য। প্রাণ ফিরছে এখানকার পর্যটনে।
বর্তমান শীত মৌসুমের শুরু থেকেই রাঙ্গামাটির পর্যটকের আগমন ঘটছে পর্যটকের। অরণ্য, পাহাড়, ঝরনা আর হ্রদের শহর রাঙ্গামাটি গড়ে উঠেছে বেশ কিছু পর্যটন কেন্দ্র। গতকাল বছরের প্রথম দিন ও আজ শনিবার হওয়ায় রাঙ্গামাটির পর্যটন স্পট গুলোতে তীল ধারনের ঠাই নেই। রাঙ্গামাটির হোটেল মোটেল গুলোতেও বুকিং রয়েছে সব সময়। রাঙ্গামাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখে মুগ্ধ পর্যটকরা।
বর্তমান পর্যটন মৌসুম ও ইংরেজী নতুন বছরের দিনে ছুটি থাকায় গত শুক্রবার ও গতকাল শনিবার রাঙ্গামাটির পর্যটনের ঝুলন্ত সেতুসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটে পর্যটকদেও পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠেছিলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর পর্যটন মৌসুমের সময়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমন পিপাসু পর্যটকরা ইটপাথুরের শহর ও যান্ত্রিকতার ক্লান্তি দূর করতে প্রকৃতির রাণী রাঙ্গামাটির অপরুপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে ছুটে আসেন। কিন্তু এ বছর প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকের সংখ্যা কমে গেছে। তবে গতকাল ইংরেজী নতুন বছর ও তার সাথে সরকারী ছূটি থাকায় রাঙ্গামাটি জেলার আশপাশ জেলা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকদের ঢল নামে। এতে রাঙ্গামাটির পর্যটন ঝুলন্ত সেতুসহ তার আশপাশ এলাকায় পর্যটকদের পদচারণায় মূখরিত হয়ে উঠেছে। আবার অনেক পর্যটক ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করে কাপ্তাই হ্রদের নৌ ভ্রমনসহ শুভলং ঝর্না রাজ বন বন বিহার ও চাকমা রাজ বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এছাড়া রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশের পরিচালিত পলওয়েল পার্কেও পর্যটকদের ঢল নামে।
গতকাল রাঙ্গামাটি ঝুলন্ত সেতুতে সরেজমিনের গিয়ে দেখা গেছে, পর্যটন সেতুসহ আশপাশের পর্যকদের পদচারণায় মূখরিত হয়ে উঠেছে। পর্যটন ঝুলন্ত সেতুর ওপাড়ে তাঁেতর সামগ্রি কাপড়-চোপড় ও খাবারের দোকান বসানো হয়েছে। সেখানে কয়েকজন পর্যটদের সাথে কথা বলে তারা জানান, দীর্ঘ দিন ধরে করোনা ভাইরাসের কারণে ঘরবন্দি ছিলেন। তাই নতুন বছরের আত্বীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে রাঙ্গামাটি সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে এসেছেন।
রাঙ্গামাটি পর্যটনের আকর্যনীয় স্পটের মধ্যে রয়েছে,পর্যটনের ঝুলন্ত সেতু, পলওয়েল পার্ক, শুভলং-এর মনোমুগ্ধকর ঝর্ণা, রাজ বন বিহার, বড় গাঙ, জেলা প্রশাসনের বাংলো ইত্যাদি। এছাড়াও রাঙ্গামাটি সাজেকের পর্যটন ও কাপ্তাই উপজেলায় মনোরম দৃশ্য।
পর্যটন ঘাটের ইজারাদার ম্যানেজার রমজান আলী জানান, দীর্ঘ করোনা ভাইরাসের কারণে পর্যটকের সংখ্যা কমে গিয়েছিল। কিন্তু নতুন বছরের প্রথম দিনে ভালো পর্যটক এেেসছে। তাদের ঘাটে থাকা বোট দিয়ে কাপ্তাই হ্রদে নৌ ভ্রমণসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলো দেখছেন।
রাঙ্গামাটি হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মঈণ উদ্দিন সেলিম জানান, রাঙ্গামাটির পর্যটন সেক্টরে তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি। একটি সময় পর্যটন সেক্টরে কিছু না থাকলেও রাঙ্গামাটিতে ব্যক্তিমালিকানাধীন বেশ কিছু ছোট ছোট পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠায় এবং পুলিশের পলওয়েল পার্কের লাভ পয়েন্টে পর্যটকদের টানছে রাঙ্গামাটির দিকে। তবে বর্তমানে পর্যটন ক্ষেত্রে বড় বাধা হচ্ছে বিলাশ বহুল বাস সার্ভিস। দেশের পর্যটনের বেশীরভাগ পর্যটক হচ্ছে ঢাকা, সহ দেশের বিভিন্ন স্থান ও বিদেশী পর্যটক। যারা বিলাশ বহুল বাস ছাড়া তেমন গাড়ী দিয়ে যাতায়ত করে না। পার্বত্য দুই জেলা বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে বিলাশ বহুল বাস সার্ভিস চালু হলেও রাঙ্গামাটিতে একটি সিন্ডিকেটের কারণে চালু হতে পারছে না। এই অবস্থায় রাঙ্গামাটিতে বিলাশ বহুল বাস সার্ভিস চালু হলে রাঙ্গামাটির পর্যটনখাতে প্রতিদিন আরো ২ থেকে ৩ হাজার পর্যটক বেশী আসবে। যার সুফল ভোগ করবে পুরো রাঙ্গামাটির মানুষ।
রাঙ্গামাটি সরকারী পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স এর ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া জানান, বর্তমানে পর্যটনের মৌসুম চলছে আশাকরি রাঙ্গামাটিতে বেড়াতে আসা পর্যটকরা রাঙ্গামাটির সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারবেন। নতুন বছরের প্রথম দিনে পর্যটন ঝুলন্ত সেতুসহ রাঙ্গামাটি অন্যান্য পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদেও প্রচুর সমাগম হয়েছে।
তিনি আরো জানান, গত দুদিন ধরে তার রাঙ্গামাটি সরকারী পর্যটন মোটেলে শতভাগ বুকিং ছিলো। সরকারী স্বাস্থ্যবিধি আমরা কাজ কর্ম পরিচালনা করছি। এছাড়া পর্যটকদের স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে ঝুলন্ত আশপাশে হ্যান্ডসেনিটেশনের ব্যবস্থাসহ মাস্ক পড়তে বিভিন্ন স্থানে সাইন বোর্ড দেয়া হয়েছে।