লামায় ১১ কোটি টাকা ব্যায়ে সড়ক উন্নয়ন কাজে অনিয়মের অভিযোগ, নেই কারোর তদারকি

432

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামাঃ-বান্দরবানের লামায় ১১ কোটি টাকা ব্যায়ে লামা বাজার থেকে দক্ষিণ দিকে ৭শ মিটার রাস্তা উঁচু করণ প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, লামা বাজার চৌরাস্তা মৌড় থেকে দক্ষিনে পৌর বাস টার্মিনাল হয়ে আনসার ভিডিপি অফিস পর্যন্ত সড়কের অংশ সমাস্তরাল করা হচ্ছে। একই সাথে সড়কের ওই অংশে ড্রেনেজ ব্যবস্থাও নিশ্চিত করা হচ্ছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ বান্দরবানের তত্বাবধানে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু কাজের ডিজাইন, প্রাক্কলন কোনটাই সড়ক ও জনপথ বিভাগের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ক এ্যসিস্টেন্ট এর কাছে নেই। চলমান কাজ নিয়ে নানান প্রশ্নের খাতিরে স্থানীয় সাংবাদিকরা কাজের ডিজাইন-প্রাক্কলন দেখতে চাইলে; তা দেখাতে পারছেননা কেউ।
এদিকে পূন: নির্মাণাধিন সড়কের শহর অভ্যান্তরে এর উচ্চতা ও পুরাতন মালামাল পুন: ব্যবহার নিয়ে নানান বিতর্ক দেখা দেয়। সড়কের পুরাতন কার্পেটিং উঠিয়ে এর নীচ থেকে ব্যাচ এর মালামাল তুলে নিয়ে যায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। আবার পূন:রায় ওইসব মালামাল সাব-ব্যাচ -এ ব্যাবহার করছেন তারা।
পুরাতন মালামাল ব্যবহারের এব্যাপারে জানতে চাইলে ঠিকাদেরর লোকেরা জানান, “সিডিউলে নতুন বা পুরাতন লেখা নেই; ব্যবহৃত মাল পুরাতন হলেও গুণগতমান ভালো রয়েছে”। কিন্তু এসব ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিরবতায়, স্থানীয়রা রহস্যোর গন্ধ খুঁজে বেড়াচ্ছেন।
এছাড়া কাজ শুরুর পয়েন্ট গোপাল বাবুর মোড় থেকে টাউন হল পর্যন্ত আগের চেয়ে প্রায় দু’-ফুট উঁচু করা হয়। এর পর বাজার মারমা পাড়ার উত্তর অংশ থেকে সড়কটি ব্যবহার হয়ে যাচ্ছে। অথচ সড়করে উক্তাংশ হয়ে বাস টার্মিনাল-পাবলিক হেল্থ অফিস পর্যন্ত বেশি প্লাবিত হয়।
এব্যাপারে ঠিকাদারের লোকেরা জানান, মারমা পাড়ার দক্ষিণে খালের উপর একটি ব্রিজ থাকায় সড়কের লেভেল আপাতত: স্লোব হচ্ছে’ পরে ঠিক করে দেয়া হবে। এদিকে স্থানীয়রা দাবী করছে, বিগত ৮০’র দশকে নির্মিত ব্রিজটি টেন্ডার দিয়ে সড়কের বর্তমান প্রাক্কলনের সাথে (উচ্চতা) সঙ্গতি রেখে পুন: নির্মাণ দরকার।
এ ব্যাপারে লামা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জাহেদ উদ্দিন বলেন, রাস্তার পুরাতন মামাল (ক্রংক্রিট-বালু) দিয়ে সাব ব্যাচ-মেগাডম করা হচ্ছে। এ নিয়ে কোন সদোত্তর দিতে পারছেন না ঠিকাদারের লোকজন এবং সড়ক ও জন পথ বিভাগের ওয়ার্ক এসিসেন্ট। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কাজটি তদারকির জন্য উপযুক্ত মানুষ নেই। ফলে ঠিকাদার যেনতেন ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
এব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বান্দরবান জেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত নিবার্হী প্রকৌশলী শাহ আরেফিন জানান, অভিযোগের বিষয়ে আমাকে অনেকে জানিয়েছে এবং শুনেছি। আমি দ্রুত এই ব্যাপারে পদক্ষেপ নিচ্ছি।
লামায় বর্ষা মৌসুমে মাঝে মধ্যে টানা কয়েক দিনের বর্ষনের ফলে পৌর শহর প্লাবিত হয়। ওই সময় শহরের অনেকগুলো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পানিতে নিমজ্জিত হয়। পাহাড়ি এই উপজেলায় বন্যার পূর্ব সতর্কবানী সম্পর্কেও কিছু বঝে উঠা সম্ভব হয় না। দেখতে দেখতে শহরের অলিগলি ডুবে যায়। ততক্ষনে ব্যবসায়ীরা মালামাল নিয়ে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে থাকে। কিন্তু শহরের চারদিক নীঁচু হওয়ায় পানি সাঁতরিয়ে নিরাপদ-উঁচুস্থানে যাওয়া সম্ভব হয়ে উঠেনা। এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্য পার্বত্য মন্ত্রীর আহবানে সরকার ১১ কোটি টাকা ব্যায়ে সড়ক উঁচু করণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
উল্লেখ্য, লামা শহরটির উত্তরদিকে শহীদ আবদুল হামিদ সড়ক হয়ে লামা-সুয়ালক সড়ক, সংযুক্ত বমুবিলছড়ি এবং লামা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়-হেব্রণ মিশন বমুবিলছড়ি মাইজপাড়া সংযুক্ত সড়ক। পূর্বদিকে লামামুখ-রুপসিপাড়া ও সংযুক্ত মেরাখোলা-বইল্যারচরগামী সড়ক। দক্ষিণ দিকে উপজেলা বহি:সড়ক, যা দেশের বিভিন্ন জেলার সাথে মূল সংযোগ স্থাপন করে। পশ্চিমে একেঁ বেঁকে মাতামুহুরী নদী পথ। ফলশ্রুতিতে বর্ষায় বন্যা প্লাবিত হলে মুল্যবান মালামাল পরিবহনের সুযোগ থাকেনা।