কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণ শুরু হলে ও সাধারন ব্যবসায়ীরা অখুশি

434

নিজস্ব প্রতিবেদক,রাঙ্গামাটি : দীর্ঘ তিন মাস বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার (১ আগষ্ট) থেকে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ শুরু হয়েছে। রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন গত মধ্যরাত থেকে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর জেলেরা হ্রদের মাছ আহরণ শুরু করেছে। কাপ্তাই হ্রদে ২০ হাজার জেলে মাছ শিকার করে জীবন নির্বাহ করে।

তবে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও এবার খুশি হতে পারেননি মাছ ব্যবসার সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি ছিল এ বছর বৃষ্টি দেরীতে হওয়ায় মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা আরো পনের দিন বাড়ানোর। কিন্তু তাদের এ দাবি গৃহীত না হওয়ায় নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ যথারীতি তিন মাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।

দেশের মিঠা পানির মাছের অন্যতম উৎস কাপ্তাই হ্রদে রুই প্রজাতির মা মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ও হ্রদে মাছের পোনার বৃদ্ধির লক্ষ্যে গত ১ লা মে থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ ও পরিবহন নিষিদ্ধ করেছিল জেলা প্রশাসন। আর ১ আগস্ট নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় মাছ আহরন শুরু হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ কৃত্রিম জলাধার রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদকে ঘিরে আবারো বেড়েছে কর্মচাঞ্চল্য। বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সকাল থেকেই জেলার বিভিন্নস্থান থেকে আড়তদাররা মাছ সংগ্রহ করে ফিশারি ঘাটে আনছেন। তারপর সরকারি রাজস্ব মিটিয়ে ব্যবসায়ীরাও এসব মাছ পাঠিয়ে দিচ্ছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

এদিকে, রাঙ্গামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক উদয়ন বড়ুয়া জানান, এ বছর বৃষ্টি দেরিতে শুরু এবং হ্রদের পানি যথা সময়ে না বাড়ায় বেশিরভাগ মাছ ডিম ছাড়েনি, তাই মাছের প্রজননও কম হয়েছে। মাছ শিকার শুরু হলে প্রচুর ডিমওয়ালা মাছ ধরা পড়বে। কর্তৃপক্ষ মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়ার কারণে ব্যবসায়ী ও বিএফডিসি (সরকারি রাজস্ব) উভয় পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
অন্যদিকে, অন্যান্য ব্যবসায়ীরা জানান, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই শুরু হবে ঈদুল আজহার ছুটি। এসময় সাধারণত মাছের ব্যবসা তেমন একটা হয়না। ঈদ ঘিরে অন্তত ১৫ দিন ব্যবসা মন্দা যায়, তাই ব্যবসায়ীরা লোকসান থেকে বাঁচতেই ঈদের পর মাছের নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়ার দাবি করেছিলেন।

এদিকে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন-বিএফডিসির পক্ষ থেকে মাছ আহরনের সময় কাপ্তাই হ্রদ থেকে ছোট মাছ না ধরার জন্য জেলে ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি, হ্রদে অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষম বৃদ্ধি, মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতকরাসহ হ্রদের প্রাকৃতিক পরিবেশে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির সহায়ক হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিবছরই কাপ্তাই হ্রদে তিন মাস মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দেয় জেলা প্রশাসন। ৭২৫ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত এই কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য শিকার ও বিপণন করে জীবিকা নির্বাহ করে ২২ হাজার জেলে। অবতরণ কেন্দ্রের সাথে জড়িত ৩ শতাধিক শ্রমিক ও এক শতাধিক ব্যবসায়ী।