ফুলে ফুলে রঙ্গিন সাঁজে বান্দরবান

1884

বান্দরবান প্রতিনিধি – হরেক রকমের ফুলে ফুলে সেজেছে পর্যটন শহর বান্দরবান। ভ্রমণকারীদের মনে হতে পারে পাহাড়ি পথে যেন লেগেছে লাল-নীল-হলুদ-সোনালী আগুন। সৌন্দর্যের এ আগুনে যেন কোনো কৃত্রিমতা নেই, এ যে প্রকৃতির দান। অনেকে ভাবতে পারেন লাল বেনারসি পরা নববধূ সজ্জায় কারো জন্য অপেক্ষায় দাঁড়িয়েছে এখানে। সেজে গুজে অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকাটায় যেন তার স্বভাব। বছর জুড়েই কতজনা, কতদূর থেকে ছুটে আসে এখানে। এভাবে দিনের একেক সময় একেক রূপে হাজির হয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা পাহাড়ে ঘেরা রঙিন শহরটি।

ঘুরে দেখা গেছে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানের প্রবেশপথ কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কের হলুদিয়া থেকে জেলা শহর পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে এখন শোভা পাচ্ছে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, অশোক, সোনালু, জারুল, চাপা, কড়ুই’সহ নানা রং-ঘ্রাণের ফুল। শহরের অভ্যন্তরীন সড়কগুলোও হরেক রকমের ফুলে ফুলে সেজেছে।
শহরের থানচি বাসস্ট্যান্ড থেকে দর্শণীয় স্থান চিম্বুক-নীলগিরি সড়কে যাবার দু’পাশেও দেখা মিলবে সারি সারি ফুলের গাছ। সবগুলো গাছি ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে। অন্যরকম সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে এখন চিরচেনা পর্যটনের শহরটি।

ফুলে ফুলে সাঁজানো শহরটি দেখে শুধুমাত্র স্থানীয়রা নন, বেড়াতে আসা পর্যটকরাও মুগ্ধ হচ্ছেন। ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক আলিফ মাহমুদ দুজন বলেন, বর্ষায় পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখতে এসেছি। কিন্তু ফুলে ফুলে সাজানো বান্দরবান দেখে মুগ্ধ হলাম। বিশেষত কৃষ্ণচূড়ার লালরাঙা এবং সোনালু ফুলের হলুদ ছড়ানো সৌন্দর্য সত্যিই অসাধারণ। দূর থেকে কৃষ্ণচূড়া সারি সারি ফুলের গাছগুলো দেখে যে, কেউই ভাববে লাল বেনারসি পরা নববধূ সাজে সজ্জিত হয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে কারো অপেক্ষায়।

সুত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালে তৎকালীন জেলাপ্রশাসক হাফিজুর রহমান ভূঁইয়া ও বান্দরবান বিভাগীয় বন কর্মকর্তা অভনী ভূষণ ঠাকুরের আমলে সড়কের সৌন্দর্য বর্ধণে বান্দরবানের প্রবেশপথ হলুদিয়া থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার সড়কের দু’পাশে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছ লাগান। কয়েক বছরের মধ্যে গাছগুলো বেড়ে উঠে। সৌন্দর্য বর্ধণে লাগানো সারি সারি ফুলের গাছগুলো বসন্ত ও গ্রীষ্মে পাল্টে দেয় শহরের দৃশ্য। স্থানীয় প্রকৃতি প্রেমী নয়ন মাহমুদ বলেন, পর্যটন শহর বান্দরবান’কে ফুলের শহরে সাজানোর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। এ উদ্যোগ ও পরিকল্পনা পাহাড়ি এ জেলার সৌন্দর্যকে অনেকগুণ বেশি প্রস্ফুটিত করেছে।

আবাসিক হোটেল অনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, বছরের এ সময়টাতে পর্যটনের শহরটিকে মনে হয় ফুলের শহর। জেলার প্রবেশপথ হলুদিয়া থেকে চিম্বুক-নীলগিরি সড়কের দু’পাশে এখন শোভা পাচ্ছে লাল, নীল, হলুদ বিভিন্ন ধরণের ফুল। শহরের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর পাশে লাগানো গাছগুলো ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে। সড়কগুলো ফাঁকা স্থানগুলোতে সৌন্দর্য বর্ধণে বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ লাগানো দরকার। এতে সড়কের স্থায়িত্ব রক্ষা পায়, দূর্ঘটনা রোধ হয় ও সৌন্দর্য অনেকাংশে বেড়ে যায়।

এ বিষয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বিপুল কৃষ্ণ দাস বলেন, বনায়ন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সড়কের দু’পাশে নতুন করে গাছ লাগানোর কোনো বরাদ্দ নেই। তবে সড়কের সৌন্দর্য বর্ধণে বৃষ্টির সময় সড়কের দুপাশের খালি জায়গা গুলোতে নিজস্ব উদ্যোগে কিছু ফুলের গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে।