নিজস্ব প্রতিবেদক – পার্বত্য চট্টগ্রামে আওয়ামীলীগের রাজনীতিকে ধংস করতে জেএসএস অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীদের হত্যা করছে বলে অভিযোগ করেছে রাঙ্গামাটি জেলা যুবলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
রাজস্থলীতে ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ক্যহ্লাচিং মারমাকে হত্যার প্রতিবাদে সোমবার সন্ধ্যায় রাঙ্গামাটি জেলা যুবলীগের উদ্যোগে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।
রাঙ্গামাটি জেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক নূর মোহাম্মদ কাজলের সঞ্চালনায় এবং জেলা যুবলীগ সভাপতি ও পৌরসভা মেয়র মোঃ আকবর হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদুজ্জামান মহসিন রোমান, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ সম্পাদক মুজিবুর রহমান দীপু, কৃষকলীগের সাধারন সম্পাদক উদয় শংকর চাকমা রাঙ্গামাটি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ আব্দুল জব্বার সুজন।
সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন, রাঙ্গামাটি জেলা শ্রমীকলীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ শামসুল আলম, জেলা যুবলীগ সহ-সভাপতি মোঃ শহীদুল আলম স্বপন, জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ শাহাজাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক করিম, জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি রোকেয়া আক্তার প্রমূখ।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা অনেক রক্ত দিয়েছে, আর না, আমরা জে এস এসের অনেক অন্যায় সহ্য করেছি, এখন আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। অনতিবিলম্বে যদি হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনা না হয় তাহলে কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে বলে হুশিয়ারী উচ্চারন করা হয়।
এর আগে সোমবার (২০ মে) সন্ধ্যায় যুবলীগের নেতৃত্বে বনরূপা থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয় ঘুরে বনরূপা আলিফ মার্কেট চত্বরে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তারা হত্যাকান্ডের জন্য জেএসএসকে দায়ী করে অবিলম্বে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার আহবান জানানোা হয়।
উল্লেখ্য, রাঙ্গামাটি জেলা ১৯ মে রবিবার দিবাগত রাতে রাজস্থলীতে বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের যুবলীগের সভাপতি ক্যহ্লাচিং মারমাকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
নিহত ক্যাহ্লাচিং মারমার বড় ছেলে সিংমংউ মারমা (১৮) জানান, রবিবার রাতে ১১/১২জন অস্ত্র ধারী সন্ত্রাসীরা আমার বাবাকে ডেকে ঘর থেকে বের করার চেষ্টা করেন। আমার বাবা বের না হওয়ায় আমাদের রান্না ঘরের পিছন থেকে একটি ফাঁকা গুলি করে দরজা ভেঙ্গে আমাদের বসত ঘরে ঢুকে প্রথমে আমার বাবাকে হাত বেঁধে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আমার বাবা তাদের সাথে যেতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং হত্যা করবে এটা বুঝতে পেরে আমার বাবা তাদের কাছে জান ভিক্ষা চেয়েও পার পাননি, অনেক ধস্তাধস্তির পর এক পর্যায়ে আমার বাবার বুকে একটি গুলি করে হত্যা নিশ্চিত করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।
যুবলীগ নেতা হত্যার ঘটনার জন্য স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতারা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (সন্তু লারমা) গ্রুপকে দায়ী করেছেন। বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ঞোমং মারমা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পার্বত্য এলাকা থেকে আওয়ামীলীগ নিধনের করার লক্ষ্যে জনসংহতি সমিতির সদস্যরা ত্যাগী আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে হত্যার হুমকি দিচ্ছে এবং হত্যা করে চলছে। বাঙ্গালহালিয়া নাইক্যছড়া ও গবছড়া এলাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে দ্রুত গতিতে সেনা ক্যাম্প স্থাপনের দাবী জানান তিনি।
চন্দ্রঘোনা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আশরাফ উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পাহাড়ে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে।
তিনি বলেন, যুবলীগের নেতার লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে চন্দ্রঘোনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।
এদিকে নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ মুছা মাতব্বর, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, সদস্য অংসুইপ্রু চৌধুরী, রাঙ্গামাটি পৌরসভা মেয়র ও জেলা যুবলীগের সভাপতি মোঃ আকবর হোসেন চৌধুরী, রাজস্থলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উবাচ মারমা, কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অংসুইছাইন চৌধুরী, রাজস্থলী উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি পুলক বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক পুচিংমং মারমা, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নুর মোহাম্মদ কাজল, বাঙ্গালহালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ঞোমং মারমাসহ জেলা, উপজেলা আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। যুবলীগ নেতা হত্যার ঘটনায় রাঙ্গামাটিতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।