ডেস্ক রিপোর্ট, পাহাড়ের আলো ডট কম- বৌদ্ধ পুর্ণিমা উপলক্ষ্যে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘গৌতম বুদ্ধের যে বাণী সেটা মানুষের শান্তি জন্য। আর সকল ধর্মের মর্মবাণীই হচ্ছে শান্তি। আর আমরা সেটাই বিশ্বাস করি। আর বাংলাদেশে আমরা সাম্প্রদায়িত সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করি, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। তিনি বলেন, ‘এটা কিন্তু বাংলাদেশে খুব সুন্দরভাবেই পালন করা হয়। যে ধর্মেরই উৎসব হোক সকলে মিলেই সেটা উদযাপন করে।’
সকল ধর্মের লোকজনকে ধর্ম-কর্ম পালনের সমান সুযোগ প্রদানে বাংলাদেশ একটি দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সকল সম্প্রদায়ের সহাবস্থানের ফলে কেউ আর নিজেদের অবহেলার শিকার ভাবতে পারে না ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে কোন সম্প্রদায়ই নিজেকে কখনও অবহেলিত যেন মনে না করে, সেদিকে আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখি। আর সেদিক থেকে আমি বলবো, বাংলাদেশ আজ সমগ্র বিশ্বেই একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সমর্থ হয়েছে।’
বৌদ্ধ পুুর্ণিমা উদযাপন উপলক্ষ্যে সারাদেশ থেকে আগত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, বৌদ্ধ ভিক্ষু, সংঘ সদস্য, সংঘ প্রধানদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে ২০ মে সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকলের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি বাংলাদেশের মাটিতে যারা যারা বসবাস করেন সবাই যার যার ধর্ম সম্মানের সাথে, নিষ্ঠার সাথে শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে পারবে, সেটাই আমরা চাই এবং এই সহনশীলতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধ সকলের মাঝে থাকবে, এটাই আমাদের লক্ষ্য।
সরকার প্রধান বলেন, ‘রাষ্ট্রের দায়িত্ব আমি মনে করি সকল ধর্ম সকলে যেন শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্মানের সাথে স্বাধীনভাবে পালন করতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে এবং সেটাই হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা বা অসাম্প্রদায়িক চেতনা।’
শেখ হাসিনা এ সময় সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদকে একটি বৈশ্বিক সমস্যা আখ্যায়িত করে এ থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত রেখে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলাই তাঁর সরকারের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্য হলো সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এখন সমগ্র বিশ্বব্যাপীই একটা সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। আসলে জঙ্গিবাদের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তারা জঙ্গি। তাদের কোন ধর্মও নাই, কোন দেশ নাই, তাদের কোন সীমানা নাই। এটা হলো বাস্তবতা। কাজেই সেই জায়গা থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত রেখে আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়নটা করতে চাই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি নিজে আমার নিজের ধর্ম পালন করি তাই অন্য ধর্মের প্রতি আামি সম্মান জানাই। আর কোনটা ঠিক কোনটা ভুল সেটার সিদ্ধান্ততো আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নেবেন। সে সিদ্ধান্তের দায়িত্ব তিনি কিন্তু কোন মানুষকে দেন নাই। তিনি এ সম্পর্কে কোনরূপ মন্তব্য করার ক্ষমতা তিনি মানুষকে প্রদান করেন নাই।’
বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত করায় তাঁর সরকারের লক্ষ্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে এখনও ২১ ভাগ জনগণ দরিদ্রসীমায় এবং ১১ ভাগ হতদরিদ্র রয়ে গেছে। আমরা চাই, বাংলাদেশ সম্পূর্ণ হতদরিদ্র মুক্ত হবে। আর বাংলাদেশকে আমরা দারিদ্র মুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। সেই লক্ষ্য নিয়ে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের দেশ স্বাধীন করে যে সংবিধান দিয়ে গেছেন সেখানেও এই কথাটাই বলে গেছেন। সকলের ধর্ম পালনের স্বাধীনতা তিনিই নিশ্চিত করে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার পদাংক অনুসরণ করেই আমরা দেশ গঠনের কাজে এগিয়ে চলছি। যার ফলে বাংলাদেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে, ইনশাল্লাহ এগিয়ে যাবে।’
এ সময় ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত সময়টিকে মুজিব বর্ষ হিসেবে ঘোষনায় সরকারের কর্মসূচি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন,‘ ২০২০ সালে আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি পালন করবো। আর তখন দেশের কোন দরিদ্র থাকবে না।’
এসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিং এমপি, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তণ প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার এমপি, বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৈশ হ্লা, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী মারমা, বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি শুদ্ধানন্দ মহাথের, আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ ধর্মমিত্র মহাথের, শাক্যমুনি বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ প্রজ্ঞানন্দ মহাথের, বাংলাদেশ বুদ্ধিষ্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শ্রীমৎ সুনন্দ প্রিয় ভিক্ষু, বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সিনিয়র সহসভাপতি শ্রীমৎ বুদ্ধিপ্রিয় মহাথের, ঢাকা বৌদ্ধ সমিতির সহ-সভাপতি কর্ণেল সুমন বড়–য়া, সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়–য়া, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–য়া, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।