কঠোর নিরাপত্তায় তিন পার্বত্য জেলায় বৈশাখী পূর্ণিমা উদযাপিত

448

নিজস্ব প্রতিবেদক – কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান তিন পার্বত্য জেলায় যথাযথ ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে পালিত হয়েছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বৈশাখী পূর্ণিমা। গতকাল শনিবার (১৮ মে) সকালে বৈশাখি পূর্ণিমা উপলক্ষে বিশ্ব শান্তি কামনায় শহরে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন কার্যালয় চত্বর থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাঙ্গামাটি রাজ বন বিহার প্রাঙ্গনে গিয়ে শেষ হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ বৌদ্ধ পতাকা হাতে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহন করেন। র‌্যালীর নেতৃত্ব দেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা।

পরে রাজবন বিহার মাঠে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হয়। এছাড়া শহরের মৈত্রী বিহারে ধর্মীয় সভার আয়োজন করা হয়। এতে ধর্ম দেশনা দেন মৈত্রী বিহার অধ্যক্ষ পূর্ণজ্যোতি মহাথোরো, ত্রিপিটক বিশারদ পঞ্চদীপ মহাথেরো।
বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধের এই পূর্ণিমায় জন্ম লাভ, বুদ্ধত্ব লাভ এবং মহাপরিনির্বাণ লাভ করায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে এইদিনটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

এদিকে, বুদ্ধ পুর্ণিমায় জঙ্গী হামলার হুমকিতে রাঙ্গামাটি রাজ বনবিহার, মৈত্রী বিহার, আনন্দ বিহার, মনোঘর বুদ্ধ বিহার, ধর্মাঙ্কুর বৌদ্ধ বিহারসহ বিভিন্ন বৌদ্ধ মন্দিরে আইন-শৃংখলা বাহিনী ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। এতে মন্দিরে প্রবেশের আগে আগত পূনার্থীদের লোকজনদের ব্যাগ তল্লাশী করে প্রবেশ করানো হয়।

বান্দরবান সংবাদদাতা জানান, জন্ম, মৃত্যু এবং বুদ্ধত্ব লাভের জন্য নানা আয়োজনে বান্দরবানে বৈশাখি পূর্ণিমা পালন করছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। বৈশাখী পূর্ণিমা উপলক্ষে বিশ্ব শান্তি কামনায় শহরে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করেছে বৌদ্ধধর্মালম্বীরা। আর কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে বান্দরবানে পালিত হচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের এই বৈশাখি পূর্ণিমা।

শনিবার সকালে এই উপলক্ষে বান্দরবান রাজবাড়ি থেকে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উজানিপাড়া রাজগুরু মহা বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গনে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ বিভিন্ন ধরনের পাত্রে চন্দন জল, ফুল, জাম পাতা এবং বৃক্ষ সজ্জিত টাকা নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন ।
শোভাযাত্রা শেষে উজানিপাড়া রাজগুরু মহা বৌদ্ধ বিহারে সকলে সমবেত প্রার্থনায় মিলিত হয়। এ সময় ধর্মীয় দেশনা দেন উজানী পাড়া বিহারের বিহারাধ্যক্ষ ড. সুওয়াইন্না মহাথের।

এই সময় অনেকে পঞ্চশীল ও অষ্টশীল গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বোমাং সার্কেল চীফ রাজা বোমাংগ্রী উ চ প্রু চৌধুরী, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মংক্যচিং চৌধুরীসহ বৌদ্ধ ধর্মালম্বী দায়ক দায়িকারা।
পরে নিজেদের পুণ্য লাভের জন্য ভগবান বুদ্ধের উদ্দেশ্য প্রার্থনা করেন। প্রার্থনা শেষে বিহারের বোধি বৃক্ষে (অশ্বথ বৃক্ষ), চন্দন জল (পবিত্র জল) ঢালেন।

এদিকে যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে বান্দরবানের বৌদ্ধ বিহারগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে, মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।

খাগড়াছড়ি সংবাদদাতা জানান, নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যদিয়ে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে খাগড়াছড়িতে নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে পালিত হচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের পবিত্রতম উৎসব ‘ শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা’। জেলা সদরসহ খাগড়াছড়ির ৯টি উপজেলায় বৌদ্ধ বিহারগুলোতে প্রস্তুতি নিয়েছে বৌদ্ধ ধর্মীলম্বীরা।

শনিবার (১৮ মে) সকাল থেকে খাগড়াছড়ির বৌদ্ধ বিহারগুলোর সামনে ছিল সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের নিরাপত্তা বলয়। বৌদ্ধ বিহারগুলােতে পুণ্যার্থীরা পুজা দেওয়ার উদ্দ্যেশ্য সমবেত হয়।দেশ ,জাতি ও মানুষের কল্যাণ কামনায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে। এছাড়া ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী ভিক্ষু সংঘকে ভক্তরা পিন্ড দান করেন। এসময় বৌদ্ধ উপাসক উপাসিকরা পঞ্চশীল ও অষ্টশীল গ্রহণ করে। বৌদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে ধর্মীয় আলােচনা সভার আয়ােজন করা হয়েছে।

বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারক গৌতম বুদ্ধের জন্ম, মৃত্যু ও বুদ্ধত্ব লাভের স্মৃতিবিজড়িত তিথি হিসেবে বুদ্ধ পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ উপলক্ষে সকাল থেকে বিহারে বিহারে ফুল পূজা, অষ্ট পরিস্কার দান, বুদ্ধ মূর্তি দান, শীলগ্রহণসহ নানা ধর্মীয় আচার রীতি পালন করছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। বিশ^ শান্তি ও মঙ্গল কামনায় বিশেষ প্রার্থনা ও সন্ধ্যায় আকাশ প্রদীপ প্রজ্জলনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বুদ্ধ পূর্ণিমার দিনব্যাপী আনুষ্ঠানিকতা।

বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন কোন প্রকার নাশকতা ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সারাদেশের ন্যায় খাগড়াছড়ির প্রশাসনও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। খাগড়াছড়ির প্রতিটি বৌদ্ধ বিহারে পুলিশ ও আনসার সদস্যের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরা টহলে রয়েছে।

জেলা শহরের আর্য বন বিহার পরিচালনা কমিটির কর্মকর্তা উচিৎময় চাকমা বলেন, কল্যাণপুর মৈত্রী বৌদ্ধ বিহারের সাধারণ সম্পাদক জীতেন বড়–য়া বলেন, সরকার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের উৎসব নিরাপদে ও শঙ্কামুক্ত করতে যে উদ্যোগ নিয়েছে এতে আমরা খুশি।

খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমএম সালাহউদ্দিন বলেন, খাগড়াছড়ির ৯ উপজেলায় ৪ শতাধিক বৌদ্ধ বিহারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নিয়মিত টহলের পাশাপাশি অতিরিক্ত ফোর্স ও তল্লাশী চৌকি বসানো হয়েছে। মাঠপর্যায়ে গোয়ান্দা নজরদারীও রয়েছে।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ¤্রাসাথোয়াই মারমা জানান, ধর্মীয় আচার অনুযায়ী দিনব্যাপি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সকাল থেকে বৌদ্ধ পুণ্যার্থীরা মন্দিরে এসে পুজা দিচ্ছেন। এছাড়া বিশ্ব শান্তি ও মঙ্গল কামনায় বিকেলে জেলাশহরের শতবর্ষী ‘য়ংড বৌদ্ধ বিহার’ থেকে বর্ণিল শোভাযাত্রা বের করা হব। এবং দিনব্যাপি এই আয়োজনে নিরাপত্তা বাহিনী নিয়েও সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।

জেলা শহরে ৪ শতাধিক অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া জেলার শতাধিক বিহার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তোষ করেছেন পুণ্যার্থীরা। সন্ধ্যায় প্রতিটি বৌদ্ধ বিহারে প্রজ্জলিত হবে অসংখ্য মাঙ্গলিক প্রদীপ। উড়ানো হবে আকাশ প্রদীপ বা ফানুস বাতি।