সংরক্ষিত আসনের এমপি বাসন্তী চাকমা কর্তৃক সংসদে পার্বত্য বাঙ্গালি ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বক্তব্য প্রদানের প্রতিবাদে যৌথ সংবাদ সম্মেলন

750

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি- মহান জাতীয় সংসদে পার্বত্য বাঙালি ও দেশপ্রেশিক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অসত্য বক্তব্য প্রদান ও অপপ্রচারের প্রতিবাদ, সেচ্ছায় ক্ষমা চাওয়া ও বাসন্তী চাকমা কে সংসদ সদস্য পদ থেকে অপসারণ করার দাবীতে শনিবার সকালে খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেছে পার্বত্য অধিকার ফোরাম ও পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ।

সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয় গত ২৬ শে ফেব্রুয়ারী ২০১৯ ইং রোজ মঙ্গলবার তিন পার্বত্য জেলা নিয়ে গঠিত সংরক্ষিত মহিলা আসনে আওয়ামীলীগ হতে মনোনয়ন প্রাপ্ত সংসদ সদস্য হলেও ‘বাসন্তী চাকমা’ মহান জাতীয় সংসদ অধিবেশনে তার বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস কারী ৫১% শতাংশ বাঙালি ও পার্বত্য চট্টগ্রামের অখন্ডতা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনীর নামে অপবাদ মূলক কথিত অসত্য,বানোয়াট বক্তব্য প্রদান করেছেন। তার প্রদানকৃত বক্তব্যের সম্পূর্ন অংশ ই ছিলো উগ্র সাম্প্রদায়িক। সে তার বক্তব্যের শুরুতেই পাহাড়ের বসবাস কারী বাঙালিদের সেটেলার ও বহিরাগত আখ্যা দিয়ে বলেছেন যে ১৯৯৬ সালে নাকি বাঙালি ও সেনাবাহিনী ‘আল্লাহু আকবর’ বলে তার চোখের সামনে অনেক উপজাতি কে জবাই করেছেন। তার বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন , ১৯৯৬ সালে ১ মে এই ধরনের কোন ঘটনা ই ঘটেনি, অথচ বাসন্তি চাকমা এমপি মহান সংসদে দাড়িয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সম্পূর্ন ই মিথ্যা এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়।

নেতৃবৃন্দ বলেন, বাসন্তি চাকমা এমপি সংসদে আরো অনেক বক্তব্য দিয়েছেন, তার এসব বক্তব্যে একথা প্রমানীত করে যে, স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের লেভেল জড়িয়ে ঘাপটি মেরে ছিলো- রাষ্ট্রদ্রোহী , বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠির এজেন্ট , যখন ই সুযোগ পেয়েছেন নিজের স্বরুপে ফিরেছেন। তার বক্তব্যে সে একটি বারের জন্য বলেনী জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অমান্য করে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যোদ্ধ ঘোষনাকারী আঞ্চলিক দলের সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল কথিত শান্তিবাহিনীর সৃষ্টি হয়েছিলো। যার প্রেক্ষিতে তখন জেএসএস সন্তু ও প্রীতি গ্রুপের দ্বন্ধের জেরে কিছু উপজাতীয় পরিবার কে বাধ্য করা হয়েছিলো সে দিন ভারতে পালিয়ে যেতে হয়েছে তা বাসন্তি চাকমা এমপি উল্লেখ করেননি।

নেতৃবৃন্দ বলেন, বাসন্তী চাকমা এমপি তার বক্তব্যে স্বীকার করেছেন যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিবাহিনীর মধ্যে বিভেদের কারনে সন্তু গ্রুপ ও প্রীতি গ্রুপ নামে দুইটি গ্রুপের সৃষ্টি হয়েছিলো। ঐ দুই গ্রুপের অন্তর্কোন্দলের কারনে বহু পাহাড়িকে প্রাণ দিতে হয়েছিলো। কিন্তু শান্তিবাহিনীর ঐ সন্ত্রাসীরা পার্বত্য চট্টগ্রামে যে হাজার হাজার বাংগালী আর নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের হত্যা করেছিলো সেই বিষয়টি তিনি সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে গিয়েছেন।
সাংবাদিক সম্মেলন আরো বলা হয় যে তিন পার্বত্য জেলার সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি হয়েও বাসন্তী চাকমা এই অঞ্চলের নারীদের উন্নয়ন সম্পর্কিত কোন কথা না বলে শান্তিবাহিনীর গুণগান আর সেনাবাহিনী ও বাংগালীদের সম্পর্কে বিষোদগার করে গিয়েছেন, যা ছিলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। অথচ, মিতালী চাকমা, রিমি চাকমা, জোসনা চাকমা, শুবলপুরি চাকমা, দীপা ত্রিপুরা, আয়না চাকমা, বালাতি ত্রিপুরা, বিশাখা চাকমার মত হাজার হাজার নির্যাতিতা ও খুন হওয়া নারীদেরকে নিয়ে একটি কথাও বলেননি বলে উল্ল্খে করেন নেতৃবৃন্দ।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাসন্তী চাকমা কে উগ্র সাম্প্রদায়িক বক্তব্য প্রদান, ধর্মীয় অনুমতি তে আঘাত করে কথা বলা,সাংবিধান ও সংসদ সদস্যের শপথ পরিপন্থি ভাবে বাংলাদেশের নাগরিকদের ‘বহিরাগত’,সেটেলার আখ্যা দেওয়া,পার্বত্য চট্টগ্রামের অখন্ডতা রক্ষায় নিয়োজিত দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনীর নামে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া,১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের প্রতি অসম্মান জানানো সহ উপজাতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের সুরে কথা বলে তিন পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের মাঝে উগ্র-সাম্প্রদায়িক ও জাতীগত বিভেদ উস্কে দেওয়ার এই বক্তব্য তাকে প্রত্যাহার করে নিয়ে তাকে সেচ্চায় সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করার আহবান জানানো হয়।
উগ্র সাম্প্রদায়িক দলের এজেন্ট ও পাহাড়ের সম্প্রীতি বিনষ্টকারী অপশক্তি কে প্রতিরোধ করতে পাহাড়ের সকল সম্প্রীতি প্রিয় ও সচেতন নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ করে তীব্র প্রতিরোধ ও আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানানো হয়।
সাংবাদিক সম্মেলনে পার্বত্য অধিকার ফোরামের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি মো: মাঈন উদ্দীনের সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন,পার্বত্য অধিকার ফোরামের খাগড়াছাড়ি জেলা শাখার আহবায়ক এস এম হেলাল,পার্বত্য অধিকার ফোরামের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক মোক্তাদির হোসেন, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মো: সাহাবউদ্দীন,কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক মো: রবিউল হোসেন, পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি মো: জাহিদুল ইসলাম, পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদদের খাগছড়ি জেলা শাখার সভাপতি লোকমান হোসেন, পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের জেলা শাখার জৈষ্ঠ্য সহ সভাপতি বাবু জুয়েল দেবনাথ। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-পার্বত্য অধিকার ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ সমন্বয়ক আহাম্মদ আলী,সাদ্দাম হোসেন,আলামিন হোসেন, কেন্দ্রীয় সদস্য শাহীন আলম, ইব্রাহিম খলিল, খোরশেদ আলম, সোহেল রানা,জাহাঙ্গীর আলাম, পার্বত্য অধিকার ফোরামের মাটিরাঙা উপজেলা সমন্বয়ক ওসমান চিশতি, রামগড় উপজেলা সমন্বয়ক মো: ইউনুছ মিয়া। পার্বত্য নারী অধিকার ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা আহবায়ক সালমা আহম্মেদ মৌ , ভূয়াছড়ি ইউপি শাখা সভাপতি সালাম সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।