বৈসাবি ঘিরে চাঙ্গা হচ্ছে পাহাড়ের অর্থনীতি

1075

পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবি (বৈসুক, সাংগ্রাইং, বিজু) ঘিরে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক জীবন। পার্বত্য তিন জেলার সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় বাংলা নববর্ষকে ঘিরে এবার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সামাজিক উৎসব বৈসাবি উপলক্ষে এ জেলাগুলোতে জমে উঠেছে বিকিকিনি। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত মেলায় দর্শনার্থীদের পাশাপাশি ভিড় জমছে পাহাড়ি ক্রেতাদের।

স্থানীয় ১১টি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি দেশের নানাস্থান থেকে ভ্রমণে আসা পর্যটকরাও প্রচুর কেনাকাটা করছেন। ফলে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে পাহাড়ের জনগোষ্ঠী। বৈসাবির যতদিন ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে বিকিকিনিও।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বৈসাবি ও বৈশাখী উৎসব ঘিরে রাঙ্গামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলায় ধীরে ধীরে জমছে কেনাকাটা। এতে চাঙ্গা হয়ে উঠছে পাহাড়ের অর্থনীতি। উৎসবটি সামনে রেখে স্থানীয় বাজারে এরই মধ্যে কেনাকাটা শুরু হয়েছে। তবে পুরোপুরি কেনাকাটা জমবে ৯ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত। উৎসবে পাহাড়িদের ঘরে ঘরে সবচেয়ে বেশি কদর থাকে পাজন ও তরমুজ পরিবেশন নিয়ে। পাজন হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সবজি মিশিয়ে রান্না করা সুস্বাদু তরকারি। আগেভাগে সংগ্রহ নিয়ে জমে উঠেছে সবজি এবং তরমুজ কেনাকাটা। এসব জিনিসের দামও বাড়ছে লাফিয়ে। কাপড় ও মনোহারি জিনিসের কেনাকাটা শুরু হয়েছে স্থানীয় বাজারে। দোকানিরা তুলে রেখেছেন বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাকসামগ্রী। নারী-শিশুদের কাপড় সেলাই নিয়ে ব্যস্ত দর্জিরা। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত মেলায় দর্শনার্থীর পাশাপাশি ভিড় জমছে ক্রেতাদের।

রাঙ্গামাটির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাহাড়িদের শ্রমজীবী, কৃষক, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী থেকে শুরু করে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের ভিড় জমছে ধীরে ধীরে। উৎসব আয়োজন ও আপ্যায়ন প্রস্তুতি নিয়ে গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা শুরু করেছেন, গৃহকর্তা ও গৃহকর্ত্রীরা। তরুণ-তরুণী, শিশু-কিশোররা কিনছেন জামা-কাপড় ও মনোহারি সামগ্রী। মেলা এবং স্টেশনারি, কাপড় ও মনোহারি দোকানে কেনাকাটা শুরু হয় বিকালের পর।

প্রতি বছর চৈত্রসংক্রান্তির বাংলাবর্ষ বিদায় এবং বরণ উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাস করা পাহাড়ি সম্প্রদায়গুলো তিন দিনব্যাপী উৎসবের আয়োজন করে। উৎসবটি পালিত হয় ২৯ থেকে ৩০ চৈত্র ও পহেলা বৈশাখ বা ১২, ১৩ ও ১৪ এপ্রিল।

এ উৎসবের মধ্যে আকর্ষণীয় মূল খাবারটি হচ্ছে পাজন। এটিকে চাকমারা ঘণ্টও বলে। এ পাজনটির রান্না হয় কমপক্ষে ২১ পদের সবজি মিশিয়ে। তবে মূল সবজিটি হল বাঁশজাতীয় ঔষধি সবজি। এটির নাম চাকমা ভাষায় তারা।

উৎসবে আপ্যায়নের জন্য পাজনটি তৈরি করতে কেনাকাটার ধুম চলে। পাশাপাশি গৃহস্থালির প্রয়োজনে কেনাকাটা করতে হয় থালা, বাটি, কাপ, পিরিচ, চামচসহ ইত্যাদি জিনিসপত্র এবং নানা ধরনের খাবার ও মশলা সামগ্রী। এছাড়া পরিবারের সবার জন্য নতুন জামা-কাপড়সহ বিশেষ করে তরুণীরা কেনাকাটা করে মনোহারি সামগ্রী ও অলঙ্কার।

রাঙ্গামাটি শহরের বনরূপা এলাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, সবজি, মুদি ও মশলার বাজারে এরই মধ্যে কেনাকাটার ধুম পড়েছে। পাজন তৈরির জন্য কেনাকাটা চলছে সবজির বাজারে। সবজি বিক্রি করতে আসা ফুলমতি চাকমা বলেন, কয়েক দিনে প্রতিদিন গড়ে প্রায় দুই হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছেন তিনি।