শহরের শেষ বাড়িটায়……

441

শহর রাঙামাটির সীমায় পা রাখার ঠিক আগ মুহুর্তে সাপছড়ি নামক স্থানে আপনাকে বীরদর্পে রাইফেল হাতে স্বাগত জানাবে জল পাহাড়ের এই শহরকে শত্রু মুক্ত করতে প্রাণ দেয়া ফরিদপুরের ছেলে ল্যান্সনায়েক মুন্সী আব্দুর রব।বীরশ্রেষ্ট ল্যান্সনায়েক মুন্সী আব্দুর রব।হুম শহরের ঠিক মাথাতেই রাস্তার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বীরশ্রেষ্ট মুন্সী আব্দুর রবের স্মৃতি এবং সম্মানে নির্মিত “আরক্ষী,a solder at outpost”।
মাথার উপর ছুঁই ছুঁই মস্ত আকাশ চারপাশে উচু সব পাহাড়ে ঘেরা চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সংযোগ সড়কের ঠিক মাঝে অবস্থান করা এই স্থাপনা আপনাকে শ্রদ্ধা ভালোবাসা মুগদ্ধতায় ডুবাবেই।রাস্তার ঠিক ডানপাশে শিল্পী সামিউর রহমান নয়নের করা আদিবাসী ম্যুরাল চিত্র।রঙ বেরংয়ের টাইলস ব্যবহার করে জন জীবনের সামগ্রিক জীবনযাপন ফুটিয়ে তোলার প্রচেষ্টা।সামগ্রিক জীবনযাপনের ধারনার সাথে সাথে জেনে নেয়া যাবে বাংলাদেশের ৪৪টি আদিবাসী জনগোষ্টীর নাম।যার ১১টি ভিন্ন ভাষাভাষী জাতি গোষ্টীর বাস রয়েছে এই পাহাড়েই।শৈল্পীক স্বার্থক উপস্থাপনা।
ঠিক পাশেই রয়েছে শহর রাঙামাটির তিন বীরের ম্যুরাল চিত্র।মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করা রাঙ্গামাটির তিনজন বীর সন্তান।শহীদ অর্জুন চন্দ্র দে,শহীদ খগেন্দ্র লাল চাকমার ম্যুরাল চিত্র এবং সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।পাশের ছোট্ট কফি হাউসে জিড়িয়ে নিতে পারেন,জমজমাট আড্ডায়।
শহরের প্রবেশদ্বারেই ঐতিহ্য ইতিহাসের স্বরুপ আঁকা এই শহরের বাঁকে বাঁকে ছোয়া ভালোবাসা।মুগ্ধতা নিয়ে ছুটতে ছুটতে শহরের শেষ চেকপোষ্ট মানিকছড়ি ক্রস করে জনজীবন আর প্রকৃতিতে মেতে থাকতে থাকতেই পৌঁছে যাবেন রাঙামাটি সেনানিবাসের গোল চত্বরে।সামনেই মাথা উঁচু করে মর্ধ্যাঙ্গুলী উচিয়ে দেশ মাতৃকার স্বাধীনতার নির্দেশ আকাশে ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সুউচ্চ ভাস্কর্য্য।চারপাশে নৌকার মঞ্চ উপরে বাঙ্গালীর স্বাধীনতার ইতিহাসের ম্যুরালচিত্র কাহিনী সংক্ষেপে।আছে ৫২য়ের ভাষা আন্দোলনের চিত্র,৬৬য়ের ৬ দফা আন্দোলন,৭০য়ের নির্বাচন,৭১য়ের ২৫ মার্চের কালরাত্রি, ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ,৭১য়ের ১৬ ডিসেম্বর পাক বাহিনীর আত্নসমর্পনের দলিলে স্বাক্ষরের ঐতিহাসিক চিত্র,৭২য়ের ১০ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন চিত্র এবং শেষমেশ বেঈমান বাঙ্গালীর পরিচয় এবং সাধারন বাঙ্গালীর কালরাত্রি ১৫ আগষ্টের চিত্র।
স্বাধীন বাংলার বাঙ্গালীর সামগ্রিক চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই স্থাপনায়।চারপাশে জুড়ে পানির ফোয়ারার ব্যবস্থা।যদিও পানির ব্যবস্থা থাকে উৎসব ক্ষেত্রবিশেষ।পুরো চিত্রটা এমন নদীমাতৃক বাংলায় নৌকার বেষ্টনির উপর দাঁড়িয়ে আছে বাংলা ও বাংগালীর ইতিহাস আর তার উপরে দাঁড়িয়ে বাংলার স্বাধীনতার ভিত্তির জনক নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান।সামগ্রিক চিত্র আর ভাবার্থ বুঝতে দেখতে হবে একটু দূরে দাঁড়িয়ে।
পিছনেও রয়েছে নয়ানাভিরাম পানির ফোয়ারা।এ পাড়ায় সন্ধ্যা বিকেলটা বেশ জমজমাট থাকে ইদানীং।
ইতিহাস ঐতিহ্যের স্বাদ নিতে নিতে একটু পিছিয়ে এলেই চোখে পড়বে মস্ত এক গাছ জুড়ে তিনতালা কাঠের বাড়ি।সন্ধ্যা নেমে এসেছে ততক্ষনে বাড়ী আর চারপাশ জুড়ে জ্বলছে বৈদ্যুতিক রঙ বেরঙের জোনাক।সীমার ভেতরে প্রবেশ করলেই নজর কাড়বে বাকি ঘরগুলোও।ছোট্ট কামরার মত ছন ছাউনির ঘর আছে মাচাং ঘরও।আছে খোলা আকশের নিচেও গোল কাঠের টেবিল।সবকটায় সন্ধ্যে বাতি হয়ে জ্বলছে বৈদ্যুতিক জোনাক বাতি।মাটির গোল চৌবাচ্চায় জল পাতাবাহারের ফাঁকে জ্বলছে আলো।আর সাথে হালকা সুরের গান।মোহাচ্ছন্ন পরিবেশ।
পুরো স্থাপনটা মূলত রাঙামাটি সেনানিবাসের নিজ উদ্যেগে করা রেস্তোরা।মেনুতে থাকছে কেবল কাবাবের রকমফের আর নিজেদের করা ফ্রেশ ফ্রেশ গরমাগরম মিষ্টি।হিম শীতে একসাথেই টপাটপ মুখে পুড়ে নেয়া যায় বেশ কটা।আর পেয়ে যাচ্ছেন গরমা গরম কফি।চাইলেই ভালো মন্দ মন্তব্য জানিয়ে চিরকুট ঝুলিয়ে দিতে পারেন মাচাং ঘরের দেয়ালে।এক পাশে রাখা আছে সে ব্যবস্থাও।আর কাঠের তিনতালা বাড়ি ওপাড়ায় চেপে বসে শহর দেখতে হলেও একবার ঢুঁ দেয়া যেতে পারে।খাবার যেমন তেমন খারাপ অবশ্যই নয় পুরো রেস্তোরার পরিবেশ শেষ বিকেলের ঘুরাঘুরিতে এনে দিবে পূর্নতা।রেস্তোরার পাশেই আছে বুনন সামগ্রীর সম্ভার।হাতে বানানো নানা সামগ্রীর পসরা।টুকটাক কেনাকাটাও হয়ে যেতে পারে।
শহুড়ে কোলাহল ছাড়িয়ে শেষ বিকেলে শহরের শেষ প্রান্তে সময়টা কেটে যাবে দারুন নিঃসন্দেহে,শহর রাঙামাটি অভিবাদন জানায় নিজেস্ব সৃজনশীলতায়……………
News Copy of Pahar24.com