খাগড়াছড়িতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্যদিয়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত

237

খাগড়াছড়িঃ-নানা আয়োজনে খাগড়াছড়িতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে সকালে পৌরসভার উদ্যোগে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রায় খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলমসহ পৌর কাউন্সিলরা অংশগ্রহণ করেন।
রবিবার (৮ মার্চ) পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি নারীপক্ষ, দুর্বার নেটওয়ার্ক কর্মসূচি, উইমেন রিসোর্স নেটওয়ার্ক, কেএমকেএস পৃথকভাবে দিবসটি পালন করেছেন।
বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি’র উদ্যোগে খাগড়াছড়িতে অনুষ্ঠিত এক নারী সমাবেশে জনসংহতি সমিতির নেতারা পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারের নানামুখী উন্নয়ন কর্মকান্ডে অবকাঠামোগত পরিবর্তন হলেও নারী সমাজের অবস্থার কোন অগ্রগতি হয়নি।
বিশেষ করে পাহাড়ি নারীদের ওপর বহুমুখী সহিংসতা চেপে বসেছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং প্রশাসনের অসহযোগিতায় বেশিরভাগ নারী নির্যাতনের ঘটনায় প্রতিবিধান মিলছে না। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতার কারণেই পাহাড়ে নারীর নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ।
মারমা উন্নয়ন সংসদ হলে সংগঠনের সভাপতি কাকলী খীসা’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস)-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি তাতিন্দ্র লাল চাকমা প্রকাশ পেলে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পিসিজেএসএস-র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অংশুমান চাকমা, সহ-সভাপতি বিভু রঞ্জন চাকমা ও বিমল কান্তি চাকমা, তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা, নারী সমিতির কেন্দ্রীয় সা: সম্পাদক মল্লিকা চাকমা, অনিতা রোয়াজা এবং রত্মা তঞ্চগ্যা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বর্ষীয়াণ রাজনীতিক তাতিন্দ্র লাল চাকমা বলেন, সমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্য রেখে দেশ এগোতে পারে না। আর পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীর প্রতি সহিংসতা রীতিমতো ভয়ানক পর্যায়ে পৌঁছেছে। দেশের বিশেষ সম্ভাবনাময় পার্বত্যাঞ্চলের নারীদের নিরাপত্তা বিধানে পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের কোনই বিকল্প নেই বলে মত ব্যক্ত করেন তিনি।
সমাবেশের আগে বিশালাকার ও বর্ণাঢ্য এক শোভাযাত্রা ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এদিকে ‘প্রজন্ম হোক সমতার, সকল নারীর অধিকার’ এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে জাবারাং কল্যাণ সমিতি। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে জাবারাং কল্যাণ সমিতি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার প্রকল্পভূক্ত ১৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মা দলের ৩৪ জন সদস্য দিবস উপলক্ষে সকালে শহরের প্রেস ক্লাব থেকে শাপলা চত্বর হয়ে পৌর টাউন হল পর্যন্ত আয়োজিত র‌্যালীতে অংশগ্রহণ করেন।
র‌্যালি শেষে জাবারাং প্রধান কার্যালয়ের হল রুমে দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়। জাবারাং সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরার সভাপতিত্বে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সহকারী কমিশনার জনাব সাধনা ত্রিপুরা। বিশেষ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের মাষ্টার ট্রেইনার জনাব উম্মে সালমা ও খাগড়াপুর মহিলা কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক জনাব শেফালিকা ত্রিপুরা।
প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জনাব সাধনা ত্রিপুরা তাঁর মতো নারীদের সামনে অগ্রসর হওয়ার পেছনে মায়েদের ভূমিকা অনেক বেশি বলে উল্লেখ করেন। শিক্ষক হবার স্বপ্ন নিয়ে বড় হতে হতে আজ বিসিএস অফিসার তিনি। কলেজে পড়ার সময় এক প্রশাসনিক কর্মকর্তার জনসেবায় নিয়োজিত হতে পারার সুযোগ ও পরিধি দেখে অনুপ্রাণিত হবার কথা ব্যক্ত করেন। তিনি আরও বলেন, সন্তানকে প্রতিষ্ঠিত করতে তার ভেতরের ইচ্ছা, প্রচেষ্টা আর লক্ষ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে।
বিশেষ আলোচকের বক্তব্যে জনাব উন্মে সালমা মা দলের সদস্যদের মাঝে কন্যা শিশুদের বেড়ে উঠার সাথে সাথে শারীরিক পরিবর্তনকে কিভাবে মা বাবা সন্তানের খোলামেলা আলোচনা করবে কি পরামর্শ দেবে তা আলোচনা করেন। কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার নিয়ে তার সংস্থা বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় জাবারাং, খাগড়াপুর মহিলা কল্যাণ সমিতি ও তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থার সাথে অংশীদারীত্বের ভিত্তিতে আগামী ৪ বছরে ৯০ টি কিশোরী ক্লাবের মাধ্যমে ৩৬০০ কিশোরী, ৩৬০০ মা ও ৭২০০ বাবা ভাইদের সচেতন করা হবে বলে তথ্য দেন।
দ্বিতীয় বিশেষ আলোচক খাগড়াপুর মহিলা কল্যাণ সমিতির সভানেত্রী ও নির্বাহী পরিচালক শেফালিকা ত্রিপুরা নারীকে ঘর থেকে বেরিয়ে পুরাতন কুসংস্কার ভেঙ্গে নারীর প্রতি নির্যাতন ও সকল বৈষম্য প্রতিরোধে মায়েদের, বোনদের সোচ্চার হতে আহবান জানান। নিজেদের সমস্যা নিজেদেরকেই বলতে উৎসাহ দেন। নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিজেদেরকেই দেয়াল ভাঙ্গার সাহস দেন।
নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিন নারী নক্ষত্রের উপস্থিতিকে সৌভাগ্য বলে মনে করেন আলোচনা সভার সভাপতি মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা। আলোচনা সভা থেকে ফিরে অন্য সদস্যদের সাথে আত্মীয়-স্বজনের সাথে তথ্য বিনিময় করতে অনুরোধ করেন জাবারাং কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা।
সভা শেষে নারী পাচার প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরির উপর নির্মিত নাটক ‘ফদাংথাং আন্দার’ প্রদর্শন করা হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে অভিযোগ জানাতে বা সহযোগিতা নিতে ২৪ ঘন্টা হটলাইন নাম্বার ১০৯ এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন অনুষ্ঠান সঞ্চালক বিনোদন ত্রিপুরা।