॥ থানচি প্রতিনিধি ॥
বান্দরবানের থানচি উপজেলা জুড়ে পাহাড়ে মাঙ্গলিক রথটানা বা রাথা: পোওয়ে বা প্রবারনা মহা ওয়াগোয়াই উৎসবে মেতে ওঠেন মারমা তরুন তরুণীরা স্থানীয় মারমা ভাষায় এই উৎসবকে ‘রাথাঃ পোওয়ে’ বলা হয়। অনেকে মতে ‘সাংফোওয়া হ্নাং’। বাংলায় একে বলা হয় ‘শারদীয় উৎসব’। আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে হয় প্রবারণা পূর্ণিমা।
প্রবারণায় শত শত তরুণ-তরুণী নেচে–গেয়ে ও শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে উদ্যাপন করে এই রথটানা উৎসব। ‘ছংরাসি ওয়াগ্যোয়াই হ্লা, রাথাঃ পোয়ে লাগাইত মে’ (শরৎ ঋতু এসেছে, আশ্বিনে চলো রথটানা উৎসবে) গান গেয়ে রথ টানেন তরুণ-তরুণীরা।
রবিবার (৫ অক্টোবর) সকালে পথযাত্রা ও আলোচনা সভা মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে এ উৎসব। এর আগে ফুটবল টুনার্মেন্ট, জুমের উদপাদিত নতুন বিনি চালের নানা রংঙের পিঠা তৈরী , হাজার প্রদীপ প্রজ্জলন, আকাশে স্বর্গে উদেশ্যে ফাঁনুষ উড়ানো, বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গনের ধর্মীয় ও জাতীয় পতাকা উক্তোলন, বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘে পিন্ড দান, ধর্ম দেশনাসহ নানান দরনে ৫ দিন ব্যাপী এ উৎসবের আমেজ আগামি বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাজহংসী আদলে মাঙ্গলিক রথটানা মধ্যদিয়ে সমাপ্তি ঘটবে। উপজেলা ৩টি স্থানের এ উদসব উদযাপন করে, বলিপাড়া, থানচি সদর ও বড় মদক বাজার। তবে উপজেলা রয়েছে ৩৬টি বৌদ্ধ বিহার গুলিতেও আমেজ থাকবে। এবারে থানচি উপজেলা কলেজ মাঠ থেকে রথটানা উৎসব শুরু হবে বৃহস্পতিবার (২০ সেপ্টেম্বর) থেকে তিনজন শিল্পী রাজহংসীর আদলে রথটি তৈরি করেছেন।
দলের প্রধান অং সিং মারমা জানান, রথে কাগজের বিহার বসানো হয়, কারুকাজ করতে হয় বুদ্ধমূর্তির আসনটিতে। এমনভাবে রথ তৈরি করা হয়েছে , যাতে এর সামনে এলেই উপাসকদের ধর্মীয় শ্রদ্ধা ও ভক্তি বোধ জাগ্রত হয়। শ্রদ্ধা নিবেদন ও মঙ্গল কামনায় মোমবাতি প্রজ্বালনের বাতিঘরও অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে স্থাপন করার প্রয়োজন পড়ে। এর পর রথে চাকা ও রশি সংযোজন এবং নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার জন্য বাঁশের ভেলা তৈরি করতে হয়। মঙ্গল রথের পাশাপাশি কুশপুত্তলিকার মতো ফুকসুমা নামে অশুভ দেবতার প্রতিকৃতি তৈরি করা হয়ে থাকে। ফুকসুমা আনার কারণ হচ্ছে, মাঙ্গলিক কাজ অশুভ বা মারেরা (শত্রু) ভন্ডুল করার চেষ্টা করে, যদিও শেষ পর্যন্ত শুভ কাজেরই জয় হয়।
মহা ওয়াগোয়াই পোওয়ে উদযাপন কমিটি সভাপতি খেমংথুই মাস্টার বলেন, আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে অশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাস ভিক্ষুরা ‘বর্ষাবাস’ পালন করেন। এ সময় ভিক্ষুরা জরুরি কোনো কাজ ছাড়া বৌদ্ধবিহারের বাইরে যান না। বর্ষাবাসের সমাপনী অনুষ্ঠানকে বলা হয় প্রবারণা উৎসব। মারমা ভাষায় একে বলে ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে।
প্রবীণ শিক্ষক সাঅংপ্রু মাস্টার বলেন, প্রবারণা বা মহা ওয়াগ্যোয়াই উৎসবের একটি ঐতিহ্য হলো রথপূজার উৎসব। তবে এই রথপূজা উৎসব শুধু প্রবারণায় করতে হবে, এমন নয়। এটি মূলত বৃষ্টির দেবতা ও জলবুদ্ধ হিসেবে পরিচিত অর্হৎ (নির্বাণপ্রাপ্ত ধ্যানী) উপগুপ্তের উদ্দেশে বর্ষা শেষে শরৎকালে করা হয়। মারমা লোকসমাজের বিশ্বাস, উপগুপ্ত অর্হৎ ঝড়, বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রশমন করেন।