॥ রুমা প্রতিনিধি ॥
সরকারি অনুমোদন ছাড়াই বান্দরবানে রুমা বাস টার্মিনালের পাশে কাঠের স্তূপ করার অভিযোগ উঠেছে রুমা কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মাসুদ রানা মাসুম ও সাধারণ সম্পাদক পিপলু মারমার বিরুদ্ধে। গত এক মাস ধরে বিভিন্ন স্থান থেকে কাঠ এনে ওই স্থানে কাঠের গাড়ি লোড-আনলোড কাজ চলছেই। এতে বাস টার্মিনালে যাতায়াতকারী যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ছে।
জানা যায়, বন বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বিষয়টি দেখেও রহস্যজনকভাবে নীরব ভূমিকা পালন করছেন। তবে আগামী রোববার (৫ অক্টোবর) কাঠগুলো সরিয়ে ফেলার আশ্বাস দিয়েছে বন বিভাগ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বাস্তবায়নে নির্মিত রুমা বাস টার্মিনাল চালু হয় গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে। এরপর থেকে প্রতিদিন যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়ছে। এ অবস্থায় টার্মিনাল এলাকায় পাশে কাঠের স্তূপ করায় যাত্রী ও সাধারণ মানুষের জানমালের ঝুঁকি আরও বেড়েছে। গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে কাঠ ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন স্থান থেকে কাঠ এনে টার্মিনালের উত্তর-পশ্চিম পাশে খালি জায়গায় স্তূপ করে রাখছেন।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, যাত্রী কাউন্টারের পাশেই বড় বড় গাছের স্তুপ রাখা হয়েছে। এসব কাঠ লোড-আনলোডের সময় ট্রাকের ভারী চাকার চাপায় যাত্রী কাউন্টারের পানি সরবরাহ লাইনের প্লাস্টিক পাইপ নষ্ট হয়ে গেছে। গাছের স্তূপগুলোর পাশে বড় বড় গর্ত তৈরি লক্ষ্য করা গেছে।
কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পিপলু বলেন, যে জায়গায় গাছের স্তুপ রয়েছে সেটি বাস টার্মিনালের নয়। জুয়েল বম এর কাছ থেকে দুই বছর মেয়াদে জায়গাটি ভাড়া নেয়া হয়েছে। তবে সে জমি ভাড়া মৌখিক নাকি লিখিত চুক্তিতে তা জানাতে পারেননি পিপলু মারমা।
জমি ভাড়া বিষয়টি জানতে একাধিকবার মোবাইলে কল দিয়ে রিং গেলেও রিসিভ করেননি জুয়েল বম। জমি ভাড়া বিষয়ে তাকে খুদেবার্তা পাঠানো হয়েছে কোন উত্তর না পাওয়ায় জুয়েল বমের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। সরকার নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের রুমা উপজেলায় প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য জুয়েল বম চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়েছেন বলে তার এক আত্মীয় সূত্রে জানা গেছে।
বাস সার্ভিসের লাইনম্যান জাকির হোসেন বলেন, টার্মিনালের আশেপাশের জায়গা জুড়ে ব্যবসায়ী মো. মাসুদ ও পিপলু মারমা বিভিন্ন জায়গায় থেকে গাছ এনে স্তূপ করছেন। বাস টার্মিনাল ও যাত্রীর নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় গাছগুলো ট্রাকে লোড-আনলোড করে টার্মিনালের ইট বিছানোর উপর না নিয়ে অন্যত্র রাস্তায় নিয়ে যেতে তাদের দুইজনকে অনুরোধ জানিয়েছি। কিন্তু মাসুদ ও পিপলু মারমা কোনভাবেই পাত্তা দিচ্ছে না। এর চেয়ে বেশি কিছু বললে আমাকে (জাকির) বিভিন্ন সুযোগ খুঁজে কিছু ক্ষতি করতে পারে। এমন আশঙ্কের কথা বলেন লাইনম্যান মোঃ জাকির। তিনি অভিযোগ করে জানান, তাদের ট্রাকের গাড়ি চাপায় বাস টার্মিনালের পানি সরবরাহের লাইনে মাটির নিচে থেকে উপরে গিয়ে প্লাস্টিকের পাইপটি চেপটা গেছে। ফলে পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে। তা মেরামত করে দেবে বলে আশ্বাস দিলেও এক সপ্তাহ বেশি সময় পার হয়ে গেছে। মাসুদ এখনো পাইপ লাইনটি ঠিক করে দেননি বলে জানালেন লাইনম্যান জাকির।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রুমা কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি সভাপতি মো. মাসুদ রানা মাসুম বলেন, পানি সরবরাহের প্লাস্টিকের পাইপ চেপটা হয়ে গেছে ঠিকই, কিন্তু নষ্ট হয় নাই। ট্রাকে লোড-আনলোড করার সময় সৃষ্ট গর্তগুলো ঠিক করে দেয়া হবে এবং পাশে আলাদা রাস্তা করিয়ে নেয়ার জন্য শ্রমিক ঠিক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মাসুদ। তবে কবে নাগাদ রাস্তা ঠিক করবেন, তা জানাতে পারেননি তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী বলেন, গাছের ডিপো অনুমোদনের বিষয়টি বন বিভাগ দেখভালের দায়িত্ব পালন করেন। তবে বাস টার্মিনালে পাশে গাছের স্তুপ করা বিষয়টি এখনো তিনি দেখেননি। তাই খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থ নিবেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আদনান চৌধুরী।
এদিকে যোগাযোগ করা হলে ডিপো’র জন্য আবেদনের কথা জানিয়ে বন বিভাগের রুমা রেঞ্জার অসীম বারেক বলেন, জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট স্থান থেকে গাছের স্তূপগুলোর সরানোর ব্যবস্থা করতে আগামী রোববার (৫ অক্টোবর) পর্যন্ত সময় লাগবে।
তখন নতুন সুসংবাদ পাবেন আশ্বস্থ করে তিনি আরো জানান, রুমা বাস টার্মিনাল সংলগ্নে স্তুপ করা গাছগুলো এর মধ্যে না সড়ানো হলে অন্য ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে অন্য ব্যবস্থা বলতে কী, তা বিস্তারিত জানাননি পলি রেঞ্জার অসীম বারেক।
অন্যদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বাস টার্মিনালের জনস্বার্থ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।