বান্দরবানের অসংখ্য বেইলি সেতুতে নিষেধ থাকলে ৫ টনের অধিক যানবাহন চলাচল

14

॥ রাহুল বড়ুয়া ছোটন, বান্দরবান ॥
বান্দরবানের অভ্যন্তরীণ সড়কে অসংখ্য বেইলি সেতু দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন এসব সেতু দিয়ে পর্যটকসহ হাজারো মানুষ ও যানবাহন চলাচল করছে। আশির দশকে নির্মিত সেতু গুলোতে পাঁচ টনের অধিক যানবাহন চলাচল নিষেধ থাকলেও নিয়ম ভঙ্গ করে প্রতিদিনই ১০ থেকে ২০ টনের ভারী ট্রাক চলছে। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে।
জেলা সড়ক ও জনপদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বান্দরবানের সাত উপজেলায় বর্তমানে ১১৪টি বেইলি সেতু রয়েছে। এর মধ্যে সড়ক ও জনপদ বিভাগের অধীনে বান্দরবান সদর, রোয়াংছড়ি, আলীকদম, লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি, রুমা, থানচি এবং বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সড়কে রয়েছে ৬৬টি সেতু। এর মধ্যে ৫৪টি সেতু অত্যান্ত ঝুঁকিপূর্ণ। স্থানীয়রা জানান, আশির দশকে নির্মিত পুরানো বেইলি সেতু গুলোর অধিকাংশ এখন জরাজীর্ণ। তাই সেতু গুলোতে পাঁচ টনের বেশি ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করার জন্য সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। কিন্তু নিয়মটি কেউ মানছে না। প্রতিদিন ২০ টনের বেশি ওজনের কাঠবোঝাই ট্রাক, বাঁশ, বালি ও ইটবাহী ট্রাক চলাচল করছে। ফলে ইতিমধ্যেই ঝুঁকিপূর্ণ সেতু গুলো আরো বিপদ জনক হয়ে উঠেছে এবং যে কোনো ধরনের বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কোথাও সেতুর লোহার পাতার টান উঠে গেছে, কোথাও একপাশ ঢেলে গেছে, আবার কোথাও গাছ দিয়ে জোড়াতালি দেওয়া হয়েছে। কিছু সেতুর স্প্রিং পর্যন্ত খুলে পড়েছে। এভাবেই প্রতিদিন অসংখ্য ছোট-বড় যানবাহন ঝুঁকি মেনে ওই সড়কে চলাচল করছে।
সিএনজি চালক রবিন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, বেইলি সেতুর পাশে পাঁচ টনের বেশি গাড়ি চলাচল নিষেধ লেখা সাইনবোর্ড থাকে। কিন্তু প্রতিদিনই ২০ টনের বেশি ওজনের ট্রাক চলে। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।
চাঁদের গাড়ি চালক সুরেশ বড়ুয়া বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর ওপর দিয়ে বালি, ইট আর কাঠবোঝাই ভারী ট্রাক চলাচল করায় আমাদের ঝুঁকি আরো বেড়ে যায়।
বোলারো গাড়ি চালক মো. ইসমাইল বলেন, প্রতিবার সেতু পার হওয়ার সময় বুকটা ধকধক করে। কয়েক মাস আগে রুমা-থানচি সড়কের একটি সেতুর এক পাশ দেবে গিয়ে চার ঘন্টা যোগাযোগ বন্ধ ছিল। এভাবে প্রতিবছরই কোনো না কোনো সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা মংক্যচিং মারমা জানান, সেতু গুলো এতটাই নাজুক হয়ে গেছে যে, ভাঙা অংশে গাড়ির চাকা পড়লে নিয়ন্ত্রণ রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি এসব ঝুঁকিপূর্ণ সেতু ভেঙ্গে, দ্রুত নতুন সেতু নির্মাণের দাবি জানান।
এবিষয়ে বান্দরবান সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বান্দরবান সড়ক বিভাগের অধীনে ৬৬টি বেইলি সেতু রয়েছে। বেশ কিছু সেতু ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা প্রতিবছর সেতু গুলোকে মেরামত করি। সেতু গুলোর ক্ষেত্রে পাঁচ টনের অধিক ভারী গাড়ী চলাচল করার কথা না কিন্তু নানান বাস্তবতার কারণে এসব সেতুতে ভারী গাড়ি চলাচল করছে, ঝুঁকিও বেশি বেড়ে যাচ্ছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী আরো বলেন, এই বেইলি সেতুগুলোকে স্থায়ী সেতুতে রুপান্তরিত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে একটি প্রকল্পের আওতায় দুইটি সড়কে ২২টি বেইলি সেতুর পরিবর্তে আরসিসি স্থায়ী সেতু নির্মাণের কাজ করা হবে। অবশিষ্ট সেতুগুলোর জন্য চট্টগ্রাম জোন থেকে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি অনুমোদন করলে ধাপে ধাপে সব বেইলি সেতুর পরিবর্তে স্থায়ী আরসিসি সেতু নির্মিত হবে। এতে এ অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগটা নিরবিচ্ছিন্ন থাকবে এবং জনগণের দুর্ভোগ কমে আসবে।