ভাঙ্গা কাঠের সাঁকোই ভরসা রোয়াংছড়ির দুই ইউনিয়নের বাসিন্দারা

20

॥ রোয়াংছড়ি প্রতিনিধি ॥
প্রকল্প অনুমোদন হলে রোয়াংছড়িতে সংযোগ সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হবে। বান্দরবানের উপজেলার ৪নং নোয়াপতং ও ৬নং জামছড়ি দু’টি ইউনিয়নের সংযোগ সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় কাঠের সাঁকো সেতু নির্ভর করে পার করতে হয়েছে স্থানীয়রা।
বান্দরবান প্রধান সড়ক থেকে নোয়াপতং ও জামছড়ি সংযোগ সেতুটি গ্রামবাসীর একমাত্র ভরসা ছিলেন। সে সেতুটি নদীতে ভেঙে পড়ে যাওয়ায় কাঠে তৈরি অস্থায়ী সাঁকো দোলনার মতো দুলে দুলে প্রতিদিন শত মানুষ প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করছেন। বর্ষার দিনে খালের পানি বেড়ে গেলে পরিস্থিতি হয়ে ওঠে আরও অশঙ্কাজনক অবস্থা। সে সময়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এই সাঁকো পারি দেওয়া এক প্রকার দু:সাধ্য পরিণতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় দেখার পরো কেবল চলাচলের পথ হচ্ছেই এ কাঠের সাঁকো।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অর্থায়নে ২০১৬-১৭ অর্থসালে প্রায় ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে আরসিসি পাকা সেতু নির্মাণ করছে ছিলেন। নির্মিত সেতুটি তিন বছরের মাথায় বর্ষার কালে পাহাড়ি ঢলে প্রবল পানির স্রোতে সেতুর পূর্ব অংশ ধসে পড়ে। এরপর থেকে সেতুটি উপর চলাচলে ভোগান্তিতে পড়েছে। দেখা গেছে, বর্তমানে ওই সেতুটি মাথা অর্ধেকের বেশি অংশ ধসে নদী পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে সেখানে সংযোগ সড়কের মাটিও সরে গিয়ে প্রবাহিত পানিতে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ধসে যাওয়া সেতু এক পাস থেকে মাটি সরে যাওয়ায় নোয়াপতং ইউনিয়ন পাশে দিকে সম্পূর্ণ সেতু নদীতে পড়ে যায় এবং মাটিও ভেঙে পড়ে গেছে। সংযোগ সড়কের জায়গায় মাটি সরিয়ে গেলে স্থানীয়রা কোন রকমেই ২ থেকে ৩টা কাঠের বল্লি দিয়ে সাঁকো তৈরি করে চলাচলের ব্যবস্থা করেছেন। তবে সেই সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন গ্রামবাসীদের জীবন ঝুঁকি নিয়ে দুলে দুলে পারাপার করতে হয়েছে। ওই পাশ^বর্তী এলাকার সোনাইসেপ্রু পাড়া, গুণক্ষ্যং পাড়া, ছপোছোওয়ে পাড়া, সোনা আাগা পাড়া, বঠাং পাড়া থেকে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জামছড়ি ইউনিয়ন বাঘমারা জুনিয়র হাই স্কুলে ঝুঁকি নিয়ে সাঁকোটি পার করে আসতে হয়।
স্থানীয়রা বলেন, আগে কোন রকমে যানবাহন চলাচল করতে পারত। এখন একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে কাঠের সাঁকো দিয়ে পারাপার করতে হয়েছে। কোনরকমে ঝুঁকি নিয়ে পার হওয়ার পরে হেঁটে হেঁটে মাইলের উপর মাইল পথ পাড়ি দিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। তাই স্থায়ী সমাধানের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্রুত এসব ব্যবস্থা নিলে সাধারণ জনগণের লাঘব হবে।
সোনাইসেপ্রু পাড়া বাসিন্দার ও ৫নং ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য উবাপ্রু মারমা বলেন, আমাদের এলাকার মানুষে কথা বললে ছোট বড় সবাই ওই সাঁকো দিয়ে পার হতে হয়েছে। বৃষ্টি হলে কপালে দু:খ ছাড়া কিছু নাই। তিনি আরো বলেন বিপজ্জনক অবস্থায় দেখেও বিকল্প রাস্তা না থাকায় সে সাঁকো সেতু দিয়ে যেতে হয়েছে। এখানে মারমা, চাকমা, খিয়াং, তঞ্চঙ্গ্যা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী বসবাস করে। সেতু না থাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ। কৃষকদের উৎপাদিত ফলমূল ও শাকসবজি মাথায় বহন করে বাজারে নিয়ে আসতে হয়েছে।
মোটর বাইক বাড়া চালক অংসাইউ মারমা বলেন, ঝুঁকি নিয়ে হলেও আগে কোনোভাবে গাড়ি চালাতে পারতাম। কিন্তু এ বর্ষায় পুরো সেতু নদীতে পড়ে গিয়ে মাটি সরে যাওয়াতে যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।
৪নং নোয়াপতং ইউপি চেয়ারম্যান এর সাথে মোঠুফোনে যোগাযোগ করে সংযোগ না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া হয়নি। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী দিবাকর রায় শতভাগ নিশ্চত করে জানান, নোয়াপতং খালের উপর নির্মিত সেতুটি ধসে যাওয়ায় ওখানকার লোকদের যাতায়াতে ঝুঁকি মধ্যে পড়েছে। সেদিকে লক্ষ রেখে সেতু নির্মাণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমোদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে অনুমোদন পাওয়া গেলেই দ্রুত সম্ভব সেতুটি নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।
রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মেহেদী কাউছার জানান, ভেঙ্গে যাওয়া সেতুর স্থলে গিয়ে পরিদর্শন করেছি। ইতিমধ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে মাধ্যমে সেতু নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওই এলাকার জনদুর্ভোগ থেকে দ্রুত লাঘব হবে।