নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারীতে স্ত্রীকে এসিড পান করিয়ে হত্যা: ঘাতক স্বামী আটক

14

॥ নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি ॥
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের একটি রাবার বাগানের পাহারা ঘরে স্ত্রীকে জোরপূর্বক এসিড পান করিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। হত্যার শিকার গৃহবধুর নাম জেসমিন আক্তার (২৩)। অভিযুক্ত স্বামী মোহাম্মদ তোহা প্রকাশ পেটানকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে নাইক্ষ্যংছড়ি থানা পুলিশ।
জানা যায়, শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৭টার দিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গৃহবধুর জেসমিন আক্তারের মৃত্যু হয়। ঘটনার সুত্রপাত হয় ৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে।
নিহত জেসমিনের পরিবার জানায়, নিহত জেসমিন আক্তারের স্বামী তোহা প্রকাশ পেঠান বাইশারী ইউনিয়নের ডিভাইন তথা ফোর এইজ গ্রুপে শ্রমিক ও নৈশপ্রহরি। সে মাদকাসক্ত। ঘটনার দিন ৯ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) দুপুরে বাইশারীর নারিচবুনিয়া সাকিনের ফোর এইচ কোম্পানির ১৫ নং বাগানের পাহারা ঘরে মাদক কেনার টাকার জন্যে স্ত্রীকে জোর করেন। কারণ তখন স্ত্রীর কাছে একটি এনজিও’র কিস্তির জন্যে রাখা আড়াই হাজার টাকা জমা ছিল। স্ত্রী জেসমিন টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় প্রথমে মারধর করেন। মারধরে আহত স্ত্রীর মুখে জোরপূর্বক এসিড ঢেলে দেন পাষণ্ড স্বামী।
মুখে এসিড ঢেলে দেয়ায় জেসমিনের অবস্থার মারাত্মক অবনতি হলে প্রথমে তাকে বাইশারী বাজারের পল্লী চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয়। পরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হলেও ৪ দিন পর তিনি (জেসমিন) মারা যান।
জেসমিনের ভাই মো. নজরুল ইসলাম নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় তাঁর বোনের হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চেয়ে মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ ইতিমধ্যে আসামি তোহা প্রকাশ ওরফে পেটানকে আটক করেছে।
জেসমিনে কলেজ পড়ুয়া বোন মায়মুনা আক্তার বলেন, তার বোনের সংসারে ২টি সন্তান রয়েছে। মাত্র ৭ দিন আগে তার বোনকে বাড়ি থেকে রাবার বাগানের পাহারা ঘরে নিয়ে আসেন তার দুলাভাই। ঘটনার দিন সেখানেই তাকে প্রথমে মারধর ও পরে জোর করে এসিড পান করান দুলাভাই। হয়তো তার বোনকে হত্যা করতেই পাহারা ঘরে কৌশলে নিয়ে আসা হয়েছিল।
এদিকে ফোর এইচ গ্রুপ তথা ডিভাইন গ্রুপের স্থানীয় কার্যালয়ে গেলে দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি। তবে তারা জেসমিনকে স্বামী কর্তৃক এসিড পান করিয়ে হত্যার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
বাগানের পাহারা ঘরে এসিড রাখা ও মাদকাসক্ত যুবকের হাতে এসিড জমা রাখার বৈধতা বা তাকে নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রুপের কর্মীরা কোনো মন্তব্য দিতে পারেননি। গ্রুপের উর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা বা মালিকের ফোন নস্বরও দিতে অনীহা প্রকাশ করেন স্থানীয় কর্মচারীরা।
এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাশরুরুল হক বলেন, ঘটনায় শনিবার সকালেই থানায় মামলা করা হয়। এতে গৃহবধূকে জোরপূর্বক এসিড পানের অভিযোগে স্বামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামীকে বান্দরবান কোর্টে পাঠানো হয়েছে। মামলাটির দ্রুততার সাথে তদন্ত করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে এটি একটি নির্মম হত্যাকাণ্ড বলে নিশ্চিত করেন তিনি।