॥ রাহুল বড়ুয়া ছোটন, বান্দরবান ॥
বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার নোয়াপতং ও জামছড়ি সংযোগ সেতুটি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে গ্রামবাসীর একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে গাছের তৈরি অস্থায়ী সাঁকো। প্রতিদিন শত শত মানুষ প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সেই সাঁকো পারাপার করছেন। বিশেষ করে বর্ষার দিনে ঝিরির পানি বেড়ে গেলে পরিস্থিতি হয়ে ওঠে আরও ভয়াবহ। তখন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য এই সাঁকো পাড়ি দেওয়া এক প্রকার দুঃসাহসিক চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়। পানির স্রোতে দুলতে থাকা এ সাঁকোই তাদের জীবনের একমাত্র চলাচলের পথ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আরসিসি পাকা সেতুটির অর্ধেকের বেশি অংশ ভেঙে ঝিরির পানিতে তলিয়ে গেছে। সংযোগ সড়কও ভেঙে সেখানে দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত সেতুর ওপর এবং ভাঙা সড়কের জায়গায় স্থানীয়রা গাছ ও বাঁশের (বুল্লি) সাঁকো তৈরি করে চলাচলের ব্যবস্থা করেছেন। তবে এ সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন গ্রামবাসীকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করতে হচ্ছে। বিশেষ করে সোনাই সেপ্রু পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থী ও জামছড়ি জুনিয়র হাই স্কুলে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে ওই সাঁকো পার হচ্ছে।
সূত্রে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অর্থায়নে প্রায় ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে নোয়াপতং ঝিরির ওপর আরসিসি সেতু কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। কিন্তু মাত্র তিন বছরের মাথায় বর্ষার সময় উজান থেকে নেমে আসা প্রবল পানির স্্েরাতে সেতুর পূর্ব অংশ ধসে পড়ে। এরপর থেকেই সেতুটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
স্থানীয়রা জানান, বর্তমানে সেতুর ভাঙা অংশ ঝিরির পানিতে তলিয়ে গেছে। সংযোগ সড়কও ভেঙে পড়েছে। ফলে যানবাহন চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। ভাঙা সেতু, তাদের ভরসা কেবল গাছের সাঁকো। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে গ্রামবাসী। অথচ পাঁচ বছরেও স্থায়ী সমাধান মেলেনি। এখন দেখার বিষয়, কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ কবে বাস্তবায়ন হয়, আর কবে স্বস্তির সেতু পায় নোয়াপতং ও জামছড়ি এলাকার জনগন।
তারা আরো জানান, সেতু ভেঙে যাওয়ার পর থেকে স্থানীয়রা গাছ ফেলে বানানো অস্থায়ী সাঁকো দিয়েই যাতায়াত করছেন। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি দিতে হয় হাজারো মানুষকে। সবচেয়ে বিপাকে পড়ছে শিশু-কিশোররা।
সোনাইসেপ্রু পাড়ার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মংচসিং মারমা ও অংসিং মারমা বলেন, ছোটরা একা ওই সাঁকো পার হতে পারে না, কারও সহায়তা নিতে হয়। বৃষ্টি হলে পানি বেড়ে গেলে পারাপার হতে আরো বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। অনেক সময় কাপড় চোপড়, স্কুল পোশাক ভিজে যায়, আবার কেউ পড়ে গেলে স্রোতে ভেসে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
পাড়ার গ্রামবাসী করুণা রানী দাশ জানান, এখানে মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী বসবাস করে। বর্ষার প্রবল স্রোতে সেতুর অর্ধেক ডুবে গিয়ে চলাচল সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে পড়ে। সেতু না থাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ। কৃষকদের উৎপাদিত ফলমূল ও শাকসবজি মাথায় করে বহন করতে হচ্ছে। এতে সময় ও খরচ দুই-ই বেড়ে যাচ্ছে।
মহেন্দ্রা চালক বিজয় তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, আগে এক পাশ ভেঙে গেলেও কোনোভাবে মাটি ভরিয়ে গাড়ি চালাতে পারতাম। কিন্তু এ বর্ষায় পুরো সেতু ভেঙে গিয়ে যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ যদি দ্রুত নজর দিয়ে ব্যবস্থা নেয়, তাহলে এলাকাবাসী অনেক উপকৃত হবে।
রোয়াংছড়ি উপজেলার নোয়াপতং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চনুমং মারমা বলেন, অন্তত পাঁচ-ছয়টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ভাঙা সেতুটির ওপর নির্ভরশীল। বছরের পর বছর ধরে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় গ্রামীণ জনজীবন এক প্রকার অচল হয়ে পড়েছে। হাট-বাজার, হাসপাতাল কিংবা স্কুল-কলেজে যেতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মানুষকে। বিষয়টি বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও আজও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বান্দরবান কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তাসাউর জানান, ১০-১২ বছর আগে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। পরে ধসে যায়। এখন ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে নতুন সেতু নির্মাণের জন্য কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।