॥ বিশেষ প্রতিবেদক ॥
জাতীয় দলের নারী ফুটবলার ও সাফ চ্যাম্পিয়ন ঋতুপর্ণা চাকমা। তার মা বসুপতি চাকমা ক্যানসারে আক্রান্ত। শারীরিক এমন অবস্থার মধ্যেও মেয়েকে নিয়ে তার যে কী উচ্ছ্বাস! নিজের অসুস্থতা, মানুষের সহায়তা, মেয়ের সাফল্য, ক্যারিয়ার, ভবিষ্যৎ এবং ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে ঋতুপর্ণাা বসুপতির কথোপকথনের অংশ তুলে ধরা হলোঃ-
* ঋতুপর্ণা কোথায় এবং কেমন আছেন?
বসুপতি চাকমা : ঋতু বর্তমানে ভুটানে আছে এবং ভালো আছে।
* সম্প্রতি এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের সাফল্যে প্রত্যক্ষ অবদান রেখেছেন। মেয়েদের সাফল্য দেখে কেমন লেগেছে?
বসুপতি : ঋতুর গোলে বাংলাদেশ জয়ী হয়েছে। আমি খুবই খুশি হয়েছে। টিভিতে আমরা সবাই খেলা দেখেছি। আনন্দে কেঁদেছি। আমার ছোট্ট নাতি সুভদ্র তার মাসি (খেলা) কীভাবে গোল দেয় সেটা অঙ্গভঙ্গি করে দেখালে খুবই ভালো লাগে। আশীর্বাদ করবেন আমার মেয়ে যেন আগামীতে বিশ^জয়ী খেলোয়ার হতে পারে। আমার মেয়ে প্রতিটা খেলায় যেন দেশকে জয় এনে দেয় সেই প্রার্থনা করি।
* গত বুধবার বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতা (রুহুল কবির রিজভী) আপনাকে দেখতে এসেছেন। চিকিৎসার জন্য টাকা দিয়েছেন। কেমন লেগেছে?
বসুপতি: আমার দুঃসময়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন, তারা সব সময় আমাদের পাশে থাকবেন বলেছেন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যে তারা কষ্ট করে এসে আমার চিকিৎসার জন্য টাকা দিলেন, সে জন্য তাদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। পরিবারের সকলেই তাদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। সাধুবাদ জানাচ্ছি।
* রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের পক্ষ থেকেও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি…
বসুপতি: হ্যাঁ, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান (নামটা জানিনা), বরুন বাবুরা এসে ৩ লাখ টাকার চেক দিয়ে গেছেন। তাদেরও সাধুবাদ জানাচ্ছি।
* এখন আপনার শরীরের কী অবস্থা?
বসুপতি: এখন মোটামুটি ভালো আছি। কেমোথেরাপি দেওয়ার পর চুল পড়ে যাচ্ছে। মাথায় বেশি গরম লাগে। এখন বৃষ্টির কারণে গরম পডছে না তাই কিছুটা স্বস্তির মধ্যে আছি।
* আপনার রোগটা কবে শনাক্ত হয়?
বসুপতি: আমি আগে থেকেই অসুস্থ ছিলাম। বহু বছর আগে থেকেই পেটব্যথা, মাথা ব্যথা ছিল। এর আগে জরায়ু টিউমার অপারেশন করেছি। ক্যানসার হয়েছে সেটা জানতাম না। ৬ মাস আগে ক্যানসার শনাক্ত হয়েছে।
* কোথায় চিকিৎসা নিচ্ছেন? কোন ডাক্তার আপনাকে দেখছেন?
বসুপতি: চট্টগ্রামের সিএসসিআর হাসপাতালে একজন ক্যানসারের চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছি। তবে ডাক্তারের নাম জানিনা। একজন নারী ডাক্তার তিনি।
* ডাক্তার কী বলেছেন?
বসুপতি : ডাক্তার খুব ভালো মানুষ। তিনি বলেছেন আমি সুস্থ হব। আমিও বিশ^াস করি আমি সুস্থ হব। আমাদের গ্রামেও আমার মতো একজনের হয়েছে। তিনিও সুস্থ হয়েছেন।
* আপনার চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত কত টাকা ব্যয় হয়েছে?
বসুপতি : আজ পর্যন্ত ৩ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে।
* পাহাড়ি বৈদ্যের চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে শুনেছি…
বসুপতি: ডাক্তারের পাশাপাশি আমি পাহাড়ি চিকিৎসাও নিচ্ছি। পাহাড়ি চিকিৎসায় মাস্টার বাবু বীরসেন চাকমা আমাকে নানা ভাবে পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন। আমার মেয়েরা ও মেয়ের জামাইয়েরা সব সময় পাশে থেকে আমার দেখাশোনা করছে। ঋতু সকাল-বিকাল প্রতিদিন খবর নিচ্ছে ফোনে, ভিডিও কলে। খাওয়া দাওয়া অবহেলা করলেই বকা ঝকা খাচ্ছি ঋতুর কাছে। তবে বেশ ভালো আছি।
* সরকার আপনাদের জন্য বাড়ি নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিল এবং রাস্তা নির্মাণের কথাও বলা হয়েছে সেগুলোর কী অবস্থা?
বসুপতি : আমরা সরকারের কাছে ঘর বাড়ি, টাকা-পয়সা, রাস্ত কিছুই চাইনি। নিজেরাই দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো কিছুই হয়নি। ঘাগড়ায় একটা জায়গা দিয়েছে শুনেছি কিন্তু বাড়ি নির্মাণ এখনও হয়নি। রাস্তা হলে তো মন্ত্রী সাহেবদের (রুহুল কবির রিজভীদের) কষ্ট করে ভিজে ভিজে হেঁটে আসতে হতোনা। রাস্তাটা হলে আমার গ্রামবাসীর উপকার হতো।
* ঋতুর জন্য সরকারের কাছে আপনার কোনো দাবি বা চাওয়ার আছে?
বসুপতি : ঋতুর জন্য আমার দাবি হলো একটা সরকারি চাকরি। মেয়েটি কিন্তু সারা জীবন ফুটবল খেলতে পারবেনা। একদিন তাকে ঘর সংসার করতে হবে। তখন সংসারের জন্য, জীবনের জন্য চাকরি দরকার হবে। আমার একমাত্র অবলম্বন এই মেয়েটি। সে আমাকে চিকিৎসা করাচ্ছে। টাকা পয়সা দিচ্ছে। পরিবার চালাচ্ছে। তার একদিন ঘর হবে, পরিবার হবে, জামাই হবে।
* ঋতুকে নিয়ে আপনার স্বপ্ন বা আশা কী?
বসুপতি: আমার মেয়ে একদিন বিশ^কাপে খেলবে সেটা স্বপ্ন দেখি। নেপালে সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকেই আমি মেয়েকে নিয়ে বড় বড় স্বপ্ন দেখে চলেছি। আশা করি আমাদের স্বপ্ন সফল হবে। আমার মেয়ের জন্য সবাই আশীর্বাদ করবেন, সে যেন উত্তরোত্তর উন্নতি ও শ্রীবৃদ্ধি লাভ করতেপারে। সে যেন বিশ^মানের ফুটবলার হতে পারে।