টাস্কফোর্স গঠনের পরও কমানো যাচ্ছে না নিত্যপণ্যের দাম, বিপাকে স্বল্প আয়ের মানুষ

17

॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
বাজার তদারকিতে সারা দেশে টাস্কফোর্স গঠন করেও কমানো যাচ্ছে না নিত্যপণ্যের দাম। গত সোমবার দেশের প্রতিটি জেলা পর্যায়ে এই টাস্কফোর্স গঠন করার পর ডিম ও ব্রয়লার মুরগি, শাক-সবজির দাম আরো বেড়েছে। এছাড়া নতুন করে দাম বাড়ার তালিকায় যুক্ত হয়েছে ময়দা, পেঁয়াজ, সয়াবিন তেল, পাম অয়েল ও গরুর মাংস। আর সবজির বাজারে তো রীতিমতো আগুন। সব মিলিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে ভোক্তারা। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, পণ্যের দাম কমাতে ইতিমধ্যে কোনো কোনো পণ্যের শুল্ককর কমিয়েছে সরকার। আবার কোনোটির শুল্ককর কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রায় প্রতিদিনই বাজারে অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু এর সুফল পাচ্ছে না ভোক্তারা। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বাজারে এখনো সিন্ডিকেট কাজ করছে। এই সিন্ডিকেটের কারণেই বাজারব্যবস্থা রীতিমতো অসহায়।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) রাঙ্গামাটি বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, পেঁয়াজ, সয়াবিন তেল, ময়দা এইসব কিছুই বাড়তি দাম। আর গরুর মাংসের কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর আগে থেকে বাড়তে থাকা ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম আরো বেড়েছে আর সেই সাথে বাড়তি দাম তো রয়েছে দেশী মুরগির।
আর বাজারে ভোক্তাদের রীতিমতো ভোগান্তিতে ফেলেছে সবজির দাম। দু-একটি সবজি বাদে অধিকাংশ সবজির দরই ১০০ টাকার আশপাশে। এ পরিস্থিতিতে সবজি কিনতে গিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার বচসা এখন নিত্য ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খুচরা বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির মধ্যে বরবটি কেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, পটল ৮০ থেকে ১০০ টাকা, বাঁধাকপি ৮০ থেকে ৯০ টাকা, লাল শাক ২০ থেকে ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ১০০ থেকে ১২০ টাকা, আলু ৪০ থেকে ৫৫ টাকা, বেগুন ১০০ থেকে ১৪০ টাকা, টমেটো কেজি ৩৬০ টাকা, করল্লা ১০০ থেকে ১২০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ থেকে ১২০ টাকা, কাঁচা কলা জোড়া ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সবজির মধ্যে পেঁপের দাম তুলনামূলক কম রয়েছে। বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে। তবে কাঁচা মরিচের দাম সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। এ কারণে বিপাকে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষরা।
এসময় বাজারের সবজি বিক্রেতা বলেন, সারা দেশে বৃষ্টির কারণে বন্যায় অনেক সবজিখেত পানিতে তলিয়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাজারে সবজির সরবরাহ কম। তবে আগামী এক মাসের মধ্যে বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়বে। তখন দাম কমে আসবে।
এদিকে, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর বাজার পরিস্থিতি, সরবরাহের তদারকি ও পর্যালোচনা জন্য রাঙ্গামাটির জেলা ও উপজেলা পর্যায় বিশেষ টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) বিকেলে রাঙ্গমাটির বিভিন্ন বাজারে গিয়ে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করে টাস্কফোর্স কমিটির সদস্যরা। বাজারে মাছ, মুরগী, ডিম এবং সবজির মূল্য তদারকি এবং বাজার কমিটির তালিকার সঙ্গে বিক্রেতাদের পণ্যের বিক্রয়মূল্যের তালিকা যাচাই বাছাই করা হয়।
এসময় পণ্যের মূল্য তালিকা জনসম্মুখে প্রদর্শিত না থাকায় এবং পন্য ক্রয় রশিদ না থাকায় ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৩৮ ধারায় ৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অপরদিকে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে পন্য বিক্রয় না করার বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়। কমিটির সদস্যগণ কর্তৃক ক্রেতাদের পন্য ক্রয়ের পর ক্রয়মূল্যের রশিদ বিক্রেতাদের নিকট হতে সংগ্রহ করার জন্যও নিদের্শনা প্রদান করা হয়।
রাঙ্গামাটি জেলা শহরের বাজার মনিটরিং পরিচালনা করেন, সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ শামীম হোসেন।এসময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট জোবাইদা আক্তার, রাঙ্গামাাটি সদর সার্কেল এএসপি, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, উপজেলা মৎস্য অফিসের প্রতিনিধি, উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের প্রতিনিধি, কৃষি বিপনন অফিসের প্রতিনিধি, ক্যাব এর প্রতিনিধি ও ছাত্র প্রতিনিধিরা।