শাহ আলম>>> “পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নসহ জুম্ম জাতির অস্তিত সুরক্ষায় এগিয়ে আসুন” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে রাঙামাটিতে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৩৬তম মৃত্যু বার্ষিকী ও স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ রবিবার (১০ অক্টোবর ২০১৯) সকাল ১০টায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), রাঙামাটি জেলা শাখার উদ্যোগে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এ মৃত্যু বার্ষিকী ও স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অংশ উল্লেখ করে, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি উষাতন তালুকদার বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিচ্ছিন্ন কোন ভূমি কিংবা অঞ্চল নয়। বাংলাদেশের একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অংশ এই পার্বত্য চট্টগ্রাম। আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ীদের একটি কুচক্রী মহলের দ্বারা ভুল বোঝানো হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ীদের বিপদের দিকে ধাবিত করা হচ্ছে। আমরা এদেশের নাগরিক। পার্বত্য চট্টগ্রাম স্বাধীনভাবে থাকতে চাই মন্তব্য করে তিনি সকলকে যার যার অবস্থান সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য ও রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি শ্রী নিখোলাই পাংখোয়ার সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী সুনির্মল দেওয়ানের সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অথিতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উষাতন তালুকদার পার্বত্য চট্টগ্রামের চাঁদাবাজি ও অস্ত্রবাজি প্রসঙ্গে বলেন, অভিযোগ করা হয় পার্বত্য চট্টগ্রামে চাঁদাবাজি অস্ত্রবাজি রয়েছে। সমতলের কিংবা সারাদেশে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি হয় প্রতিদিন কিন্তু ঐসব নিয়ে সরকারের মাথা ব্যাথা নেই। চাঁদাবাজি শুধু পার্বত্য অঞ্চলে নয় সারাদেশেই হয়। পার্বত্য অঞ্চলের চাঁদাবাজিকে বড় করে দেখা হয়। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে চাঁদাবাজি কেন হয়, সরকারকে অনুধাবন করতে হবে, গুরুত্ব সহকারে দেখার অনুরোধ জানান তিনি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য গৌতম কুমার চাকমা, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মংসানু চৌধুরী, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি প্রকৃত রঞ্জন চাকমা, এমএন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক বিজয় কেতন চাকমা, শিক্ষাবিদ, লেখক ও সাংস্কৃতিক কর্মী শিশির চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সহসভাপতি সুমন মারমা প্রমুখ সভায় বক্তব্য রাখেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের পর্যটন শিল্প নিয়ে তিনি বলেন, অনেকেই বলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা রাঙ্গামাটি পর্যটন শিল্পের জন্য সম্ভাবনাময় অঞ্চল। বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটলেও রাঙ্গামাটিতে বিকাশ ঘটেনি। এর কারণ পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধান না করা। পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধান না করলে এই অঞ্চল সম্ভাবনাময় গড়ে তোলা অসম্ভব। তাই তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধানের তাগিদ জানান সরকারের প্রতি।
স্মরণসভায় মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার জীবনী তুলে ধরে তিনি অভিযোগ করেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের অঞ্চলের জন্য মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু পার্বত্য অঞ্চলের বর্তমান বিরাজমান পরিস্থিতিতে লক্ষ করা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদ এর কোন প্রতিনিধি মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা জন্মবার্ষিকী কিংবা মৃত্যুবার্ষিকীতে পরিষদের কোন প্রতিনিধি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসেন না। এটি সকলের জন্য দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এর সকালে প্রভাতফেরি ও মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
সভার শুরুতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), রাঙামাটি জেলা শাখার তথ্য ও প্রচার সম্পাদক নগেন্দ্র চাকমা শোক প্রস্তাব পাঠ করেন।