॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
থেমে থেমে বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের হঠাৎ পানি বৃদ্ধিতে তলিয়ে গেছে রাঙ্গামাটি শহরের বেশ কয়েকটি রাস্তাঘাট ও অনেক ঘরবাড়ি। আর হঠাৎ কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। এতে জেলার লংগদু, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি, নানিয়চার ও সদর উপজেলার হ্রদ তীরবর্তী নিন্মাঞ্চল হ্রদের পানিতে ডুবে গেছে।
জানা গেছে, রাঙ্গামাটি শহরের রিজার্ভ বাজার, আসামবস্তি, পাবলিক হেলথ, তবলছড়ি, শান্তি নগর এলাকার কাপ্তাই হ্রদ-তীরবর্তী অনেক বাড়ি ও সড়কে পানি উঠেছে। এতে করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৫ হাজারের অধিকর পরিবার। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ। অন্যদিক পানি বাড়ায় দুর্গত এলাকার মানুষ গবাদি পশু নিয়েও পড়েছে বিপাকে। পাশাপাশি ফসলের ক্ষতি বাড়ছে।
অন্যদিকে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট দিয়ে ১ ফিট করে প্রতি সেকেন্ডে ছাড়া হচ্ছে ১৮ হাজার কিউসেক পানি। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মাধ্যমে আরও প্রায় ২৫ হাজার কিউসেক পানি অপসারণ হচ্ছে। প্রতি সেকেন্ডে মোট ৪৩ হাজার কিউসেক পানি ছাড়া হলেও উজান থেকে নেমে আসা পানির কারনে হ্রদের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
রাঙ্গামাটি হ্রদ তীরবর্তী শান্তি নগর এলাকার বাসিন্দা মো. ফারুক বলেন, গত ২২ বছরে কাপ্তাই হ্রদে এমন পানি হয়নি। বাড়িতে কখনো পানি উঠেনি। এবছর বৃষ্টি ও হ্রদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়িঘরে পানি উঠেছে। রান্না বান্না সব বন্ধ হোটেল থেকে কিনে এনে খাচ্ছি।
আসামবস্তি এলাকার পানিবন্দি আরেক বাসিন্দা মো. ইউনুছ মিয়া বলেন, খাবার পানির টিউবওয়েল ডুবে আছে। এখনো কেউ খোঁজ খবর নিতে আসেনি কেউ। আমরা এই এলাকার এতোগুলো মানুষ পানিবন্দি কেউ ত্রাণ সহায়তাও দেয়নি। এলাকার মানুষজন খুবই কষ্টে আছে।
এদিকে, লংগদু উপজেলার (কাপ্তাই হ্রদের অংশ) মাইনী খাল, সোনাই খাল, কাচালং নদী ও কাট্টলী বিলের অতিরিক্ত পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত গেছে। প্লাবিত হয়ে তলিয়ে গেছে উপজেলার পাঁচ হাজারের অধিক ঘরবাড়ি।
মাইনীমুখ ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন কমল জানায়, প্রতিদিন বৃষ্টিপাতের কারণে কাপ্তাই হ্রদের পানি অতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মাইনীমুখ ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডের অন্তত দেড় হাজার পরিবারের ঘর-বাড়ি পানিতে ডুবেছে। গো-চারণ ভূমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গৃহপালিত পশু হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল নিয়ে বিপাকে পড়েছে পানি বন্দি এসব জনসাধারণ এছাড়ও শিক্ষার্থীরা সবছেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে।
বিশেষ করে লংগদু উপজেলার বগাচতর ইউনিয়নের জালিয়াপাড়া, ভাসান্যদম ইউনিয়নের ভাসান্যদম এলাকা ও গুলশাখালী ইউনিয়নের ডিপুরমুখ এলাকা এবং লংগদু সদর ইউনিয়নের তিনটিলা, মাইনীমুখ এলাকার গাঁথাছড়া বড়কলোনি, এফ আইডিসিসহ বিভিন্ন এলাকার হাজারো পরিবার।
লংগদু নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, অতি বর্ষণে কাপ্তাই হ্রদের পানি স¦াভাবিকের তুলনায় বেড়ে যাওয়ায় লংগদু উপজেলার নিন্মাঞ্চাল এলাকা ডুবে কয়েক হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়েছে। খবর পেয়ে আমরা তদন্ত করে পানি বন্দি কয়েকটি এলাকায় ও আশ্রয়ন কেন্দ্রে শুকনো ও রান্না করা খাবার বিতরণ করেছি।
রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান জানান, জেলায় ৫-৬ পরিবার পানবন্দি অবস্থায় রয়েছে। উপজেলার সকল নির্বাহী অফিসারদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রতি সেকেন্ডে মোট ৪৩ হাজার কিউসেক পানি ছাড়া হলেও উজান থেকে নেমে আসা পানির কারনে কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার পানি বেশি ছাড়া হলে ভাটির অঞ্চলে বন্যা সৃষ্টি হতে পারে। সব কিছু বিবেচনা করে পানি ছাড়া অব্যাহত রয়েছে।