জমি বিরোধ নিয়ে ডা.একে দেওয়ান পরিবারের সংবাদ সম্মেলন

461

নিজস্ব প্রতিবেদক,রাঙ্গামাটি : রাঙ্গামাটিতে নিজেদের ভূমির মালিকানা প্রতিষ্ঠার দাবিতে এক সংবাদ সম্মেলন করেছে আওয়ামীলীগের সংরক্ষিত আসনের প্রয়াত এমপি সুদিপ্তা দেওয়ান ও রাঙ্গামাটি পৌরসভার প্রাক্তণ চেয়ারম্যান প্রয়াত ডা. একে দেওয়ানের পরিবার।

সোমবার সকাল ১১টায় শহরের স্থানীয় আবাসিক হোটেল মোটেল জজের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে ডা. একে দেওয়ানের ছেলে অদ্বিত দেওয়ান, মেয়ে অপরাজিতা দেওয়ান ও তার জামাই অনিমেষ চাকমা বলেন, একে দেওয়ানের নামে রাঙ্গামাটি শহরের ১০২ নম্বর রাঙ্গাপানি মৌজার কলেজগেট এলাকায় ৫৮ শতক জায়গার বন্দোবস্তির রেকর্ড রয়েছে।

এ জমির মালিকানা নিয়ে যে সমস্যা তৈরী হয়েছিল তা দীর্ঘবছর আদালতে মামলার মাধ্যমে পরিচালিত হল ও সুবিমল দেওয়ান ভূমি আপীল বোর্ডের (ফুল বোর্ড) রায়ের বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্ট ২০০৩ সালে একটি রীট পিটিশন করেন। যার নং – ৫৮৬৭/২০০৩ । মহামান্য হাইকোর্ট ২০১৫ সালে উক্ত রীট পিটিশন শুনানী শেষে প্রয়াত সুবিমল দেওয়ানের দায়েরকৃত রীট পিটিশনটি মেরিট না থাকায় খারিজ করেন।

অদ্বিত দেওয়ান বলেন, মহামান্য হাইকোর্টের রায়ের পরবর্তীতে সুবিমল দেওয়ান উচ্চতর আদালতে কোন আপীল করেননি। মহামান্য হাইকোর্টের রায়ের ৩০দিনের মধ্যে উচ্চতর আদালতে আপীল না করায় আইনের দৃষ্টিতে তাদের আদালতে যাওয়ার আর কোন সুযোগ থাকেনা।

তিনি বলেন, এসব বিষয়গুলো অবহিত হওয়ার পরে ও সুবিমল দেওয়ানের পুত্র দীপেন দেওয়ানগং বিগত এক বছর যাবৎ আমাদের জমিতে অবস্থিত বেশ কয়েকটি দোকানঘর ভাংচুর করে এবং বিপুল অংকের চাঁদা দাবী করে এবং প্রাণ নাশের হুমকি দিলে বিগত ০৪/০৫/২০১৮ইং দীপেন দেওয়ান গংয়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়, মামলা নং ০২। ইতিমধ্যে থানা থেকে তাদের বিরুদ্ধে কোর্টে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে এবং তা শুনানীর অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানান তিনি।

তারা অভিযোগ করে বলেন, দীপেন দেওয়ান গং ভূল তথ্য দিয়ে কোর্টকে বিভ্রান্ত করে তাদের পৈত্রিক জমিতে ১৪৪ ধারা জারীর আবেদন করেছেন। এসব বিষয়গুলো আইনিভাবে মোকাবেলা করা হবে বলে জানান তারা।

সুবিমল দেওয়ান তৎকালীন আমিন ও কানুনগোর যোগসাজশে ২ দশমিক ২২ একর জমির স্থায়ী বন্দোবস্তির রেকর্ডভূক্ত করিয়েছিলেন। কিন্তু পরে আবেদন করা হলে তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় তৎকালীন জেলা প্রশাসকের আদেশে পুনরায় আমাদের বাবা একে দেওয়ানের নামে তর্কিত ৫৮ শতক জায়গা রেকর্ডভূক্ত করা হয় এবং অসাধুমূলক কার্যকলাপে জড়িত আমিন ও কানুনগোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দেন জেলা প্রশাসক।

তারা বলেন, সুবিমল দেওয়ানের পক্ষে করা আপিলে কোনো রকম যুক্তি ও ভিত্তি না থাকায় আদালত সব সময় আমাদের পক্ষে রায় দেন। সর্বশেষ বিচারাধীন মামলাতেও আমাদের পক্ষে চূড়ান্ত রায় দিয়েছেন আদালত। আদালতের রায়ে আমরা আমাদের জায়গাটি দখলে নিতে চাইছি। কিন্তু শুধু চাঁদাবাজির উদ্দেশে কাজ করতে গেলে দলবল নিয়ে আমাদেরকে বাধা দিতে যান দীপেন দেওয়ান। তিনি আমাদের কাছে দেড় কোটি টাকা চাঁদা দাবি করছেন। দাবি করা টাকা দিলে জায়গাটি ছেড়ে দেবেন বলছেন দীপেন দেওয়ান।

তারা জানান, ১৯৬৯ সালের দিকে ওই এলাকায় ১৭১ নম্বর ডাগে ১২ নম্বর হোল্ডিংয়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসক থেকে ৫৮ শতক জমি বন্দোবস্তি পান রাঙ্গামাটি পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ডা. একে দেওয়ান। পরে জেলা প্রশাসক বরাবরে একে দেওয়ানের জমির পাশে ১ দশমিক ৬৪ একর জমির বেন্দাবস্তির আবেদন করেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উপজাতীয় বিষয়ক উপদেষ্টা (প্রতিমন্ত্রী) সুবিমল দেওয়ান।

আবেদন করা জমির মধ্যে একে দেওয়ানের ৫৮ শতক জমি ছিল না। কিন্তু পরবর্তীতে একে দেওয়ানের ৫৮ শতক জমিসহ দুই দশমিক ২২ একর জমির বন্দোবস্তি পেয়েছিলেন সুবিমল দেওয়ান। এরপর সংশোধনের জন্য আবেদন করা হলে তদন্তসাপেক্ষে সত্যতা পাওয়ায় তর্কিত ৫৮ শতক জায়গা পুনরায় একে দেওয়ানের নামে রেকর্ডভূক্ত করে অসাধুমূলক কার্যকলাপের দায়ে জড়িত আমিন ও কানুনগোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক।

এরপর উচ্চ আদালতে আপিল করেছিলেন সুবিমল দেওয়ান। সেই থেকে শুরু ওই দুই প্রভাবশালী পরিবারের মধ্যকার ভূমিবিরোধ আজও মিটছে না। এরই মধ্যে পরলোকগমণ করেছেন, সুবিমল দেওয়ান ও ডা. একে দেওয়ান উভয়ে। বর্তমানে বিরোধ নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে উভয় পরিবারের সদস্যরা।

বিষয়টি নিয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করেছেন, সুবিমল দেওয়ানের ছেলে অ্যাডভোকেট দীপেন দেওয়ান। সমস্যা সমাধান না হলে ১৭ সেপ্টেম্বর কলেজ গেইট এলাকায় সড়ক অবরোধের ঘোষণা দেয় এ্যাড.দীপেন দেওয়ান।

এর পর সোমবার ১৬ সেপ্টেম্বর আবারো পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামীলীগের সংরক্ষিত আসনের প্রয়াত এমপি সুদিপ্তা দেওয়ান ও রাঙ্গামাটি পৌরসভার প্রাক্তণ চেয়ারম্যান প্রয়াত ডা. একে দেওয়ানের পরিবার।

এদিকে জমি দখল নিয়ে যুবলীগের নেতা শহীদুল আলম স্বপন,মনির ও মোকাররমকে নিয়ে সম্পৃক্ত করে এ্যাড.দীপেন দেওয়ান যে অভিযোগ করেছিলেন তা সম্পুর্ন মিথ্যা বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন রাঙ্গামাটি জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি মোঃ শহীদুল আলম স্বপন। তিনি বলেন, আমরা একে দেওয়ানের নিজস্ব ভোগ দখলীয় জমির মালিক তাদের পরিবারের সাথে আলোচনা করে সেখানে দোকান ভাড়া নেয়ার জন্য কথা বলেছি মাত্র। দোকান ঘর নির্মাণ বা অন্যান্য সব কাজে ডা. একে দেওয়ানের পরিবারের সদস্যরাই মনিটরিং করছে। এখানে যুবলীগকে সম্পৃক্ত করার উদ্দেশ্য হচ্ছে দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার একটি ষড়যন্ত্র মাত্র। স্বপন আরো বলেন, আমাকে দীপেন দেওয়ানই বারবার ফোন করেছিল, তার অবৈধ প্রস্তাবে সাড়া দিইনি বলে দীপেন দেওয়ান আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। দীপেন দেওয়ান তাকে ফোন করে কি বলেছিলেন মোবাইল কোম্পানীর সাথে আলাপ করে তা সংগ্রহের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।