লিটন ভট্টাচার্য্য রানা, খাগড়াছড়িঃ-হয়রানিমূলক মামলা থেকে ডাক্তার শহীদ তালুকদারকে অব্যাহতির দাবীতে রাজপথে নেমেছে খাগড়াছড়ির সর্বস্তরের মানুষ। খাগড়াছড়িতে নাগরিক সমাজ এর ব্যানারে মানববন্ধন করে ডাক্তার শহীদ তালুকদারকে মানবিক ডাক্তার হিসাবে আখ্যা দিয়ে দুদকের করা মামলা থেকে অব্যাহতির জোর দাবি তোলেন সর্বস্তরের মানুষ।
রবিবার (১৭ জুলাই) বেলা ১১টা থেকে খাগড়াছড়ির আদালত সড়কস্থ শহীদ মিনারের ঘন্টাব্যাপী সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরে জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারক লিপি দেয় খাগড়াছড়ির নাগরিক সমাজ। এ সময় সড়কের দুই পাশে সারি হয়ে দীর্ঘ লাইনে সংহতি প্রকাশ করে নানা শ্রেণী পেশার মানুষ ও ডাক্তার শহীদ তালুকদারের অসংখ্য ভক্তরা মাননবন্ধনে অংশ নেয়।
বক্তারা বলেন, ডাক্তার শহীদ তালুকদার একজন সৎ, নিষ্ঠাবান এবং জনন্দিত মানবিক মানুষ। তিনি পাহাড়ের জন্য সম্পদ। পার্বত্য এলাকায় দীর্ঘ দিন চাকরি করে আসছেন। তিনি রাঙ্গামাটি দূর সময় মেডিকেল কলেজের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সঠিক পথে পথচলা এমন মানবিক ডাক্তারের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয় এতে। এমন মামলার সাথে তিনি জড়িত নয় বলেও উল্লেখ করেন মানববন্ধনে অংশ গ্রহনকারীরা।
যে মামলায় ডাক্তার শহীদ তালুকদারকে অভিযুক্ত করা হয়েছে তার সাথে জড়িত নয়। ডাঃ শহীদ তালুকদার কর্মচারী নিয়োগ কমিটির সদস্য ছিলেন না। তিনি ছিলেন, আবেদন যাচাই-বাছাই কমিটির একজন সদস্য মাত্র। তাঁর কথায় বা স্বাক্ষরে কারো চাকুরী হয়নি। তাছাড়া মূলসনদ দেখার নৈতিক দায়িত্ব ও তাঁর হাতে ছিলো না। তাই আমরা চাই মামলাটির অধিকতর তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের সাজা দেয়া হোক। পাহাড়ের সাদা মনের মানুষ ডাক্তার শহীদ তালুকদারকে মামলা থেকে অবিলম্বে অব্যাহতি প্রদানের দাবী তোলা হয় মানববন্ধন থেকে। অন্যথায় পাহাড়ের সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে আরো কঠিন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
এতে খাগড়াছড়ি নাগরিক সমাজের গঠিত কমিটির আহবায়ক সাংবাদিক তরুণ কুমার ভট্টাচার্য্য’র সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন, খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ড. সুধীন কুমার চাকমা, সমন্বয়ককারী ও সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী, মাতৃভাষা গবেষনায় জাতীয় একুশে পদক প্রাপ্ত মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা, এডভোকেট প্রতিম রায় পাম্পু, খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাব সভাপতি জীতেন বড়–য়া, সাংবাদিক আবু দাউদ, চিংমেপ্রু মারমা বিশিষ্ট সমাজকর্মী ও রেড ক্রিসেন্টটের নির্বাহী সদস্য ধীমান খীসা, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন ও খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ বোধিসত্ত্ব দেওয়ান, প্রকৌশলী নির্মল দাশ, নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব আবু দাউদ, নারী নেত্রী শেফালীকা ত্রিপুরা, লালসা চাকমাসহ সুধীজনরা এতে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন। পরে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আইনমন্ত্রীর বরাবরে স্মরকলিপি প্রদান করেন।
উল্লেখ যে, জানা গেছে, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীনস্থ স্বাস্থ্য বিভাগে নিয়োগে জাল-জালিয়াতি অভিযোগে ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারী খাগড়াছড়ির সাবেক সিভিল সার্জেন্টসহ ৬ জনকে আসামী করে দূর্নীতি কমিশন দুদক মামলা দায়ের করেন।
মামলার অপর অভিযুক্তরা হলেন, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বীর কিশোর চাকমা অটল, খাগড়াছড়ির তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. নারায়ন চন্দ্র দাশ, তৎকালীন রাঙ্গামাটির সিভিল সার্জন ও বর্তমান রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজের প্রকল্প পরিচালক ডা. শহীদ তালুকদার, জেলা পরিষদে পরিষদের প্রশাসনিক র্কমর্কতা প্রিয় কুমার চাকমা, বাবুছড়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ফার্মাসিস্ট কন্দ্রে উদয়ন চাকমা ও আলুটিলা স্বাস্থ্য কন্দ্রেরে ফার্মাসিস্ট সুমন চাকমা।
২০১৩ সনে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ নিয়ন্ত্রণাধীন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনীর ৪০ জন কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে ২০১৮ সনের জানুযারী মাসে দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত রাঙ্গামাটি কার্যালয়ের কর্মকর্তা সৈয়দ নজরুল ইসলাম খাগড়াড়ি সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
কিন্তু এ ঘটনার সাথে তিনি কোন ভাবেই জড়িত নয়। তাই মামলা পুনঃতদন্ত করে তাঁকে অব্যাহতি প্রদানের দাবি জানানো হয় আয়োজিত মানববন্ধন থেকে।