সীমান্ত জটিলতায় থমকে আছে রামগড় স্থলবন্দরের কাজ

69

ডেস্ক রিপোর্টঃ-সীমান্ত সংক্রান্ত জটিলতায় দীর্ঘ ছয় মাস যাবত থমকে আছে রামগড়ে স্থলবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ। সীমান্তর ১৫০ গজের মধ্যে অধিগ্রহণকৃত রামগড় স্থলবন্দরে জায়গায় স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না থাকায় সে দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ বাধা দিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। ফলে অবকাঠামো নির্মাণের প্রস্তুতি গ্রহণ সত্ত্বেও দীর্ঘ ছয় মাসেও প্রায় ১২৫ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ আরম্ভ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ অবস্থায় সীমান্তের ১৫০ গজের বাইরে জরুরিভিত্তিতে অস্থায়ী টিনশেড ভবন নির্মাণ করে আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে আপাতত ইমিগ্রেশন কার্যক্রম চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রামগড় স্থলবন্দর চালুর লক্ষ্যে রামগড়ের মহামুনি এলাকায় অধিগ্রহণকৃত ১০ একর জায়গায় বন্দরের প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর মধ্যে আইসিপি, কাস্টমস, প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবন, পোর্ট বিল্ডিং, ট্রান্সশিপমেন্ট শেড, ওয়্যার হাউজ, ইয়ার্ডসহ বিভিন্ন অফিস ও আবাসিক ভবন ইত্যাদি নির্মাণের জন্য ১২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয় স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মনিকো লিমিটেড নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। কার্যাদেশ পাওয়ার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরুর প্রস্তুতি হিসেবে প্রকল্প এলাকায় ওয়ার্কার শেড নির্মাণ, নির্মাণসামগ্রী ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি সাইডে নিয়ে আসে। প্রকৌশলী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও নির্মাণ শ্রমিক সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ জন লোকবল যোগদান করে এ প্রকল্পে। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সমাপ্ত করার পর গত ১১ জানুয়ারি কাজ শুরু করলে বিএসএফ এতে বাধা দেয়। সীমান্তর জিরো রেখা থেকে দেড়শ গজের মধ্যে স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণে আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইনে বিধিনিষেধের কারণ দেখিয়ে বিএসএফ বাধা দিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়।
এদিকে সর্বশেষ গত ২২ জুন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা রামগড়ের মহামুনি এলাকায় অধিগ্রহণ করা স্থলবন্দরের জায়গা সরেজমিন পরিদর্শন করেন। পরে তারা রামগড় পৌরসভার সম্মেলন কক্ষে বৈঠক করেন। বৈঠকে দুই-তিন মাসের মধ্যে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম চালু এবং ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে রামগড় স্থলন্দরের অধিগ্রহণকৃত জায়গায় বন্দরের স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের কাজ করতে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান। এর আগে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন পদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে রামগড়ে স্থলবন্দরের প্রকল্প এলাকা সরেজমিন পরিদর্শনে আসেন। এ সময় তিনি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের মাধ্যমে বিএসএফের বাধার বিষয়টি সুরাহা করার উদ্যোগ নেওয়ার কথা বললেও এখনো সীমান্ত সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান হয়নি।
বাংলাদেশ রিজিয়নল কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট-১ এর আওতাধীন রামগড় স্থলবন্দর প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) মো. সরোয়ার আলম জানান, প্রকল্পের কাজ করার সম্মতির জন্য বিএসএফের চাহিদা অনুযায়ী গত ৯ মে রামগড় ৪৩ বিজিবির মাধ্যমে প্রকল্পের মাস্টার প্ল্যান, ডিজাইন, ড্রয়িং, লে আউট প্রভৃতি তথ্য বিজিবির মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। রামগড় ৪৩ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সীমানা আইন অনুযায়ী জিরো রেখা হতে ১৫০ গজের মধ্যে কোনো পক্ষই স্থায়ী কোনো অবকাঠামো বা স্থাপনা নির্মাণ বা স্থাপন করতে পারবে না। রামগড় স্থলবন্দরের অধিগ্রহণ করা জায়গাটি ১৫০ গজের মধ্যে হওয়ায় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী কাজে বাধা দেয়। তিনি বলেন, কাজের সম্মতির জন্য প্রকল্পের যাবতীয় তথ্য বিএসএফের কাছে পাঠানো হয়েছে। তারা জানিয়েছে, তাদের ঊর্ধ্বতন কতৃর্পক্ষের অনুমোদন পেলে তারা কাজ করতে দেবে।’