খামারে হাঁসের নির্ধারিত সর্বোচ্চ মূল্য ১৭০, নেয়া হচ্ছে ২৬৫ টাকা

600

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাঙ্গামাটি : হাঁসের খামারে নিয়ম ভেদে প্রতিটি হাঁসের সরকারী নির্ধারিত মূল্য সর্বোচ্চ দাম ১৭০ টাকা হলে ও প্রতিটি হাঁসের দাম নেয়া হচ্ছে ২৬৫ টাকা করে। এ রকম অভিযোগ পাওয়া গেছে রাঙ্গামাটির একমাত্র সরকারী হাঁস প্রজনন খামারে কর্মরত নজরুলের বিরুদ্ধে। নজরুল সরকারী হাঁস প্রজনন খামারের হিসাব রক্ষক পদে কর্মরত।

এ বিষয়ে গত কিছুদিন আগে একটি বেসরকারী টেলিভিশনে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও প্রচার করা হয়। সেখানে ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, খামারীদের কাছ থেকে ২৬৫টি হাঁসের প্রতিটির দাম ২২৫ টাকা করে নিচ্ছে অফিসের হিসাব রক্ষক নজরুল।

হাঁসের দামের বিষয়ে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা জানান, খামারের হাঁসের সর্বোচ্চ দাম ১৭০ টাকা। নজরুল বেশী টাকা নিয়েছে স্বীকার করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন তিনি। অন্যদিকে বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রচারের পর হাস বিক্রির সব টাকা সকরারী কোষাগারে জমা দেখানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে ২৬৫টি হাঁস ক্রেতা হাঁসের খামারী প্রতিময় চাকমা বলেন, তার কেনা ২৬৫ টি হাস কোনটিই ওজন করা হয়নি। সাংবাদিক আসার খবরে তড়িগড়ি করে হাসগুলো নৌকায় উঠিয়ে দেয় হিসাব রক্ষক নজরুল। তিনি জানান, হাঁস ক্রয় বাবদ তাকে কোন ভাউচার দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, হাসগুলো ক্রয়ে তাকে কোন সিডিউল বা সরকারী নিয়ম অনুসরণ করতে হয়নি, সবকিছুই করেছে হিসাব রক্ষক নজরুল। খরচের টাকা নিয়েছে খামারের ভিতরে। সাংবাদিক আসার কারণে তিনি খুব তড়িগড়ি করে আমাকে বিদায় দেওয়ার ব্যবস্থা করেন এবং দ্রুত খামার ত্যাগের পরামর্শ দেন বলে জানান প্রতিময় চাকমা।

ধবংস হবার পথে রাঙামাটি সরকারী হাঁস প্রজনন খামারটি। কিছু কর্মকর্তার দুর্নীতির কারণে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে খামারের। সম্প্রতি একটি বেসরকারী টেলিভিশনে শুক্রবার দিনে ভোর সকালে হাঁস বিক্রির স্বচিত্র অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের পর টনক নড়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের।

এসব ঘটনার প্রমান পেয়ে ও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পক্ষেই কথা বলছেন হাঁস খামারের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক ও জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা বরুন কুমার দত্ত। তিনি সকব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওজন করে হাসগুলো বিক্রি করা হয়েছে। সব টাকা সরকারী কোষাগারে জমা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সিডিউল মোতাবেক হাসগুলো বিক্রি করা হয়েছে। তবে হাঁস ক্রেতা প্রতিময় চাকমার বক্তব্য অনুযায়ী হাঁস খামারের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক ও জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা বরুন কুমার দত্তের কথার কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি।

গুরুতর অভিযোগ আছে, খামারের হিসাব রক্ষক নজরুলের বিরুদ্ধে। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত নায্য দামের প্রকৃত খামারীদের কাছে হাঁসের ডিম, বাচ্চা ও হাঁস বিক্রি না করে বেশী দামে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীদের কাছে। এ টাকা ভাগ ভাটোয়ারা করেন খামারের গুটি কয়েক কর্মকর্তা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে , নজরুলের পদ হিসাব রক্ষক হলেও খামারের সবকিছু তার কথায় চলে। সে ক্ষমতাও নাকি দিয়ে রেখেছে ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক বরুন কুমার দত্ত। ফলে নজরুলের কথায় চলতে হয় তার উর্ধতন কর্মকর্তাদের। না হলে খামার থেকে বদলীর হুমকি দেয় নজরুল। এজন্য খামারের নানান অনিয়ম নিরবে সহ্য করেন অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

কোন সরকারী নিয়ম নীতি অনুসরন না করে যত্রতত্র ডিম, বাচ্চা, হাস বিক্রি করে দেন নজরুল। ক্রেতাদের কাছ থেকে আদায় করেন বাড়তি টাকা। ক্রেতাদের দেন না কোন রশিদ।

হাঁস খামারের তথ্যমতে, কাপ্তাই হ্রদ হাঁস পালনের উপযোগী হওয়ায় তিন পার্বত্য (রাঙ্গামাটি,বান্দরবান, খাগড়াছড়ি) জেলা ও কক্সবাজার জেলার খামারীদের কম দামে হাঁসের বাচ্চা সরবরাহ, এ এলাকার পুষ্টি চাহিদা পুরণ করতে সরকার ২০০১ সালে রাঙ্গামাটিতে খামারটি স্থাপন করে।

শুরু দিকে এ খামারটি আলোর মুখ দেখতে শুরু করলেও খামারের দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাক্তির কারণে হুমকির মুখে পড়ে খামারটি। খামারীরা নায্য মুল্যর খবরে খামারে ডিম, বাচ্চা, হাঁস ক্রয়ের জন্য আসলে সরকারী দামের চেয়ে বেশী দাম নেয়া হচ্ছে।

হাঁস খামারের পাশে বাসিন্দা খোকন দে বলেন, খামারটি আমাদের চোখের সামনে ধ্বংস হচ্ছে। কি অনিয়ম হচ্ছে আমরা নিয়মিত দেখছি। খামারটি বাঁচিয়ে রাখা দরকার। কিছু কর্মকর্তার কারণে খামারটি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ের খামারীরা এর সুবিধা পাচ্ছে না। রাঙ্গামাটির একমাত্র সরকারী হাঁস প্রজনন খামারটি রক্ষা করতে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভূক্তভোগী চাষী ও এলাকাবাসী।