এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে মুরালিপাড়াকে আলোকিত করল উক্যনু মারমা

319

ঝুলন দত্ত, কাপ্তাইঃ-বছর দুয়েক আগেও যার নিজের ঘরেই ছিলোনা বিদ্যুতের আলো, সেই ছেলেটিই এখন আলো ছড়াচ্ছে পুরো গ্রামে, তার কারণেই নাম ছড়াচ্ছে গ্রামের, সুনাম আর সম্মানে উচ্ছসিত গ্রামবাসীও।
কাপ্তাই উপজেলার ৫নং ওয়াগ্গা ইউনিয়নের মুরালি পাড়ার পিতা মংসুই অং মারমা ও মাতা নাংসাপ্রু মারমার বড় ছেলে উক্যনু মারমা এইবছর প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষায় কাপ্তাই কর্ণফুলী সরকারি কলেজ হতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। তাঁর এই ফলাফলে আনন্দিত কলেজ এর শিক্ষক, তাঁর পরিবারের সদস্যরা এবং গ্রামবাসী।
মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারী) তাঁর গ্রামের বাড়ীতে গেলে কথা হয় উক্যনু মারমার সাথে। এসময় উক্যনু জানান, আমরা দুই ভাই-বোন। আমার বোনের নাম হ্লামেউ মারমা। আমার বোন সাক্রাছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০ম শ্রেণিতে পড়ালেখা করে। আমার বাবা একজন দরিদ্র কৃষক। নিজের সামান্য জমিতে কাজ করে সংসার চালান। আর আমার মা একজন গৃহিণী। অভাবের সংসার, সবসময় নিজের সকল চাহিদা বাবা পূরণ করতে পারে না।
আমি ২০১৬ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে জেএসসি পাশ করি সাক্রাছড়ি জুনিয়র হাই স্কুল থেকে। এরপর আমি নবম শ্রেণীতে ওয়াগ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হই এবং ২০১৯ সালে জিপিএ-৪.৮৯ পেয়ে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে ঐ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করি। অপশনাল বিষয় উচ্চতর গণিতে ১ নাম্বারের জন্য এসএসসিতে এ প্লাস তুলতে পারি নাই। সেই সময় বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল না, কুপির বাতিই ছিল পড়ালেখার একমাত্র সম্বল। যেটি কেরোসিন তেল দিয়ে জ্বলত। অনেক সময় কেরোসিন তেলও থাকত না। খুব কষ্ট করে পড়াশোনা করতে হয়েছে। প্রাইভেট যে পড়ব তার টাকা দেওয়ার ক্ষমতা আমার বাবার ছিল না। স্কুলের স্যারদের ক্লাস আর তাঁদের মুল্যবান গাইডলাইন ফলো করে আমি নিজে বাড়িতে পড়ালেখা করতাম। তবে পাড়ার বড় ভাইরাও আমাকে বিভিন্ন পরামর্শ দিতেন, গ্রামবাসীর সাপোর্ট তো আছেই। এসএসসি পাশ করার পর আমি ভর্তি হই কর্ণফুলী সরকারি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে। ভর্তি হয়ে নিজেই পড়াশোনা করতে থাকি। এসএসসিতে এ প্লাস না পাওয়ায় মনে জেদ চাপে যেভাবে হউক এইচএসসিতে কাঙ্খিত ফলাফল অর্জন করবো। গত ১৩ই ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এইচএসসি ফলাফলে আমি জিপিএ-৫ পেয়ে উর্ত্তীণ হই।
তিনি আরোও জানান, কলেজ এর অধ্যক্ষ বেলাল স্যারসহ অন্যান্য স্যাররা আমাকে সবসময় সাহস, অনুপ্রেরণা এবং লেখাপড়ার বিষয়ে সহযোগিতা করেছেন। বেতন মওকুফ করেছেন। যার ফলে আজ আমি এই সাফল্য অর্জন করেছি। ভবিষ্যৎ এ আমি কম্পিউটার প্রকৌশলী হয়ে নতুন নতুন সফটওয়্যার উদ্ভাবন করে এদেশের সেবা করতে চাই।
উক্যনুর বাবা মংসুই অং মারমা ও মা নাংসাপ্রু মারমা জানান, অভাবের সংসারে সবসময় ছেলেকে ভালো খাবার, ভালো পোশাক এবং প্রাইভেট টিচার দিতে পারে নাই, এরপরও ছেলে আমাদের প্রায় ১৫ কিঃ মিঃ দূরে গিয়ে কলেজ করে বাড়িতে এসে কৃষি কাজে সহায়তা করে আবার পড়ালেখা করেছে। সেই যেন ভবিষ্যতে মানুষের মতো মানুষ হয়ে দেশের সেবা করতে পারে সেইজন্য সকলের আর্শীবাদ চাই।
কর্ণফুলী সরকারি কলেজ এর অধ্যক্ষ এ এইচ এম বেলাল চৌধুরী জানান, সে খুব গরীব ঘরের সন্তান, তবে খুবই মেধাবী এবং মনোযোগী একজন ছাত্র। আমরা সব শিক্ষকরা তাঁকে সবসময় সহায়তা করেছি এবং কলেজ হতে তাকে উপবৃত্তি দিয়েছি। দারিদ্র্যকে জয় করে উক্যনু মারমার এই ফলাফল সকলের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত বলে আমি মনে করি।