২৩ জুন আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী

494

ডেক্স রিপোর্ট,পাহাড়ের আলো ডট কম : ২৩ জুন মহান মুক্তযুদ্ধের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশে আওয়ামীলীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরনো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে এই রাজনৈতিক দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

পরবর্তীতে দেশের অন্যতম প্রাচীন এই দলটি প্রতিটি গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে এদেশের গণমানুষের সংগঠনে পরিণত হয়।

আওয়ামীলীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় পালন উপলক্ষে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ ঘোষিত এসব কর্মসূচী রাজধানী এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বর্ণাঢ্য কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন করা হবে। ২৩ জুন সকালে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পূষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচী শুরু হবে।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ দু’দিন ব্যাপী কর্মসূচি পালন করবে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে ২৩ জুন সকালে সূর্যোদয়কালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে এবং সকাল ১১টায় টুঙ্গীপাড়ায় দলের কেন্দ্রীয় সংসদের পক্ষ থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন।

২৪ জুন সোমবার বিকাল ৪চায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আওয়ামী লীগ শুধু দেশের পুরনো ও সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলই নয়, এটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাঙালির জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল। আর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের গড়ার কাজ প্রথম শুরু করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

দলটি বর্তমানে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতেৃত্বে দেশের অন্যতম প্রাচীনতম সংগঠন হিসেবে ভাষা, স্বাধিকার, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা অর্জনে মহোত্তম গৌরবে অভিষিক্ত আওয়ামী লীগের সাত দশকের অভিযাত্রায় শান্তি, সমৃদ্ধি ও দিন বদলের লক্ষ্যে অবিচল বাঙালি জাতির মুক্তির দিশারী হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে।

ইতিহাসবিদ, লেখক ও লোক সাহিত্যিক শামসুজ্জামান খান এই দলকে মূল্যায়ন করে বলেছেন, আওয়ামী লীগ ‘পাকিস্থান’ নামের অবৈজ্ঞানিক এবং ভৌগোলিক ও নৃতাত্তি¡কভাবে এক উদ্ভট রাষ্ট্রের পূর্ব বাংলার বাঙালি জনগোষ্ঠী ও অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিসত্তাকে অবজ্ঞায়, অবহেলায় ও ঔপনিবেশিক কায়দায় শোষণ-পীড়ন-দমন ও ‘দাবিয়ে রাখা’র বিরুদ্ধে লাগাতার প্রতিবাদ, প্রতিরোধ এবং গণসংগ্রামের মধ্যদিয়ে গড়ে ওঠা বিপুল জনপ্রিয় একটি রাজনৈতিক দল। এই দলের নেতা-কর্মীদের ত্যাগ-তিতিক্ষা ও অঙ্গীকারদীপ্ত সংগ্রামী ভূমিকা ইতিহাস বিদিত ।

বিশিষ্টজনদের মতে দলটির বর্তমান সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিকে সফলতার নতুন পথ দেখিয়েছেন, দেশের টাকায় পদ্মাসেতু নির্মাণ শুরু করার সুবাদে বাংলাদেশের মর্যাদা আন্তর্জাতিকভাবে অনেক প্রশংসিত হয়েছে এবং মর্যাদাশীল জাতিতে রূপান্তরিত করেছে।

পুরনো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে আওয়ামী মুসলিমলীগ নামে এই দলের আত্মপ্রকাশ করলেও পরে তা শুধু আওয়ামী লীগ নাম নিয়ে অসাম্প্রদায়িক সংগঠন হিসেবে বিকাশ লাভ করে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এ দেশে পাকিস্থানি সামরিক শাসন, জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন ও শোষণের বিরুদ্ধে সকল আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ।
’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, আইয়ুবের সামরিক শাসন-বিরোধী আন্দোলন, ’৬৪-এর দাঙ্গার পর সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি প্রতিষ্ঠা, ৬৬”র ছয় দফা আন্দোলন ও ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পথ বেয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ২৪ বছরের আপোষহীন সংগ্রাম-লড়াই এবং ১৯৭১ সালের নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ তথা সশস্ত্র জনযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মধ্যদিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালির হাজার বছরের লালিত স্বপ্নের ফসল স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।

পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা হলেও দীর্ঘ একুশ বছর লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে দলটির প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জয়ী হয়ে ২৩ জুন দলটি ক্ষমতায় ফিরে আসে।

২০০১ এবং পরে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পর আর এক দফা বিপর্যয় কাটিয়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে তিন-চতুর্থাংশ আসনে বিজয়ী হয়ে আবারো রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায় আওয়ামী লীগ। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ৫ জানুযারী এবং ২০১৮এর ৩০ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে টানা তিন মেয়াদে সরকার পরিচালনা করছে এ দলটি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী গতকাল এক বিবৃতিতে দলের গৌরবোজ্জ্বল ৭০ বছর পূর্তিতে গৃহিত কর্মসূচি পালনের জন্য আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সকল জেলা, উপজেলাসহ সকল স্তরের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন।

রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগের কর্মসূচী : বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগের উদ্যোগে দিনব্যাপী কর্মসূচী গ্রহন করা হয়েছে।

এবিষয়ে রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হাজী মোঃ মুছা মাতব্বর বলেন, ২৩ জুন আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগ দলীয় কার্যালয়ে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুস্প মাল্য অর্পণ, বিকাল ৩টায় রাঙ্গামাটি প্রেস ক্লাব থেকে দলীয় কার্যালয় পর্যন্ত বর্ণাঢ্য আনন্দ র‌্যালী, বিকাল সাড়ে ৩টায় দলীয় কার্যালয়ে আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সকল কর্মসূচীতে উপস্থিত থাকার জন্য সংগঠনের সকল নেতাকর্মীদের আহবান জানিয়েছেন রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক হাজী মোঃ মুছা মাতব্বর।