কাজী মোশাররফ হোসেন, কাপ্তাইঃ-ঘর পরিস্কার করার জন্য ফুলের ঝাড়ুর বিকল্প নেই। বর্তমানে বাজারে প্লাস্টিকের অনেক প্রকার ঝাড়ু দেখা গেলেও ঘর দুয়ার পরিষ্কার করার জন্য গৃহিনীদের কাছে ফুলের ঝাড়ুর বিশেষ কদর রয়েছে। সারা দেশে যত ফুলের ঝাড়ু ব্যবহার হয় তার ৮০ ভাগ যাচ্ছে পার্বত্য এলাকা থেকে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে রাঙ্গামাটি জেলার পাহাড়ি এলাকায় উৎপাদিত ফুলের ঝাড়ু সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় বলে জানা গেছে। আর সারা দেশের চাহিদা বিবেচনা করে ব্যবসায়ীরা রাঙ্গামাটি জেলার পাহাড়ী অঞ্চলে উৎপাদিত ফুলের ঝাড়ু সংগ্রহ করেন বেশি করে। প্রতিদিন প্রায় লাখ টাকার ফুলের ঝাড়ু পার্বত্য এলাকা থেকে সরবরাহ হচ্ছে বলে জানা গেছে।
১৬ সেপ্টেম্বর কাপ্তাই জেটিঘাটে দেখা গেছে বিশাল ইঞ্জিন নৌকা ভর্তি করে ফুলের ঝাড়ু আনা হয়েছে। ১০ শ্রমিক নৌকা থেকে ফুলের ঝাড়ু নামানোর কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। মাঝি সর্দার সিদ্দিক মোল্লা জানান, বিলাইছড়ি উপজেলার পাহাড়ি এলাকা থেকে এসব ফুলের ঝাড়ু কাপ্তাই লেকের উপর নৌকা ভাসিয়ে ফুলের ঝাড়ু গুলো জেটিঘাট আনা হয়েছে। আরফান সওদাগর এসব ফুলের ঝাড়ু আমদানি করেছেন। এগুলো এখন ট্রাকে উঠানো হবে। ট্রাক ভর্তি করে ফুলের ঝাড়ু গুলো প্রথমে নেওয়া হবে চট্টগ্রাম। সেখানে আড়তে এসব ফুলের ঝাড়ু জমা করে রাখা হবে। পরে আঁটি বেঁধে বা ঝাড়ু তৈরি করে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় এসব ফুলের ঝাড়ু নিয়ে যাওয়া হবে।
দীর্ঘদিন ধরে ফুলের ঝাড়ুর ব্যবসা করছেন দেলোয়ার হোসেন। এখনো তিনি এই ব্যবসা ধরে রেখেছেন। তিনি বলেন, পাহাড়ের কিছু কিছু অংশে ফুলের ঝাড়ুর বাম্পার ফলন হয়। যেখানে বেশি পরিমাণ ফুলের ঝাড়ু উৎপন্ন হয় সেখানার স্থানীয় বাসিন্দাদের অথবা যাদের জায়গায় ফুলের ঝাড়ুর বাগান রয়েছে তাদের আগাম টাকা দিয়ে রাখা হয়। যখন কাটার সময় হবে তখন পাহাড় থেকে ফুলের ঝাড়ু কেটে নৌকা র্বর্তি করে জেটিঘাট এনে সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করা হয়। ফুলের ঝাড়ু ব্যবসায় ভালো মুনাফা পাওয়া যায় বলে একাধিক ব্যবসায়ী জানান।
কাপ্তাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, ফুলের ঝাড়ুর চাষ করার প্রয়োজন হয়না। পাহাড়ে প্রাকৃতিক ভাবেই ফুলের ঝাড়ু উৎপন্ন হয়। পরে সেগুলো কেটে বিছিয়ে রাখা হয়। কড়া রাদে শুকানোর পর ফুলের ঝাড়ুর আঁটি বেঁধে প্রথমে নৌকায় করে কাপ্তাই জেটিঘাট পর্যন্ত আনা হয়। পরে ঢাকা চট্টগ্রামসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ফুলের ঝাড়ু সরবরাহ করা হয়। প্রকার ভেদে এক ট্রিপ ফুলের ঝাড়ু পরিবহন করে যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা মুনাফা পাওয়া যায়। তবে ফুলের ঝাড়ু পরিবহনে প্রধান সমস্যা হলো বৃষ্টি। হঠাৎ বৃষ্টি আসলে এবং বৃষ্টির পানিতে ভিজলে ফুলের ঝাড়ুর গুণগত মান নষ্ট হয়। অনেক সময় ভিজে থাকলে পঁচেও যেতে পারে। এছাড়া ফুলের ঝাড়ুর ব্যবসায় অন্য কোন সমস্যা নেই বলেও ব্যবসায়ীরা জানান।